২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কোন পথে যাবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক?

কোন পথে যাবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক? - সংগৃহীত

চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার জমানায় বরাবরই ভারতের সাথে সুম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা ছিল। তারপরও তাঁর সরকারের সাথে আগামী পাঁচ বছর ভারতের সম্পর্কের রোডম্যাপ কী হতে পারে?

শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় নয়া দিল্লির উৎফুল্ল হবার যথেষ্ট কারণ আছে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থর্নৈতিক, বাণিজ্যিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো সুদৃঢ় করতে নয়া দিল্লি এবং ঢাকা একে অপরের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দেবে সন্দেহ নেই৷ আরো বেশি বন্দর, সড়ক যোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ পানিপথ এবং উপকূলবর্তী নৌ-চলাচল অনেক বাড়বে।

মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরের সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করবে ভারত। কারণ, উভয় দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে এটা জরুরি। ভারতের দিক থেকে তো বটেই। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় ভারতের উপস্থিতি আরো বেশি দরকার।

হ্যাঁ, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনছে, যেটা দিল্লির সরকারি মহলের একাংশের মনঃপুত হয়নি। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না যে, ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে চীনের প্রভাব প্রতিপত্তি মুছে ফেলা কখনোই সম্ভব নয়।

মোটকথা, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি ভারতের স্বার্থের অনুকূল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক তথা স্ট্র্যাটিজিস্টরা। সেটা বেশ বুঝতে পেরেছেন শেখ হাসিনা এবং কাজে লাগিয়েছেন তিনি। দিল্লির মসনদে যে সরকারই এসেছে, ঢাকার দিকে সানন্দে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

একদিকে ভারত নিরাপত্তা ইস্যুতে যেমন ঢাকার সাহায্য পেয়েছে, তেমনি বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়ন অ্যাজেন্ডায় নয়া দিল্লির সহায়তা। গড়ে উঠেছে পারস্পরিক লেনদেনের একটা সুষ্ঠু রোডম্যাপ।

এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিগত পাঁচ বছরে একটা ভালো জায়গাতেই ছিল। তার মূল কারণ, সন্ত্রাস দমন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের হাত ধরে সূক্ষ্মভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে ভারতের সমাধানসূত্র খুঁজে বার করা। এই দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়াও ভারত ও বালাদেশের মধ্যে যৌথ নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। মনে হয়, শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী পাঁচ বছরে আরো সুদৃঢ় হবে। সেখানে হাসিনা সরকার ভারতের কাছ থেকে এবং ভারত হাসিনা সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাবে, বলাই বাহুল্য।’

সার্বিকভাবে নাগরিক সমাজ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা, মুক্তভাবনা এবং গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে দ্বিপাক্ষিক যৌথ উদ্যোগ আগামী পাঁচ বছরে সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যাবে বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি।

ভারতেও সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। সুতরাং যে দলই সরকারে আসুক বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক কি একই পথে চলবে? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন,‘ভারতে একটা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো আছে। সেটা অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা। কাজেই যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং মিয়ামারে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এবং শ্রীলংকার ওপর চীনের প্রভাব ও প্রতিপত্তি আটকাতে এবং ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশের হাত ধরা ছাড়া ভারতের গত্যন্তর নেই। ভারতে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে যে দলই আসুক বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতেই হবে। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকেই যাবে।’

রোহিঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুর সুরাহা কি হবে? জবাবে অধ্যাপক লাহিড়ি বললেন,‘রোহিঙ্গা ইস্যুর সুরাহা করতে ভারত অন্যভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু জাতীয় স্তরে সুরাহা করার পথে বাধা নেই আমরা জানি। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে যদি এর সমাধানসূত্র খুঁজে পাবার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সহযোগিতার ভিতটা আরো অর্থবহ হয়ে উঠবে। নীতিগতভাবে তিস্তার পানি বণ্টনে কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরে যে আপত্তি নেই, সেই বার্তাটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আরো দ্ব্যর্থহীনভাবে পৌঁছে দিতে হবে। কাজেই ভারতের আসন্ন নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দুই দেশের সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট পথেই চলবে।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে নির্ভরযোগ্য বিরোধী দলের উপস্থিতি দরকার। না হলে আগামী পাঁচ বছরে একটা দমবন্ধকর বাতাবরণ তৈরি হতে পারে, হাসিনা সরকারের নিরপেক্ষতার স্খলন ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঢাকা-দিল্লির ভবিষ্যৎ আলোচনায় এটার দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার।

চীন বা ভারত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফেরত নেবার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর যতটা চাপ দেয়া উচিত ছিল তা দেয়নি। ভারত শুধু মানবিক সাহায্য দিয়েই খালাস। হয়ত জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবেই। অবশ্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বভূমি রাখাইন প্রদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নেও ভারত সাহায্য করছে, যাতে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে সম্মত হয়।

বিশ্বের বহু দেশের সরকার এবং নাগরিক সমাজ শেখ হাসিনার সাফল্যের আশায় তাকিয়ে আছে। চতুর্থ বারের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বর্ধিত দায় বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন থাকবেন, এটাই আশা।


আরো সংবাদ



premium cement
চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার নোয়াখালীতে গরমে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ল ১৮ শিক্ষার্থী থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগ রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু বরিশালে যাত্রীবেশে উঠে চালকের গলায় ছুরি, প্রতারক দম্পতি গ্রেফতার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে আরো ২ শিশুর মৃত্যু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার এনজিওর টাকা তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধূ নিহত ভিজিএফবঞ্চিতদের মানববন্ধনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা, আটক ২ ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : আর্টিকেল নাইনটিন ও টিআইবি পিনাকীসহ দু'জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, একজনকে অব্যাহতির সুপারিশ

সকল