২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিস্ফোরক ফুরিয়ে যাওয়ায় মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন বন্ধ

-

দিনাজপুর মধ্যপাড়া পাথর খনিতে বিস্ফোরক ফুরিয়ে যাওয়া পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি গত ৩১ মে পাথর উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাময়িক ছুটি দিয়ে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে খনির উৎপাদন সম্পন্ন বন্ধ রয়েছে।
যে বিস্ফোরক দিয়ে পাথর ভেঙ্গে উত্তোলন করা হয় তা আমদানি করতে সময় লাগে মাত্র ৪০ দিন। কিন্তু বিস্ফোরক ফুরিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষ জানলেও যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে আসন্ন ঈদ উৎসবে কর্মরত শ্রমিকদের উৎসব বোনাস পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি দায়িত্ব নেয়ার পর পাথর খনিতে তিন বার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এর আগে গত ২০১৫ সালে বিস্ফোরকের না থাকায় দুই মাস উৎপাদন বন্ধ ছিল। একই বছর উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে দুই বছর উৎপাদন বন্ধ থাকে। এবার বিস্ফোরকের অভাবে তৃতীয় দফায় খনিটির উৎপাদন বন্ধ হল।
জিটিসি’র মহাপরিচালক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশোন) জাবেদ সিদ্দিকি জানান, চুক্তি অনুযায়ী বিস্ফোরক আমদানি ও সরবরাহ করার দায়িত্ব মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল)। সে কারণে বিস্ফোরক মজুদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে, গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে চাহিদা দেয়া হয় এমজিএমসিএলর নিকট। কিন্তু চাহিদা দেয়ার ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) বিস্ফোরক আমদানি করেনি।
জিটিসি আরও জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিস্ফোরক আমদানি করা যায়। যা চল্লিশ দিনে আমদানি করা সম্ভব। অথচ ছয় মাস কেটে গেলেও তা আমদানি করা হয়নি। তবে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী নুরুল আরঙ্গজেব জানান, বিস্ফোরক আমদানি করতে রাষ্ট্রীয় অনুমতির প্রয়োজন হয়। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমদানি করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, শুধুমাত্র খনি কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অবহেলার কারণে এবার উৎপাদন বন্ধ হল। যা কোনোভাবেই কারো কাছে কাম্য ছিল না।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরমধ্যপাড়া পাথর খনি গত ২০০৭ সাল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে এ সময় দিনে মাত্র ১২০০-১৫০০ টন পাথর উত্তোলন হত। ফলে খনিটি বড় রকমের লোকশানের মুখে পড়ে।
গত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে খনিটির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোটিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জিটিসি উৎপাদন শুরু করে। খনিতে প্রতিদিনের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৪ হাজার টনে। এতে করে খনি লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। কিন্তু উৎপাদন শুরু হওয়ার ছয় মাসের মাথায় বিস্ফোরকের অভাবে খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। দুই মাস বন্ধ থাকার পর বিস্ফোরক আমদানি করে আবারও উৎপাদন শুরু হলে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে দুই বছর উৎপাদন বন্ধ থাকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি বিদেশ থেকে বিশ্বমানের উৎপাদন যন্ত্র আমদানি করে খনিতে স্থাপন করতে দুই বছর সময় লেগে যায়। দুই বছর পর আবারও উৎপাদন শুরু করার এক বছরের মাথায় বিস্ফোরকের অভাবে আবারও পাথর উত্তোলন বন্ধ হল খনিটিতে। এতে করে মধ্যপাড়া পাথর খনি বারবার লাভের মুখ দেখেও বারবার বন্ধের কারনে পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল পাথর খনিটি।এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকায় উৎপাদন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে বড় রকমের লোকশান গুনতে হচ্ছে টিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বলে অভিযোগ করেন জিটিসি কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement