২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত : ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত : ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু - ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের একটি আগ্নেয়গিরি সবার দৃষ্টি কেড়েছে। নদীর মতো প্রবাহিত উত্তপ্ত লাল লাভা এবং আকাশে কালো ছাই মেঘ - কিলাওয়ে আগ্নেয়গিরির এই দৃশ্য অনেকেই হয়তো টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন। কিন্তু এ ধরনের অগ্নুৎপাত কতোটা বিপদজনক?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রত্যেক বছর ৬০টির মতো আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। কোনো কোনোটি আমাদের বিস্মিত করে আর বাকিগুলো অনেকটাই নিয়মিত ঘটনা।

পৃথিবীতে যতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে তার একটি এই কিলাওয়ে। প্রায় ৩৫ বছর আগে এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এই অগ্নুৎপাতের মাত্রা মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আগ্নেয়গিরিটির লাভা নদীর মতো প্রবাহিত হতে হতে সত্যিকার অর্থেই গিয়ে ঢুকে পড়েছে বাড়ির পেছনের বাগানে, সামনের উঠোনে। তবে সুখবর হচ্ছে যে এতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

এ থেকে হয়তো মনে হতে পারে আগ্নেয়গিরি তেমন বিপজ্জনক কিছু নয়। কিন্তু আসলে তা নয়।

বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে বলছেন, ১৫০০ সালের পর থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে মাত্র ছ'টি অগ্নুৎপাতের ঘটনায়।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট, সরকারি তথ্য এবং ঐতিহাসিক দলিল ঘেঁটে এসব পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

২০০০ সালের পর থেকে মারা গেছে প্রায় ২,০০০ মানুষ।

এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হয়েছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। গত বছর ইতালিতে আগ্নেয়গিরির একটি জ্বালামুখে তিনজন পর্যটক পড়ে গেলে তাদের মৃত্যু হয়।

সারা বিশ্বে যতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে, সে সবের ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাস প্রায় ৮০ কোটি মানুষের।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এই ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এই এলাকার মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই বসবাস করে ২০ কোটি মানুষ।

সারা পৃথিবীতে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সংখ্যা দেড় হাজার। এসব আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে আছে ৮১টি দেশে।

'সক্রিয়' মানে এই নয় যে এসব আগ্নেয়গিরি থেকে এখন অগ্নুৎপাত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি অগ্নুৎপাত হয়েছে এবং আগামীতেও অগ্নুৎপাত হতে পারে এসব বিবেচনা করেই এগুলোকে সক্রিয় হিসেবে ধরা হয়।

আগ্নেয়গিরির আশেপাশে যারা বসবাস করেন তাদের জন্যে এসব আগ্নেয়গিরি নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

কিলাওয়ের বেলাতে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে যে গত এপ্রিল মাসের পর থেকে সেখানে অগ্নুৎপাতের মাত্রা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।

তারপর থেকে এর লাল উত্তপ্ত লাভা পাঁচ কিলোমিটার দূরে চলে গেছে। যেতে যেতে পথে ধ্বংস করেছে বাড়িঘর। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। লাভার এই প্রবাহে এখনও বড় রকমের প্রাণহানি ঘটেনি।

পথে যেতে যেতে লাভা তার সামনে যা কিছু পায় তার সবকিছু পুড়িয়ে ফেলে এবং গলিয়ে দেয়। উত্তপ্ত এই লাভার তাপমাত্রা থাকে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই লাভা এত ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় যে মানুষ এর সামনে দিয়ে খুব সহজেই হেঁটে চলে যেতে পারে।

লোকজন যদি খুব দ্রুত সরে যেতে না পারে তখনই বিপদ। হাওয়াইতে বেশ কিছু লোককে হেলিকপ্টারে করে তুলে নেয়া হয়। কারণ তাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্যে নিরাপদ কোনো পথ ছিল না।
লাভার কারণে বিস্ফোরণও হতে পারে। যেসব জায়গায় মিথেন গ্যাস জমে আছে সেগুলোতে জ্বলে উঠতে পারে আগুন।

পানির সাথে মিশে তৈরি করে হাইড্রোলিক এসিড, সালফার ডাই অক্সাইড। তবে অগ্নুৎপাতের কারণে যতো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, তার মাত্র ২ শতাংশ মারা গেছে লাভা ও গ্যাসের কারণে।

আগ্নেয়গিরির গ্যাসে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ক্যামেরুনে ১৯৮৬ সালে। সেসময় লেক নয়েজ আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডে প্রাণ হারায় দেড় হাজারের মতো মানুষ।

আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত পিরোক্লাস্টিক প্রবাহে রোমান নগরী পম্পেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ৭৯ খৃস্টাব্দে। এই একই প্রবাহে ১৯০২ সালে একটি ক্যারিবীয় দ্বীপে নিহত হয় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

আগ্নেয়গিরির ছাই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরেও চলে যেতে পারে। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে বিমান চলাচল।

'ভয়ঙ্করতম' বজ্রপাতের কবলে ব্রিটেন

ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বিবিসি'র আবহাওয়া অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য মিডিয়া বলছে শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে অন্তত ঘণ্টা চারেক ধরে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মুহুর্মুহু বজ্রপাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

চার ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজারের মত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে।

বিবিসির আবহাওয়া সংবাদের উপস্থাপক টমাস শ্যাফারনাকের শনিবার রাতের বজ্রপাতকে "মাদার অব অল থান্ডারস্টর্ম" অর্থাৎ ভয়ঙ্করতম বজ্রপাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। "অবিশ্বাস্য! পাগলামি হচ্ছে।"

উত্তর লন্ডনের এক বাসিন্দা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্রিটেনে ৪০ বছরের জীবনে বিদ্যুৎ চমকানোর এমন দৃশ্য তিনি দেখেননি।

"মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। জানালা দিয়ে দেখছিলাম, এত ঘন ঘন বাজ পড়ছিল যে আকাশটা অন্ধকার হতেই পারছিল না।"

দমকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে লন্ডনের দৈনিক টেলিগ্রাফ বলছে, বজ্রপাতের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে অন্তত ৫০০ টেলিফোন কল পেয়েছেন তারা।

লন্ডনের কাছে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে বিমানে জ্বালানি তেল ভরার যন্ত্রপাতি বজ্রপাতের আঘাতে বিকল হয়ে যায়। ঐ বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে ।

এসেক্স কাউন্টির স্ট্যানওয়ে নামক একটি এলাকায় রোববার বোরের দিকে বজ্রপাতে একটি বাড়িতে আগুন ধরে গেলে দমকলবাহিনী গিয়ে আগুন নেভায়। হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কয়েক ঘণ্টা ধরে বিরল এই বজ্রপাতের পর মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে বহু জায়গায়।

ওয়েলস এবং মধ্য ইংল্যান্ডের কিছু এলাকায় এক ঘণ্টার মধ্যে এক ইঞ্চিরও বেশি বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

রোববার এবং সোমবার আরো বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চল এতে আক্রান্ত হতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি রেল যোগাযোগেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে সাবধান করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement