২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বপ্নের বিজয়ে ছন্দপতন

-

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তান নামে পৃথক দু’টি রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটে। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ পাকিস্তান একই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলো। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতা ও হীনম্মন্যতার কারণে সে রাষ্ট্রে স্বাধীনতা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। ফলে সীমাহীন বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান। এ বঞ্চনা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। পঞ্চাশের ও ষাটের দশকে অবিরাম আন্দোলনে পূর্ব বাংলার মানুষের মনে স্বাধিকারের আকাক্সক্ষা জাগ্রত হয়েছিল। তার বাস্তব প্রতিফলনই হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা।
আমাদের মতো এত অধিক মূল্য দিয়ে কোনো জাতির স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্বে বিরল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও শাহাদতের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। এরপর প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত আমাদেরকে ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথমবার স্বাধীনতা লাভ করে পেয়েছিলাম পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র; কিন্তু আমাদের ভাগ্য মোটেই সুপ্রসন্ন ছিল না। তাই পাকিস্তানি আমলের প্রায় পুরোটা জুড়েই আমাদেরকে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায়, তা পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রায় ক্ষেত্রেই ছিল অনুপস্থিত। অধ্যাপক লাস্কি স্বাধীনতার সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন, ‘ÔBy liberty I mean the eager maintenance of the atmosphere in which men have the opportunity to be their best selves, অর্থাৎ ‘স্বাধীনতা বলতে সে পরিবেশের সাগ্রহ সংরক্ষণ বুঝি, যা দ্বারা মানুষ তার শ্রেষ্ঠ সত্তা উপলব্ধি করার সুযোগ পায়’। তদানীন্তন পাকিস্তান রাষ্ট্রে এসবের তেমন প্রতিফলন লক্ষ করা যায়নি।
এ বিষয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ফলাফল বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। শাসকগোষ্ঠী সে নির্বাচনে বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। তাই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে আমাদের। মূলত মুক্তিযুদ্ধের জন্য এই নির্বাচনী বিজয়ই দিয়েছিল এক অনন্য যৌক্তিক ও নৈতিক ভিত্তি। আর সে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই রচিত হয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সৌধ।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই উভয় অংশের মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ বৈষম্য ছিল বিরাট ব্যবধানে। রফতানিতে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও দেশের পূর্ব অংশে বিনিয়োগ ছিল ব্যাপক বৈষম্যমূলক। বড় ও ভারী শিল্পকারখানা প্রায় সবই গড়ে তোলা হলো পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে। সরকারি চাকরি ও সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ছিল ব্যাপক বৈষম্য। এর রাজনৈতিক প্রতিফলন দেখা দেয় শেখ মুজিবের ছয় দফায়। ছাত্রদের ১১ দফা দাবিতে এই বৈষম্য ঘোচানোর দাবি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে স্বাধিকারের দাবি জোরালো ভিত্তি পেল। একসময় তা মুক্তি সংগ্রামে রূপ নেয়।
আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয় যেমন ছিল রক্তপিচ্ছিল, ঠিক তেমনি গৌরবেরও। ভিয়েতনামে মুক্তি সংগ্রাম ১৯৫৬ থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৫ সালে ৩০ এপ্রিল সায়গনের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। দীর্ঘ পরিসরের যুদ্ধে সব পক্ষের সৈন্যসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২৮ লাখ মানুষের। আলজেরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ১৮৩০ থেকে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলেছিল। ১৯৬২ সালের ২ জুলাই আলজেরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। এ যুদ্ধের শেষের সাত-আট বছরে ১০ লাখ আলজেরীয় প্রাণ হারান। কম্বোডিয়ায় গৃহযুদ্ধে প্রাণহানি ঘটেছে ২১ লাখ। আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীর পরাজয় পর্যন্ত ১০ বছরের যুদ্ধে ২০ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।
ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলেছিল ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত। প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ অতিক্রম করেনি। অ্যাঙ্গোলায় ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে তিন লাখ অ্যাঙ্গোলাবাসী। ১৯৮১ সাল থেকে শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধ শুরু হয়ে তা চলে ২৮ বছর। প্রাণহানির সংখ্যা এক লাখের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। বসনিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা দেড় লাখ অতিক্রম করেনি। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ৯ মাসেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ৩০ লাখ। সম্ভ্রম হারিয়েছেন অগণিত মা-বোন। বস্তুত সমসাময়িক কালের মুক্তিসংগ্রাম ও বিভিন্ন যুদ্ধে এত চড়ামূল্য আর কোনো জাতিকে দিতে হয়নি। এটি আমাদের স্বাধীনতার বিশেষত্ব।
সাম্য, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক শোষণ ও সাংস্কৃতিক গোলামি থেকে মুক্তি লাভের জন্যই জনসাধারণ ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেয়েছিল; কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে গোলামির শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, সে স্বপ্ন এখনো অধরা। উদার গণতন্ত্র, সাম্য, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলেও দেশে প্রচলিত নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই সে ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। বরং বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর উচ্চাভিলাষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বানানো হয়েছে।
গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয় নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, অপরাজনীতি ও অহমিকার কারণে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং অর্জন যৎসামান্য। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যখন পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করা উচিত ছিল, তখন ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত বা চিরস্থায়ী করার জন্য সব করেছেন। পরিকল্পিতভাবে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বহুধাবিভক্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে দেশের মানুষকে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। সে গণতন্ত্রই নিরাপদ থাকেনি। বরং স্বাধীনতার পর এ দেশে যতবারই রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই তা ছিল গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই।
স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অক্ষুণœœ রাখা সম্ভব হয়নি রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই। সরকার নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সব দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। The Newspaper (Announcment Of Declaration) অধ্যাদেশ মোতাবেক, মাত্র চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পত্রিকা রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদ অভিযোগ করেছিলেন, ‘গণকণ্ঠ অত্যন্ত বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়ার ফলে পৌনে ৩০০ সাংবাদিক ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মুহূর্ত মাত্র সময় না দিয়ে অফিস থেকে কাজ অসমাপ্ত রেখে বের করে দেয়া হয়েছে।’ (ইত্তেফাক-৩০ মার্চ, ১৯৭৩)
জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যর্থতার কারণেই আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সূত্রপাত ঘটেছিল। সরকারের অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর ১৯৯৬ সালে এ দেশের নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে একটি সমঝোতায় এলেও অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণে সে অর্জনও আমরা ধরে রাখতে পারিনি। রাজনীতিকদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে আমরা কাক্সিক্ষত উন্নয়ন, জীবনমান, সুশাসন ও নিরাপত্তা লাভে সমর্থ হইনি। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৮ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা ক্ষমতায় এসে সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কটকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। তা ক্ষমতাসীনদেও নৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রমাণ করেছে।
নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি চালু করতে সংবিধান সংশোধন করা হলেও এ বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর কোনো মতামত নেয়া হয়নি। ফলে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে এবং একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনেরা আবারো ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। আর সে নির্বাচনকে ভিত্তি ধরেই তারা এখন মেয়াদপূর্তির দ্বারপ্রান্তে। চলতি মাসের ৩০ তারিখ নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সার কারণে সে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দৃশ্যত নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ই হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন ‘অবাধ ও গ্রহণযোগ্য’ হবে কি-না সে সন্দেহ নিরসন করতে পারেনি সরকার ও নির্বাচন কমিশন।
সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিলেও এখন পর্যন্ত অংশীজনদের জন্য সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বন্ধ হয়নি ‘গায়েবি’ মামলা ও গণগ্রেফতার। বিরোধী দলের প্রার্থীরাও এই গ্রেফতার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তুচ্ছ কারণে বিরোধীদলীয় ও ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বর্তমান প্রশাসনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা তিরোহিত হচ্ছে। সরকারি দল নির্বিঘেœ নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পেলেও তা পাচ্ছেন না বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা। এমনকি অসংখ্য মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে তাদের নামতে হয়েছে নির্বাচনী ময়দানে। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক উপরের নির্দেশের অজুহাত দিয়ে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি, তদুপরি আদালতের নির্দেশে গ্রহণ করার পর আবার তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাতিল করায় জনমনে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ আরো জোরালো ভিত্তি পেয়েছে।
গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখন খাদের কিনারে। এ জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল ক্ষমতাসীনদেরই দায়ী করছেন। পরমত সহনশীলতা গণতন্ত্রেও একটি মূল উপাদান। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকরা তিন ধরনের অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা পান : ০১. সামাজিক অধিকার, ০২. রাজনৈতিক অধিকার এবং ০৩. অর্থনৈতিক অধিকার।
সামাজিক অধিকার : ০১. জীবন ধারণের অধিকার. ০২. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, ০৩. মতপ্রকাশের অধিকার, ০৪ সভা-সমিতি করার অধিকার, ০৫. সম্পত্তি ভোগের অধিকার, ০৬. ধর্মীয় অধিকার, ০৭. আইনের অধিকার, ০৮. চুক্তির অধিকার, ০৯. ভাষার অধিকার, ১০. পরিবার গঠনের অধিকার ও ১১. শিক্ষা লাভের অধিকার।
রাজনৈতিক অধিকার : ০১. ভোটাধিকার, ০২. প্রার্থী হওয়ার অধিকার, ০৩. অভিযোগ পেশ করার অধিকার, ০৪. সমালোচনার অধিকার, ০৫. চাকরি লাভের অধিকার ও ০৬. বসবাসের অধিকার।
অর্থনৈতিক অধিকার : ০১. কাজের অধিকার, ০২ উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার, ০৩. অবকাশ যাপনের অধিকার, ০৪. সঙ্ঘ গঠনের অধিকার ও ০৫. রাষ্ট্র প্রদত্ত প্রতিপালনের অধিকার ইত্যাদি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকের যেসব অধিকারের স্বীকৃত, সরকার তার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। অথচ এটা রাষ্ট্রেরই সাংবিধানিক দায়িত্ব। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণের শাসন, শাসকগোষ্ঠীর জবাবদিহিতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমকে সরকার গুরুত্ব না দিয়ে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য গণতান্ত্রিক সব রীতিনীতি উপেক্ষা করছে, যা জাতির জন্য রীতিমতো অশনি সঙ্কেত। শাসনকার্যে জনগণের সম্পৃক্ততা উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব নয়। আমাদের দেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ শুধু কাগজে-কলমেই রয়েছে। ফলে জনগণ রাজনীতিবিমুখ হতে শুরু করেছেন। আর রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন কোনো জাতিকে নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ তো দূরের কথা, অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
অধ্যাপক লাস্কিও মতে, ÔLiberty is the organization of resistance to abuse.’ অর্থাৎ ‘কদাচার হয় অপপ্রয়োগ প্রতিরোধের সংগঠনই স্বাধীনতা’। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা এখনো কদাচারমুক্ত হতে পারিনি। নেতিবাচক ও বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র যখন এগিয়ে চলছে, তখন আমরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছি। আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে গোলামি থেকে মুক্তি লাভের জন্য মরণপণ যুদ্ধ ও বিজয় অর্জন করেছিলাম, প্রতিহিংসা ও অপরাজনীতির কারণে এর সুফল ঘরে তুলতে পারিনি।
দেশে আজো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়নি। দলগুলোর মধ্যে সুস্থধারার রাজনীতি চর্চার সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় কোনো গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ চলতে পারে না। মহান বিজয়ের স্বপ্নে ছন্দপতন ঘটেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। হ
smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement