২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী

-

১৩ এপ্রিল খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরীর ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগেও অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছিল। খাদ্যের অভাবে মানুষ কলাগাছ পর্যন্ত খাচ্ছিল। কলকাতার অ্যাসেম্বলি হলে এমএলএ বদি আহমদ চৌধুরী পার্লামেন্ট অধিবেশনে ১৯৪৪ সালের ৭ জুন স্পিকারের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। এতে সরকার দুর্ভিক্ষের কারণে দু’টি বিশেষ ট্রেন ও দু’টি বিশেষ স্টিমারে চট্টগ্রামের জন্য সাত লাখ টন চাল পাঠায়। ফলে দুর্ভিক্ষ দমন সম্ভব হয়; চালের বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসে।
খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরীর জীবন মানব কল্যাণের। তিনি ছিলেন ধার্মিক, শাসনে ও ন্যায়বিচারে ছিলেন কঠোর।
বদি আহমদ চৌধুরী ১৮৮৬ সালের ২৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পরপরই কর্মজীবনে পা বাড়ান। মাত্র ১৮ বছর বয়সে আনোয়ারা থানার আবদুল বারীর মুন্সি এস্টেট ম্যানেজার নিযুক্ত হন। এখানে নিষ্ঠার সাথে দুই-এক বছর অতিবাহিত করার পর বিখ্যাত জমিদার এরশাদ আলীর এস্টেটে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। বিশাল এস্টেটের গুরুদায়িত্ব পালনে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ফলে ব্রিটিশ কর্তৃক প্রথম ইউনিয়ন বোর্ড গঠন তথা ১৯২০ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একাধারে ৩০ বছর বাঁশখালীর বৈলছড়ী-কাথারিয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৯ সালের জুন মাসে প্রথমবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৩ থানার এমএলসি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আট বছর এ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৪৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগের ও বৃহত্তর সিলেটের জমিদারদের প্রতিনিধি হিসেবে বিপুল ভোটে এমএলএ নির্বাচিত হন। বেঙ্গল অ্যাসেম্বলিতে প্রতিটি অধিবেশনে তিনি বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার আইন পাস, শিক্ষাকর স্থগিতকরণ, স্কুল-কলেজে সরকারি অনুদান ও সাহায্য প্রদান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা, ডাকঘর, বাজার, ডাক্তারখানা স্থাপন প্রভৃতি তারই প্রচেষ্টার ফসল। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সর্বপ্রথম হজ আদায় করেন। ভারতীয় হজ কমিটির একাধিকবার সদস্য ছিলেন। ১৯৩৫ সালে সরকারের হজ প্রতিনিধি তথা আমিরুল হজ হিসেবে মুম্বাই থেকে হজে গমন করেছিলেন। ওই সময় সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা, বাদশাহ আবদুল আজিজ হজ উপলক্ষে মক্কা শরিফে ছিলেন। বদি আহমদ চৌধুরী ভারতবর্ষসহ বিশ্বের হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে একাধিকবার তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তী বছর ব্রিটিশ সরকার জনসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ভারতবর্ষের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মেম্বার ছিলেন। ইন্ডিয়া রোড বোর্ড কমিটি, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে অ্যাডভাইজরি কমিটি, প্রদেশের বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি, অ্যাগ্রিকালচারাল বোর্ড, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড, স্কুল বোর্ড, ইন্ডাস্ট্রি বোর্ড, চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কমিটিসহ বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রাম ও কলকাতার নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর ছিলেন।
চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া মিয়াখান নগরে ১৯৫০ সালে দ্বিতল দালান নির্মাণ করেন। পরে আরো দু’টি দালান ও একটি বাংলো বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেই সময় রাস্তার ধারে নলকূপ বসিয়ে এলাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করেন। কিন্তু বাকলিয়াতে খাওয়ার পানির উপযোগী কোনো পুকুরও ছিল না।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার সময় সংখ্যালঘুরা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ করে বাঁশখালীতে যাতে সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এতে আহমদের জোরালো ভূমিকা ছিল। তার সময়নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলাবোধ ছিল অসাধারণ। রুটিনমাফিক সঠিকভাবে কাজ সেরে ফেলার জন্য তিনি থাকতেন তৎপর। তিনি ঘণ্টা-মিনিট শুধু নয়, সেকেন্ড পর্যন্ত হিসাব রাখতেন। এ মহান ব্যক্তিত্ব ১৯৬২ সালের ১৩ এপ্রিল বাড়ির মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে কিছুক্ষণের ব্যবধানে ৭৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
মহান আল্লাহ পাক এ জনদরদি ব্যক্তিত্বকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।
লেখক : ড. মুন্সি নজরুল ইসলাম, প্রফেসর (অব:) গণিত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement