২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অডিও রেকর্ড প্রকাশ খাশোগিকে হত্যার ৩০ মিনিটের মধ্যে দেহ টুকরো করা হয়

-

ওয়াশিংটন পোস্টের বহুল আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতর প্রবেশ করার পর হত্যা করার আগে তার শেষ কথা ছিলÑ ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাশোগিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। শেষ মুহূর্তে জামাল খাশোগির সাথে কী ঘটেছিল, তার একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে তুরস্কের গোয়েন্দারা। তাতে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
খাশোগিকে হত্যা করে কিভাবে তার দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। খাশোগি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই পরিচিত কেউ একজন তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। খাশোগিকে অভ্যর্থনা জানানো ওই ব্যক্তির নাম মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব। তিনি একজন সিনিয়র গোয়েন্দা সদস্য ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী। খাশোগিকে তিনি যেসব কথা বললেন তা রয়েছে ওই অডিওতে। এতে তিনি বলেন, ‘বসুন খাশোগি। আপনাকে সৌদিতে ফেরত নেয়া হবে। ইন্টারপোল আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। ইন্টারপোল চায়, আপনি ফিরে যান। তাই আপনাকে নিতে আমরা এখানে এসেছি।’
জবাবে খাশোগি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার হবু স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর খাশোগিকে একটি বার্তা লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন মুতরিব। খাশোগিকে মুতরিব বলেন, ‘আপনার ছেলের কাছে এই কথাগুলো লিখুনÑ ‘যদি আমার (খাশোগির) সাথে যোগাযোগ না করতে পারো, তাহলে চিন্তা করো না।’
তার নিদের্শমতো খাশোগি ওই বার্তা লিখতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর মুতরিব তাকে বলেন, ‘আমি বলছি, এটা লিখুন জনাব খাশোগি। দ্রুত এটা লিখুন। আমাদের সাহায্য করুন, তাহলে আমরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারব। কারণ শেষমেশ আমরা আপনাকে সৌদিতে ফিরিয়ে নেবই। আর যদি আমাদের সাহায্য না করেন, তাহলে কী ঘটবে তা বুঝতেই পারছেন।’
এরপর খাশোগিকে টেনে নেয়ার শব্দ শোনা যায়। চেতনা হারানোর আগে খাশোগির শেষ কথা শোনা যায়, ‘আপনারা কী করছেন। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’
এ সময়ের মধ্যেই খাশোগির মাথায় একটি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর ওই অডিওতে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় চারপাশ থেকে হত্যাকারী দলকে খাশোগিকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে শোনা যায়।
খাশোগি ওই কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই মেহের আবদুল আজিজ মুতরিবকে শোনা যায় কাউকে প্রশ্ন করছেন, ‘পুরো দেহ কি কোনো ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো যাবে?’ এর উত্তরে সালাহ মোহাম্মদ আবদাহ তুবাইগি নামে খ্যাতিমান সৌদি ফরেনসিক চিকিৎসক বলেন, ‘না, খুব ভারী হবে। (খাশোগি) অনেক লম্বা।’ এ সময় আবদাহ তুবাইগিকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘যদিও আমি লাশের ওপর ছুরি চালাই। তবে আমার কাজে আমি খুব দক্ষ।’ তিনি যোগ করেন, ‘কাজের সময় সাধারণত এক পেয়ালা কফি পান করি। একটা সিগারেটে টান দিই। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ফেলব। কাজ শেষে আপনারা বিচ্ছিন্ন অংশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসে ঢুকিয়ে বাইরে নিয়ে যাবেন।’ সৌদি আরবের নাগরিক জামাল খাশোগি। তিনি ছিলেন সৌদি আরবের সরকারের কড়া সমালোচক। ফলে প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্বে আসার পর যখন ব্যাপকহারে ধরপাকড় করা হয়, ওই সময়ে খাশোগি পালিয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।


আরো সংবাদ



premium cement