২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি প্রকাশনা উৎসব কিছু কথা

-

গত ৭ সেপ্টেম্বর টেলিভিশন চালু করে বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) একটি অনুষ্ঠানের দিকে। সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব। সরকারপ্রধানের সরকারি বাসভবন গণভবনে এই অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে উপস্থিত দেখতে পেলাম ক্ষমতাসীন সরকারের আপনজন ও সুবিধাভোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনকে। অন্য কেউ নেই বললেই চলে। তবে অনুষ্ঠানের কিছু বিষয় আমার কাছে ভালো লেগেছে। যেমনÑ সেদিন ক্ষমতাসীন সরকারপ্রধান তার বক্তৃতায় অন্য সময়ের মতো বিরোধীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে উপস্থাপন করেননি। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর এবং বর্তমান সরকারপ্রধানের বক্তৃতা শুনেছিলাম। সরকারপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় বেশ দীর্ঘ বক্তৃতা করেছেন। ওই সময় তার দলের একজন প্রবীণ নেতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে কথা বলছিলেন। যে বইটি প্রকাশিত হয়েছেÑ সেটি সে বিষয়গুলো নিয়েই। বইটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ ১৯৪৮-১৯৭১ সময়কালে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম তিনি করেছেনÑ যা এ বইয়ে স্থান পেয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধুর ওপর কড়া নজরদারি রেখেছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন কথা নোট করে রেখেছিল। সেগুলোই পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে সংগ্রহ করে বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে বলে সরকারপ্রধানের বক্তৃতায় বোঝা গেল। আওয়ামী লীগ নেত্রীর একটি কথা অনেকের কাছে রহস্যময় লাগতে পারে। তিনি বললেন, ’৮১-তে এসে আবার গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করি। আমি একজন তরুণ। ইতিহাস থেকে যা জানি, সেটা হচ্ছে ’৭৫-পূর্ব সময়ে কয়েক বছর একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। (’৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ড চরম নিন্দনীয় ও জঘন্য ঘটনা। ১৯৯৬ সালে আমি হাইস্কুলের ছাত্র থাকাকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। শিশু রাসেলের রক্তভেজা শার্ট দেখে আমিও আঘাত পেয়েছিলাম।) কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮-১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছেন, সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। তিনি ছাত্রজীবনে পাকিস্তানের পক্ষে আন্দোলন করেছেন, সেটিও সত্য। সেটিও সেদিন সরকারপ্রধান তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন। প্রকাশনা উৎসবে তথাকথিত বিরোধীদলীয় নেতাও উপস্থিত ছিলেন, যিনি একজন সাবেক স্বৈরাচারী শাসকের স্ত্রী। প্রকাশনা উৎসবে দেখলাম কিছু বশংবদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিককে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যক্তি এখনো জীবিত আছেন যারা আওয়ামী লীগ করেন না। তাদের কাউকেই চোখে পড়ল না। বই প্রকাশ করা ভালো। কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে এ কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে কেন? তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন নির্জন কারাগারে। দেশে কার্যত গণতন্ত্র নেই। চলছে প্রচ্ছন্ন একদলীয় শাসন। নেই ভিন্নমতের মূল্য। ছলচাতুরী করে ক্ষমতায় থেকে এমন বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে সরকারই। আবার তারা গণতন্ত্র ও সংগ্রামের কথা বলেছেন। ব্যাপারটা প্রহসনের মতো নয়? অনেক লেখকের বই বাজারে কার্যত নিষিদ্ধ আছে। বহু সাংবাদিক সত্য তুলে ধরায় নির্যাতনের শিকার। কেন এ পরিস্থিতি। গত ৯ বছরের শাসনের ভালো-মন্দ নিয়ে স্বাধীনভাবে কেউ লিখলে বা সেটা বই আকারে প্রকাশ করলেÑ সেটার প্রকাশনা উৎসব কি অবাধে করতে দেয়া হবে? বর্তমান সরকারপ্রধান মজার একটা কথা বলেছেনÑ পাকিস্তান আমলে সামরিক-বেসামরিক পদে পূর্ব পাকিস্তানিদের (বর্তমান বাংলাদেশ) চাকরি দিয়েছে কম। পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ ব্যাপারে বৈষম্য করেছেন যা ওই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে বলেছেন, এ দেশে দু’টি দল আছেÑ একটি দল আওয়ামী লীগ, আরেকটি দল অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। আমার কথা হচ্ছেÑ এ সরকার টানা ৯ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। জরিপ চালিয়ে দেখানো হোক যারা এ কয় বছরে চাকরি পেয়েছেন তাদের কত শতাংশ অ্যান্টি আওয়ামী লীগ এবং কত শতাংশ আওয়ামী লীগ। তা প্রকাশ করুন। এদিকে, পার্লামেন্ট লাইব্রেরিতে বই পোকায় কাটছে। সংসদে অনির্বাচিত সদস্যরা বইপড়া পছন্দ করেন না। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement