২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীন-তাইওয়ানের অম্ল-মধুর সম্পর্ক

-

গণতান্ত্রিক এবং অর্থনীতিতে সমৃদ্ধিশালী দেশ তাইওয়ানকে চীন বরাবরই তাদের বলয়ের মধ্যে রাখতে চায়। এ লক্ষ্যে এ বছরের গোড়ার দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ানের সাথে তাদের সম্পর্কটা আরো গভীর করার উদ্যোগ নেয়। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও চীন এটা চায়। যদিও শক্তি প্রদর্শন বরাবরই চীন অপছন্দ করে।

তাইওয়ানের ক্ষমতায় থাকা ‘ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি’কে (ডিপিপি) কিছুটা বিপদে ফেলার জন্য এর আগে চীন কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েছে। এর কারণ ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি বরাবরই চীনের অর্থনৈতিক বলয়ের মধ্যে থাকাটা তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু ক্ষমতাধর বড় রাষ্ট্র চীন ভাবে, তাইওয়ান যেন গতানুগতিকভাবে তাদের দেশেরই একটি অংশ। যদিও তারা এ কথা অফিসিয়ালি স্বীকার করে না, কিন্তু তাদের কাজেকর্মে তারা সেটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়।

২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতা ‘সাই ইং-ওয়েন’ (Tsai Ing-wen) যখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন চীন সরকার বিষয়টি তেমন মেনে নিতে পারেনি। তারা তখন হঠাৎ করে তাইওয়ানের ব্যাপারে বেশ কঠোর হয়ে উঠে। যেমন- তারা চীনা পর্যটকদের তাইওয়ানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি তাইওয়ানের সাথে চীনের যোগাযোগও প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এত কিছু পরও গত ৪ নভেম্বর চীন আবার তাইওয়ানের সাথে অর্থনৈতিক বন্ধনটা জোরদার করার লক্ষ্যে ২৬টি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে চীন সরকার তাইওয়ানি ব্যবসায়ীদের ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক ও এয়ারলাইন্সে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানায় এবং চীনে ‘বন্ড ইস্যু’ করারও প্রস্তাব দেয়। তা ছাড়া তাইওয়ানের সাধারণ নাগরিকদেরও চীনে যাতায়াতের ক্ষেত্রটা আরো সহজ করে দেয়ার পাশাপাশি চীন সরকার ৩১টি সুযোগ সুবিধার একটি তালিকাও প্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছে চীনে বসবাসরত চার লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তাইওয়ানিজের জীবনযাত্রাকে আরো সহজতর করে দেয়া।

চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের বিষয়ে নীতি-নির্ধারণের জন্য তাইওয়ানে ‘মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল’ নামে একটি পরিষদ আছে। পরিষদটি বর্তমানে চীনকে দোষারূপ করে আসছে যে, তাইওয়ানের আগামী ১১ জানুয়ারির নির্বাচনে চীন প্রভাব খাটানোর চেষ্ট চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে মিসেস সাই ইং ওয়েন দ্বিতীয়বারের জন্য লড়বেন। মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের ধারণা, চীন বাহ্যিক দিক দিয়ে তাইওয়ানের সাথে বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়- এমনটা মনে হলেও প্রকৃত অর্থটা আসলে ভিন্ন। চীন আশা করে, হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভে যাতে তাইওয়ান সমর্থন না দেয়। তবে তাইওয়ানিরা এ বিষয়ে বেশ সচেতন। তারা মনে করে, চীন কখনো তাইওয়ানকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে না।

এ কথা ঠিক যে, তাইওয়ানের ব্যবসায়ী ফার্মগুলোর বিনিয়োগ অন্যান্য দেশের চেয়ে চীনেই বেশি এবং চীনেই তারা বিনিয়োগ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবুও এটা অস্বীকার করা যায় না, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ২০১০ সালে চীনে তাইওয়ানের বিনিয়োগ ছিল যেখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৪ শতাংশে। চীনের শ্রমবাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধির কারণেও তাইওয়ানের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাদের শিল্প কারখানাগুলো (যেমন- ছাতা, জুতা প্রভৃতি) গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর ১৫১টি তাইওয়ানিজ কোম্পানি যারা চীনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করত, তারা প্রায় ২০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে চীন থেকে নিজ দেশে ফিরে এসেছে।

একাডেমিয়া সিনিকা নামে তাইওয়ানের একটি রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জে চেন সন্দেহ করছেন, আরো প্রায় ২৬টি উল্লেখযোগ্য বড় প্রতিষ্ঠান শিগগিরই দেশে ফিরে আসবে।

মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের যুক্তি হলো- তাইওয়ানিরা চীনে সহজে প্রবেশাধিকার পেলেও সেখানে গিয়ে তাদের কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়। যেমন- চীনে ছয় মাস বসবাসের পরও তারা স্থানীয় একটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড অর্জন করতে পারে না। তাই তাইওয়ানিরা মাঝে মধ্যে এ কথা বলে বেড়ায় যে, চীনে বসবাস করলে আমাদের দেশপ্রেম আরো বেড়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement