২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুটানের নির্বাচন ও ভারত-চীন-বাংলাদেশ

অবলোকন
-

ভুটান বাংলাদেশের একেবারে নিকট প্রতিবেশী সার্ক দেশ হলেও আট লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দেশ সম্পর্কে অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভুটানই হলো ভারতের প্রতি ‘সবচেয়ে অনুগত’ দেশ। ভারতের সাথে চুক্তির কারণে দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী চীনের সাথেও ভুটানের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। ভারত ও ভুটান দুই দেশের বহু ক্ষেত্রে রয়েছে অভিন্ন স্বার্থ। ফলে এই দেশটিতে চীনের প্রভাবের ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ নজর রাখার কাজ ‘বড় ভাই’ হিসেবে ভারত নিবিড়ভাবে করে আসছিল। সাম্প্রতিককালে ডোকলাম সঙ্কটের সময় এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় দিল্লি। এরপর আরেকটি বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে ভুটানের গত ১৫ সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচন। ভুটানের জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক দফার ফলাফল অনেককেই চমকে দিয়েছে।

ভারতপন্থী দলের বিদায়
ভারতপন্থী প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) এই নির্বাচনে তৃতীয় হয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়েছে। সুপরিচিত মেডিক্যাল সার্জন লোতে শেরিংয়ের নেতৃত্বাধীন ড্রুক নিয়ামরুপ শোগপা (ডিএনটি) দল নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়েছে। এর পরেই, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বর্তমান বিরোধী দল ড্রুক ফুয়েনসিউম শোগপা (ডিপিটি)। ডিএনটি এবং ডিপিটি ১৮ অক্টোবর চূড়ান্ত দফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
ভুটানের চারটি রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচনের প্রাথমিক রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দেশটির সংবিধান অনুসারে, যেকোনো সংখ্যক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রাথমিক রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কিন্তু সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুটো দলই চূড়ান্ত সাধারণ রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। এতে বিজয়ী দল সরকার গঠন করবে এবং পরাজিত দল বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে।
২০১৩ সালে নির্বাচনের প্রাথমিক রাউন্ডে তখনকার ক্ষমতাসীন দল ডিপিটি পেয়েছিল ৪৫ শতাংশ ভোট। আর পিডিপি পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ। কিন্তু চূড়ান্ত রাউন্ডে পিডিপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এবারো শীর্ষ দুই দলের যেকোনোটি জয়ী হতে পারে চূড়ান্ত রাউন্ডে। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ভুটানের জনগণ সরকার পরিবর্তন করছে। গত এপ্রিলে উচ্চকক্ষ তথা ন্যাশনাল কাউন্সিলের নির্বাচনেও এই প্রবণতা দেখা গেছে। এতে ২৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচজন পুনর্নির্বাচিত হতে পেরেছেন।

ভারত ফ্যাক্টর
২০১৩ সালের মতো এবারের ভুটানের নির্বাচনে ‘ভারত ফ্যাক্টর’ প্রত্যক্ষভাবে ইস্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভারতের প্রতি ডিএনটি এবং ডিপিটি নেতিবাচক কোনো মনোভাব প্রকাশ করেনি। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ডিপিটি ভুটানের ক্ষমতায় ছিল। ভুটানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন। চীনের প্রতি দলটির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষুব্ধ হয়ে নয়দিল্লি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে ভুটানের নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছিল ২০১৩ সালে। তখন অবশ্য ডিপিটি দ্বিতীয় স্থান পেয়ে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পেরেছিল। এবারের পরাজিত, সদ্য বিগত ক্ষমতাসীন দলের জন্য সেই সুযোগও আর থাকছে না।
চূড়ান্ত পর্বে কে বিজয়ী হবে এখনো বলা যাচ্ছে না। ডিএনটি বিজয়ী হলে সেটাও হবে বড় চমক। ছয় বছর আগে লোতে শেরিং ও দুই বন্ধু মিলে দলটি গঠন করেছেন। ভারত ও চীনের ব্যাপারে দলটির আদর্শিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী তোবগের পিডিপিকে ‘ধাক্কা’ দিয়েছে ভুটানের মধ্যবিত্ত, সশস্ত্র বাহিনী ও তরুণ ভোটাররা। এসব শক্তি ভারতের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নেয়াটা দিল্লির জন্য উদ্বেগজনক।
তবে এবারের নির্বাচনে ভারতের সাথে ভুটানের সম্পর্কের বিষয়টি তেমন আলোচনায় ছিল না। অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণায় ডিপিটির বিরুদ্ধে ভারতের সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ করেছিল পিডিপি। তবে ডিপিটি বলে আসছে যে, ভারতের সাথে সম্পর্ক ‘সবসময় দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।’
২০১৮ সালে ডিপিটির নির্বাচনী ইশতেহারের ‘পররাষ্ট্রনীতি’ অংশে উল্লেখ করা হয় যে, নির্বাচিত হলে তারা ভারতের জনগণ ও সরকারের সাথে ‘চমৎকার’ সম্পর্ক রক্ষা এবং তা আরো জোরদার করার চেষ্টা চালাবে।
ডিএনটির ইশতেহারে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলাদা কোনো অংশ নেই। কিন্তু ভারতের কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার প্রসঙ্গে। অর্থনীতি অধ্যায়ে বলা হয়, রফতানি বাস্কেট নিয়ে ডিএনটি উদ্বিগ্ন, যার বড় অংশ জুড়ে আছে জলবিদ্যুৎ।
ডিএনটির মতে, ভুটানের অর্থনীতি মূলত জলবিদ্যুৎকেন্দ্রিক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষীণ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যা তরুণ প্রত্যাশীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভুটানের বৈদেশিক ঋণের ৭৫ শতাংশ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংশ্লিষ্ট বলেও ডিএনটি উল্লেখ করে।
বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চায় ডিএনটি। দলটি জানায়, ভুটানের রফতানি পণ্যের ৮০ শতাংশ ভারতে যায়, যা অর্থনীতির একটি দুর্বল দিক। যেকোনো সময় এতে বিপর্যয় ঘটতে পারে। দলটি ভারত থেকে জ্বালানি আমদানির বর্তমান নীতি পর্যালোচনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে নির্ভরতা কমানো এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি জোরদার করা হবে।
কোনো দলের নির্বাচনী ইশতেহারেই ‘বিবিআইএন’ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পিডিপি সরকার ভারতের চিন্তাপ্রসূত এই চুক্তি সংসদে অনুমোদন করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ চুক্তিটি অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হয়ে উঠলে পিডিপি সরকার চুক্তি থেকে ভুটানকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুবই সক্রিয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে, ভুটানের সাথে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হলে তাকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যে দলই বিজয়ী হোক না কেন ভারতকে তার এই প্রত্যক্ষ প্রতিবেশীর সাথে কাজ করতে গিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ভুটান আরেকটি শ্রীলঙ্কায় বা মালদ্বীপে পরিণত হয় কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অনেকের।

হার-জিতের বার্তা কী?
পর্যবেক্ষকরা পিডিপির পরাজয়ের অনেক কারণের কথা বলছেন। ক্ষমতাসীনদের বিরোধী মানসিকতা থেকে তৃণমূলের ব্যাপারে দলের একপেশে আচরণের কথা বলেছেন তারা। তা ছাড়া সরকারি চাকুরেদের মধ্যেও পিডিপির জনপ্রিয়তা নেই। অন্যদিকে, ডিএনটি নিজেদের ‘বিনয়ী দল’ হিসেবে তুলে ধরেছে এবং নতুন পরিচয়ের জন্য পিডিপির সাথে পুরনো সম্পর্ক তারা ত্যাগ করেছে। কিছু দিন আগেও ডিএনটিকে পিডিপির বি টিম হিসেবে বিবেচনা করেছে অনেকে। কারণ ২০১৩ সালের নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে প্রায় নির্বিচারে প্রার্থী বদল করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের প্রাথমিক রাউন্ডের ভোটের পর ডিএনটি দলের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টও নিজের দল ছেড়ে পিডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
ডিপিটি লড়াইয়ে নেমে খুব বেশি আশা করেননি। কিন্তু তাদের বিরাট সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের বেশির ভাগেরই বসবাস ভুটানের পূর্ব এলাকায়। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলের বিপর্যয় হলেও এই সমর্থকগোষ্ঠীর অবস্থান নড়বড় হয়নি। এবারের প্রাথমিক রাউন্ডে ৪৭টি সিটের মধ্যে ২২টিতে জিতে ডিপিটি একটা বড় বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
ক্ষমতায় এলে ডিএনটি সামাজিক অসাম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দলটির নীতি হলো বিত্তশালী ও দরিদ্রদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা। দলটির প্রধান বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবায় যে বৈষম্য রয়েছে, সেটা দেশের একটা বড় জাতীয় ইস্যু, যা অন্য সব খাতের উপর প্রভাব ফেলছে।
সাবেক কৃষি ও বনমন্ত্রী পেমা গিয়ামশো ডিপিটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গিয়ামশো ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল সময়কালে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। তার দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় স্বনির্ভরতা অর্জন করা হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ডিপিটি কৃষি ও পর্যটন খাতের আরো উন্নয়ন ঘটাবে। তিনি গণমাধ্যমকে আরো স্বাধীনতা দেয়ার কথাও বলেছেন।

গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে অভিযাত্রা
২০০৮ সালে বিশ্বের কনিষ্ঠতম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভুটান। দেশের চতুর্থ রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বদলে গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৬ সালে চতুর্থ রাজা তার বড় ছেলের কাছে রাজতন্ত্রের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন। জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে বসেন। একই বছর ভুটানে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়।
২০ শতকের প্রথম দিকে ভুটানের প্রধান বিদেশ সম্পর্ক ছিল কেবল ব্রিটিশ ভারত ও তিব্বতের সাথে। চীনা কমিউনিস্ট সম্প্রসারণের আশঙ্কায় ভুটান ১৯৪৯ সালে ভারতের সাথে একটি মৈত্রি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫২ সালে কমিউনিস্ট চীনের তিব্বত অধিগ্রহণের পর ভুটানের উদ্বেগ আরো বেড়ে যায়। ১৯৭১ সালে ভুটান জাতিসঙ্ঘে যোগ দেয়। ১৯৮৫ সালে এটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় ভুটান। দেশটি বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ, বিবিআইএন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং গ্রুপ ৭৭সহ ১৫০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য।

স্বাতন্ত্র্য নিয়ে চলার চেষ্টা
ভুটান প্রতিবেশী ভারতের সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখে। তবে ২০০৭ সালে ভুটান ও ভারত তাদের মৈত্রী চুক্তি সংশোধন করে তিব্বতের সীমান্তসহ বৈদেশিক সম্পর্কের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণকে বৃদ্ধি করে।
দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি অনুসারে, ভারত ও ভুটানের নাগরিকরা পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একে অপরের দেশ ভ্রমণ করতে পারে। ভুটানের নাগরিকরা আইনি নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই ভারতে কাজও করতে পারছে।
ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে ইন্দো-ভুটান মৈত্রী চুক্তিটি সংশোধন করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ এ ছিল : ‘ভারত সরকার ভুটানের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে কোনো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে না। আর ভুটান সরকার ভারত সরকারের পরামর্শ অনুসারে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত করতে সম্মত হচ্ছে।’ সেখানে সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভুটান ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে ভুটান সরকার এবং ভারত সরকার জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোতে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। অন্য দেশের জাতীয় স্বার্থে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে এক দেশের সরকার নিজ ভূখণ্ডকে ব্যবহারের অনুমতি দেবে না।
সংশোধিত চুক্তিতে আরো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে, ‘দুই দেশ একে অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করবে।’ এটি আগের চুক্তিতে ছিল না। ২০০৭ সালের ইন্দো-ভুটান মৈত্রী চুক্তি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভুটানের অবস্থানকে বেশ খানিকটা স্পষ্ট করে তুলেছে।

চীনা ফ্যাক্টর
ভুটানের উত্তর প্রতিবেশী চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের সফরের বিনিময় উল্লেøখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৮ সালে চীন ও ভুটানের মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চীনের সাথে ভুটানের সীমান্ত এখনো পুরোপুরি চিহ্নিত হয়নি। প্রায় ২৬৯ বর্গকিলোমিটার এলাকার অধিকার নিয়ে চীন ও ভুটানের মধ্যে আলোচনা চলছে।
আগের নির্বাচনে ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ডিপিটিকে বিদায় করতে নয়াদিল্লি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। ডিপিটির প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে ২০১২ সালে রিও ডি জেনেইরোতে চীনের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও-এর সাথে সাক্ষাৎসহ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, যা ভারতের পছন্দ হয়নি। পরের নির্বাচনে এর ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছিল দিল্লি সরকার। কিন্তু চীন দক্ষিণ এশিয়ায় সক্রিয়তাবাদী নীতি গ্রহণের পর ভুটানের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। ডোকলাম ইস্যুতে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। এবারের নির্বাচনের ফলাফলে চীনের গোপন কার্যক্রমের যে প্রভাব রয়েছে, তাতে সন্দেহ রয়েছে কমই। চীনের সাথে সীমান্ত চুক্তি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এই মেয়াদেই হতে পারে। তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক বড় উন্নয়ন। নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার পর ভারতের কর্তৃত্বের হাত সঙ্কুচিত হবে থিম্পুর ব্যাপারেও। এ ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচন বেশ তাৎপর্যপূর্র্ণ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

ভুটান ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ হলো ভুটান। দেশটিতে কেবল ভারত আর বাংলাদেশেরই পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ভুটানের রাজা ছিলেন সম্মানিত অতিথি। ২০১৪ সালের উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর এক যৌথ বিবৃতি জলবিদ্যুৎ, নদী ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা ঘোষণা করেছে।
ভুটান ভারতের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসছে। সেখানে বাংলাদেশ ভারতের প্রভাব বলয়ে গত এক দশক সময়ে অধিকতর একাত্ম হয়েছে। ভুটানের চার লাখ ভোটারকে প্রভাবিত করে ভারত নিজের পছন্দের দলকে নির্বাচনে জয়ী করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৪ সালের একতরফা সংসদ নির্বাচন ভারতের সমর্থনেই অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে বলে মনে করা হয়। আগামী ডিসেম্বরে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে ভারতই সবচেয়ে বড় নির্র্ণয়ক ভূমিকা রাখবে বলে সাধারণ একটি ধারণা রয়েছে এ দেশে। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হওয়ার পরও ভুটান ডোকলাম সঙ্কটের সময় চীন ও ভারত উভয় দেশের সাথে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি ও সক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ার পরও এক ধরনের অনুগত থাকার মানসিকতা বাংলাদেশের স্বকীয়তাপূর্ণ ভূমিকা পালনকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন সত্যিকার অর্র্থে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের নিজস্বতা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি পরীক্ষা বলে গণ্য হতে পারে। হ
সৎশসসন@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement