২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রের আয়লান কুর্দি মেক্সিকো সীমান্তে নদীতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু

-

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী এক বাবা তার শিশু কন্যাকে নিয়ে নদী পার হওয়ার সময় ডুবে মারা গেছেন। এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ব মিডিয়ায় ফের আলোড়ন তুলেছে।
ছবিতে দেখা গেছে, বাবা ও ছোট্ট শিশুটির নিথর দেহ উপুড় হয়ে নদীর তীরে পানির মধ্যে পড়ে আছে। শিশুটির পরনে লাল রঙের প্যান্ট, পায়ে জুতা। বাবা আর মেয়ের মাথার কিছু অংশ কালো কাপড়ে ঢাকা। শিশুটির একটি হাত তখনো বাবার কাঁধ জড়িয়ে ধরে আছে।
এই ছবি আমাদের ২০১৫ সালে তোলা তিন বছর বয়সী সিরীয় বালক আয়লান কুর্দির কথা মনে করিয়ে দেয়, যে শিশু যুদ্ধবিগ্রহ এড়িয়ে নিরাপদ জীবনের খোঁজে বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি জমিয়েছিল ইউরোপের কোনো দেশের উদ্দেশে; কিন্তু সাগরে নৌকাডুবে মারা যায় সে ও তার মা। তার স্তব্ধ দেহটি এভাবেই তুরস্কের সাগরতীরের বালুতে মুখ গুঁজে পড়েছিল। সে সময় আয়লান কুর্দির এই ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল; কিন্তু বিশ্বজুড়ে চলমান অভিবাসী সঙ্কটের কোনো সুরাহা যে হয়নি অস্কার ও তার মেয়ের মৃত্যুই তার প্রমাণ।
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেমন বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে হয় সোমবারের হৃদয়বিদারক এই ছবিটিই তা জানান দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তসঙ্কট এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষ্ঠুর অভিবাসননীতির জ্বলন্ত প্রমাণই যেন এই ছবিটি। অস্কার আলবার্টো মার্টিনেজ রিও গ্রান্ডো নদী সাঁতরে তার স্ত্রীর কাছে আসছিলেন। এ সময় তার ২৩ মাস বয়সী শিশু কন্যা ভ্যালেরিয়া তাকে দেখে পানিতে ঝাঁপ দেয়। মর্মস্পর্শী এই ছবিটি তুলেছেন মেক্সিকান ফটোগ্রাফার জুলিয়া লে ডাক। তিনি মেক্সিকান সংবাদপত্র লা জর্নাদায় লিখেছেন, মেয়েকে বাঁচাতে বাবা প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু প্রচণ্ড স্রোতে তাদের এই করুণ পরিণতি হয়। আলবার্টোর স্ত্রী তানিয়া লা জর্নাদাকে বলেন, চোখের সামনেই আমি আমার স্বামী ও সন্তানকে স্রোতে ডুবে যেতে দেখেছি। পরে তাদের নিথর দেহ রিও গ্রান্ডে নদীর মেক্সিকোর মাতামোরোস অংশে ভেসে ওঠে। আলবার্টো এল সালভাদরের বাসিন্দা। তিনি সোমবার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মেক্সিকান বর্ডার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর জন্য দুই মাস ধরে পরিবারটি মাতামোরোসের একটি আশ্রয়শিবিরে অপেক্ষা করছিল। তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও বর্ডার পার হতে না পারায় তারা সিদ্ধান্ত নেন, নদী পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন। আলবার্টোর স্ত্রী জানিয়েছেন, তারা মেক্সিকান সরকারের কাছ থেকে মানবিক ভিসা পেয়েছিলেন।
এ দিকে বাবা ও মেয়ের এই মৃত্যুর ঘটনায় সালভাদরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্দ্রা হিল জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, তারা যেন দেশেই থাকে, উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে না যায়। একই সাথে তিনি দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি অস্কার ও তার মেয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘ফের শোকে ভাসছে দেশ। আমি সব পরিবারের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা ঝুঁকি নেবেন না। জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।’ মেক্সিকোতে থাকা সালভাদরের অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিল।


আরো সংবাদ



premium cement