২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার সময় এএসআইকে গণধোলাই

-

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে মাদকের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় বগুড়া সদর থানার এএসআই কামরুল ও তার সোর্স নাইমকে গণধোলাই দিয়েছে গ্রামবাসী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১০টায় অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে গণধোলাই এর শিকার দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এঘটনায় শুক্রবার রাতে এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং সোর্স নাইমকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

গ্রামবাসী জানায়, চার দিন আগে দুইজন মটর সাইকেল যোগে এলাকায় আসেন। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মটর সাইকেল আটক করে, আবার কাউকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় শুরু করেন।

ঘোলাগাড়ি গ্রামের রহিমা বেগম জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর স্থানীয় একটি হোটেল থেকে তার ছেলে আইনুরসহ পাঁচ জনকে আটক করে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়। এরপর ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার করে মোট পাঁচ হাজার টাকা জোর করে আদায় করে নেন।

ওমর ফারুক নামের একজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ছোট বোনকে মটর সাইকেলে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় তাকে আটক করে তাদের ভাই বোন সম্পর্ক কি-না জানতে চায়। সম্পর্ক নিশ্চিত হওয়ার পর ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে।

মুদি দোকানী রফিকুল জানান, তার দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে টাকা চাইলে দোকানে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ পাউরুটি থাকায় ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করে।

একই কায়দায় এলাকার তালেব মহুরীর মটর সাইকেল আটক করে নেয়া হয় দুই হাজার ছয়শত টাকা।

স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানদার এখলাসের দোকানে আইপিএল এর জুয়া খেলা হয় এই অভিযোগে চার হাজার টাকা আদায় করেন।

দর্জ্জি দোকানী লুৎফরের বিরুদ্ধে গাঁজা সেবনের অভিযোগ আছে মর্মে আটক করেন। এরপর বেদম মারপিট করে আদায় করা হয় পাচঁ হাজার টাকা।

শুক্রবার বিকালে ওই দুইজন আবারো এলাকায় গেলে গ্রামের লোকজন ডিবি অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয় যে ডিবি পুলিশের কোন সদস্য ঘোলাগাড়ি গ্রামে যায়নি। এসময় গ্রামের লোকজন তাদের নাম জানতে চাইলে তারা নিজেদের নাম হাসান ও মিজান বলে জানায়।

পরে ডিবি অফিসে আবারো যোগাযোগ করে গ্রামের লোকজন জানতে পারেন হাসান ও মিজান নামে ডিবিতে কেউ নাই। পরে তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চায় গ্রামের লোকজন। পরিচয় পত্র দেখাতে না পারলে শুরু হয় গণধোলাই।

এদিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের খবর পেয়ে ডিবির এসআই নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় দুইজনকে স্থানীয় স্কুল ঘরে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

রাত ৮টার দিকে সদর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করতে গেলে স্কুল মাঠে হাজার-হাজার মানুষ সমবেত হয় এবং তাদের শাস্তি এবং কয়েকদিনে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দুইজনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।

এসময় সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: কামরুজ্জামান জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে থানায় জমা দিন। টাকা ফেরতের ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরে এলাকাবাসীর পক্ষে তালেব মুহুরী তালিকা তৈরী করেন।

তালেব মুহুরী জানান এ পর্যন্ত ২২ জনের নাম ঠিাকানা পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে গত কয়েকদিনে প্রায় আশি হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বাইরে যাওয়ার অভিযোগে শুক্রবার রাতেই এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। তার সোর্স নাইম পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরো জানান এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement