২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বুথ ফেরত জরিপে সর্বাধিক আসনে জয়ী ফিউ থাই পার্টি

থাইল্যান্ডে নির্বাচন
-

থাইল্যান্ডে ২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পাঁচ বছর পর রোববার প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনে লোকেরা ভোট দিয়েছে। বুথ ফেরত জরিপে দেখা গেছে, নির্বাসিত সাবেক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থিত ফিউ থাই পার্টি সর্বাধিক আসনে জয়ী হচ্ছে, তবে তা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না।
থাই পিবিএস চ্যানেল প্রচারিত থাই রিসার্চ সেন্টার সুপার পোলে বুথ ফেরত জরিপ চালায়। এতে দেখা যায় যে, হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের ৫০০ আসনের মধ্যে ১৬৩টি আসনে জিতবে ফিউ থাই পার্টি। জান্তা প্রধান ৯৬টি আসন, ডেমোক্র্যাট পার্টি ৭৭টি আসন, ভুমিজাইথাই পার্টি ৫৯টি আসন এবং নতুন ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টি ৪০টি আসনে জিতবে। সামরিক জান্তা প্রধান প্রায়ুথ চান-ও-চা থাকসিনের ফিউ থাই পার্টির নেতৃত্বে “গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের” বিপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বহাল থাকার চেষ্টা করছেন। ২০১৪ সালে প্রাউত থাকসিনপন্থী গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে সরাসরি সামরিক শাসন চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনী ২০০৬ সালে থাকসিনকে উৎখাত করার পর তিনি ২০০৮ সাল থেকে স্বনির্বাসনে রয়েছেন। সুয়ান দোসিত রাজাবাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে পরিচালিত আরেকটি জরিপে বলা হয়েছে, ১৭৩টি আসন পেয়ে শীর্ষে থাকবে ফিউ পার্টি, ৮৮টি আসন পাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিত ভেজাজিভার নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাট পার্টি। জাতীয় টেলিভিশনে দেখানো হয় ১৩৫-১৪০ আসন পেয়ে প্রথম স্থানে প্রাচা রাথ পার্টি এবং ১২০-১৩৫ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিউ থাই পার্টি।
এ দিকে থাকসিন সিনাওয়াত্রার অনুগত রাজনৈতিক দল ফিউ থাই পার্টির নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার’ বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল প্রায়ুথ চান-ও-চা। তিনি সেনাসমর্থিত নতুন দল পালাং প্রাচা রাথ পার্টির (পিপিআরপি) হয়ে লড়েছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিত ভেজাজিভা ও তরুণ টেলিকম ব্যবসায়ী থানাতর্ন জুয়ানগ্রুংরু য়াংকিতের ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টি।
এবারের নির্বাচনকে মূলত বর্তমান সামরিক সরকার ও সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাসিত সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার অনুগতরা। থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল দেশটিতে এবারের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থকদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন তৎকালীন থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করেন প্রায়ুথ। ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই সামরিক বাহিনী দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও ধারাবাহিকভাবেই ভোট পিছিয়েছে। সেনাবাহিনীর আমলে প্রণীত নতুন সংবিধানেই এবারের ভোট হচ্ছে। যে কারণে ফল যা-ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীরই প্রভাব অক্ষুণœ থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সামরিক বাহিনী স্বৈরাচারি পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় তারা গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনা নিষিদ্ধের আইন করে বিরোধীদের দমিয়ে রেখেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ২০০১ সাল থেকে দেশটিতে যত নির্বাচন হয়েছে, তার সব ক’টিতেই থাকসিন সিনাওয়াত্রার অনুগত রাজনৈতিক দলগুলো জয় পেয়েছে। ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেনাবাহিনীও অনানুষ্ঠানিকভাবে তার প্রভাব কমানোর দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল। থাকসিন অনুগত দলগুলোর মধ্যে ফিউ থাই পার্টিই এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। গতকালের নির্বাচনে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষের ৫০০ সদস্য নির্বাচিত হবেন। নতুন সংবিধান অনুযায়ী, সেনাবাহিনী উচ্চকক্ষ সিনেটের ২৫০ সদস্যের মনোনয়ন দেবে। দুই কক্ষের সদস্যদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত হবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী।

 


আরো সংবাদ



premium cement