০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিতর্কিত আসনে কী হবে?

বিতর্কিত আসনে কী হবে? - ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের বিতর্কিত আসনগুলোতে নজর পড়েছে জোট-মহাজোটের। অভ্যন্তরীণ কোন্দল-সঙ্ঘাত, নিয়োগবাণিজ্য, টিআর কাবিখায় দুর্নীতি, মনোনয়ন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে শতাধিক আসনে বর্তমান এমপিদের অবস্থান একেবারে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিতর্কিত ওই সব আসন চিহ্নিত করে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে জোট-মহাজোটের হাইকমান্ড।

জোট নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ডুবিয়েছেন এবং যেসব এমপির কারণে দলের হাইকমান্ড বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, আওয়ামী লীগ প্রধান অন্তত এবার তাদের মনোনয়ন দেবেন না। এ ছাড়াও কিছু আসনে আওয়ামী লীগের এমপিদের বয়স ৮০ বা তার ওপরে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির সাথে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থান এখন আর তাদের নেই; ওই সব আসনেও নতুন প্রার্থী দেয়া হবে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি আসন চিহ্নিত করে জোটের শরিকরা কাজ করছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজধানী ঢাকা মহানগরের ১৭টি আসনের মধ্যে বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান এমপিদের সাথে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেও স্থগিত করতে হয়েছে। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে এড়িয়ে কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে। চকবাজার, লালবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ীসহ বাকি কয়েকটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিতে পারছেন না মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি আসনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে জোট-মহাজোট।

এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে জাসদের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো: শহীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দলমত নির্বিশেষে বেশ কয়েকটি জনসভা করে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়দের মতে, বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের অন্য যেসব প্রার্থী আছেন বিরোধী দলকে মোকাবেলা করার মতো অবস্থান কারোরই দেখা যাচ্ছে না। এ আসনে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো জাসদের প্রার্থী শহীদুল ইসলামই যোগ্য। এরই মধ্যে ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, ধনিয়া, মাতুয়াইলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সমাবেশ করে তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন।

ঢাকা-১৭ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হলেও বিএনএফ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এলাকায় কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। এখানে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বর্তমানে ঢাকায় জাতীয় পার্টির তিনজন এমপি রয়েছেন। এরা হলেন ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশিদ। ঢাকা-৮ আসনে এমপি রয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। 

নড়াইল-১ আসনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে বর্তমান এমপির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ওই আসনে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি রুহুল আমীন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অশোক কুমার ঘোষ মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন।

এ ছাড়াও ময়মনসিংহ-১, মেহেরপুর-২, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া-৫, ময়মনসিংহ-৬, ফেনী-১, নরসিংদী-২, কুড়িগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-১১, যশোর-৪, নাটোর-২, রংপুর-৩, কুমিল্লা-৮ ও ৯, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৪ সহ নতুন করে অন্তত ৫০টি আসনে জোট-মহাজোটের প্রার্থীরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। জানা গেছে, বিতর্কিত এমপিদের বিষয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা তথ্য সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে যেসব এমপির বিষয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে আবার তথ্য সংগ্রহ করে সংশোধিত তালিকায় সংযুক্ত করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার বাছাইটা অনেক নিপুণ হবে। যতদূর জানি, বিভিন্ন সোর্স থেকে বর্তমান এমপিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। কিছু দিন পরপর সেগুলো আপডেট করা হয়। তিনি বলেন, যার ব্যাপারে একটু সন্দেহ হয়, তার বিষয়ে আবারো তথ্য সংগ্রহ করে নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিচয় ঠিক রেখে এলাকায় অধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement