২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রেক্সিটে সময় চেয়ে ইইউকে জনসনের সই ছাড়া চিঠি

ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেয়া হবে একটি ‘ভুল’ পদক্ষেপ, অন্য এক চিঠিতে উল্লেখ করেন জনসন
শনিবার পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখছেন বরিস জনসন : ইন্টারনেট -

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) আরো বিলম্বিত করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাক্ষরবিহীন একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পাশাপাশি নিজের সই করা আরেকটি চিঠিতে তিনি এটাও লিখেছেন, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেয়া হবে একটি ‘ভুল’ পদক্ষেপ।
নিজের করা ব্রেক্সিট চুক্তি গত শনিবার পার্লামেন্টের ভোটে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর ইইউয়ের কাছে এসব চিঠি পাঠান জনসন। ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরের চূড়ান্ত সীমা পেছানোর জন্য ‘মরে গেলও তিনি কোনো অনুরোধ করতে পারবেন না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন জনসন। কিন্তু গত মাসে পার্লামেন্টে বিরোধীদের পাস করা একটি আইন অনুযায়ী ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি (২০২০) পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে ইইউয়ের কাছে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ইইউয়ের সাথে নিজের করা ‘বিচ্ছেদ’ চুক্তি গত শনিবার পাস করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ব্রিটিশ এমপিরা উদ্যোগটি ব্যর্থ করে দেয়। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের কাছে জনসন মোট তিনটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে একটি বেন অ্যাক্ট নামের সেই আইনের ফটোকপি যা জনসনকে চিঠি লিখতে বাধ্য করেছে; দ্বিতীয়টি, ব্রিটিশ সরকার শুধু এ আইন অনুযায়ী কাজ করছে এমনটি জানিয়ে ইইউতে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূতের পাঠানো একটি নোট এবং তৃতীয় আরেকটি চিঠি যেটিতে জনসন জানিয়েছেন তিনি সময় আর বাড়াতে চান না। তৃতীয় যে চিঠিটা জনসন পাঠিয়েছেন সেটি টুইটারে প্রকাশ করেছেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ব্রাসেলসের প্রতিনিধিরা। ওই চিঠিতে জনসন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আমি বলে আসছি এবং আজ পার্লামেন্টকেও বলেছি, আমার দৃষ্টভঙ্গি ও সরকারের অবস্থান হচ্ছে, সময় আরো বাড়ালে যুক্তরাজ্য ও আমাদের ইইউ অংশীদারদের স্বার্থ এবং আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
এ দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করা ব্রেক্সিট চুক্তির ওপর ভোট স্থগিত করার প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র সদস্য সাবেক রক্ষণশীল মন্ত্রী স্যার অলিভার লেটউয়িনের তোলা প্রস্তাবটির পক্ষে ৩২২ ভোট পড়ে, বিপক্ষে ৩০৬ ভোট পড়ে। পার্লামেন্টের এই ভোটের অর্থ, ব্রিটিশ সরকার শনিবার আর ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোট করবে না, যেমনটি পরিকল্পনা করেছিল তারা। এতে বৃহস্পতিবার জনসন ইইউয়ের সাথে যে ব্রেক্সিট চুক্তি করেছেন তার প্রতি সমর্থন জানানো হবে কি না তা ঝুলিয়ে রাখলো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বন্ধ করার পরিকল্পনায় এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেন ব্রিটিশ এমপিরা।
আগে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, এই ভোটের অর্থ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ছাড়ার নির্ধারিত তারিখ ৩১ অক্টোবর থেকে আরো বেশি সময় পাওয়ার জন্য ইইউকে চিঠি দিবেন জনসন। কিন্তু পার্লামেন্ট এ সিদ্ধান্ত দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জনসন জানিয়েছেন, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া নিয়ে আরো সময় নিতে আর মধ্যস্থতা করতে পারবেন না তিনি। তিনি এটা করবেন না বারবার এমনটি জানিয়ে নিজের কথায় অনড় থাকেন জনসন। পার্লামেন্টকে তিনি বলেন, ‘দেরি করার জন্য ইইউয়ের সাথে আমি আর কোনো দেনদরবার করব না এবং আইনও আমাকে তা করতে বাধ্য করে না। ইইউয়ে থাকা আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের আমি সেই কথাই বলব যা গত ৮৮ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাকি সবাইকে বলে আসছি আমি, সেটি হলো, আরো দেরি করা দেশের জন্য খারাপ হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য খারাপ হবে এবং গণতন্ত্রের জন্য খারাপ হবে।’
ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, এখন ব্রিটেনকে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ইইউয়ের নির্বাহীকে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব অবহিত করতে হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ কমন্স সভার নেতা জ্যাকব রিস মগ জানিয়েছেন, জনসনের ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করবে কি না তা নিয়ে সোমবার পার্লামেন্টে বিতর্কের পর ভোটে হবে।
ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য যে আইনগুলো দরকার পার্লামেন্টে সেগুলো সব পাস না হওয়া পর্যন্ত ব্রেক্সিট চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হবে কি না এ নিয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন লেটউয়িন। এটি ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সাধন করা যেতে পারে, জনসন এমনটি মনে করলেও অন্যরা মনে করেন, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছোট একটি ‘কৌশলগত’ বিলম্ব প্রয়োজন।
৩১ অক্টোবরের আগেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আইনগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত করা যাবে, চিঠিতে এ ব্যাপারে নিজের আস্থার কথাও জানিয়েছেন জনসন। জনসনের অনুরোধ জানানো চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন টাস্ক। টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে তা নিয়ে আমি এখন ইইউ নেতাদের সাথে পরামর্শ করব।’ ব্রেক্সিটে বিলম্ব করার বিষয়ে ‘ইইউয়ের কারো আগ্রহ নেই’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তার দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরও ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের ইইউ ব্রিটেনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
বরিস জনসনের স্বাক্ষরবিহীন চিঠি সম্পর্কে ব্রাসেলসে ব্রিটেনের প্রতিনিধি স্যার টিম ব্যারো একটি কভার নোট লিখেছেন। তাতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, প্রথম চিঠিটি পার্লামেন্টের আইনের আওতায় সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে কেন সেই চিঠিতে বরিস জনসন স্বাক্ষর করেননি এর জবাব হতে পারে এমনÑ এর আগে জনসন বলেছেন, ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে বলার চেয়ে তিনি একটি পরীক্ষার মধ্যে পড়ে মরাকে বেছে নেবেন। তিনটি ডকুমেন্ট পাঠানোর বিষয়কে বিতর্কিত বলে বর্ণনা করেছেন বিবিসির পলিটিক্যাল এডিটর লরা কুয়েন্সবার্গ। এতে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে বরিস জনসন আদালতকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করছেন কি না তা নিয়ে একটি লড়াই হতে পারে। বিষয়টি আদালতের দিকে যাচ্ছে। খুব সহসাই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ফয়সালা হতে পারে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাস্কসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ফোন করেছেন বরিস জনসন। তাতে তিনি প্রথম চিঠি সম্পর্কে বলেছেন, ওই চিঠিটা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের। আমার তরফ থেকে নয়।’


আরো সংবাদ



premium cement