২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : শফিকুল গনি স্বপন

-

রাজনীতিক শফিকুল গনি স্বপন জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ ছিলেন। সুদর্শন এই জননেতা ছিলেন সুবক্তা ও দেশপ্রেমিক, যিনি ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট রমজানের প্রথম দিনই চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন। তার বাচনভঙ্গি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তার আত্মসম্মানবোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর। জীবনে সে কারণে তাকে কম মূল্য পরিশোধ করতে হয়নি। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আজকের নীলফামারী জেলার সদরে এ দেশের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সালে লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে কালো পতাকা উড়ানোর ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনি রাজনীতির সাথে বাল্যজীবন থেকেই ছিলেন সংশ্লিষ্ট। সে সময়ই তিনি স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মে মাসে স্বপন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে বন্দী ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাবা মশিউর রহমানের সাথে তিনিও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন সরকারের। ১৯৭৫ সালে নভেম্বর মাসে যাদু মিয়া কারামুক্ত হলে ছেলে স্বপন তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে যাদু মিয়া জিয়াউর রহমানের পাশে ছিলেন। ’৭৭ সালে ন্যাপ পুনর্গঠিত হলে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বপন। ’৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর যাদু মিয়া মৃত্যুবরণ করলে স্বপন বাবার শূন্য আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর ও নীলফামারীর দু’টি আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয়তাবাদী শক্তির চরম দুর্দিনে তিনি বেগম জিয়ার আহ্বানে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে উত্তরাঞ্চলে দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন।
‘১/১১’ সরকারের সময় যখন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের প্রশ্ন দেখা দিলো, তখন তিনি মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত দলটি সংগঠিত করে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করলেন। তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সাংবাদিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। সাপ্তাহিক বঙ্গব্যাপী ও উইকলি ফ্রাইডে প্রকাশ করেছিলেন যা অল্প সময়েই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। এ দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী চেতনা বিস্তারে এই দু’টি সাপ্তাহিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।হ
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া


আরো সংবাদ



premium cement