২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোবাইল ও কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ টাইপ করলে কী কী সমস্যা হয়?

মোবাইল ও কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ টাইপ করলে কী কী সমস্যা হয়? - ছবি : সংগৃহীত

অনেকেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রমাগত মোবাইল বা কম্পিউটারে টাইপিং করে চলেন। অজান্তেই এমন অভ্যেস ডেকে আনতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা।

আমি, আপনি, প্রায় সকলেই এখন প্রযুক্তির দাস। সকাল থেকেই ফোন বা কম্পিউটারের কিবোর্ডে টুকুস টুকুস করেই আমাদের দিন কাটে। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন অভ্যেস থেকে আসতে পারে হাজারো শারীরিক সমস্যা। এবার এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক—
 ঘাড়ে ও পিঠের ব্যথা— মোবাইল ফোনে সাধারণত আমরা সামনের দিকে ঝুঁকে টাইপ করি। দীর্ঘক্ষণ ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে ঘাড়ের পিছনের পেশিগুলোকে ঘাড়কে সোজা রাখার কাজটি করতে হয় না। প্রতিনিয়ত একই নিয়মে চললে একসময় পেশিগুলো কাজ না করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়ে। হারায় কর্মক্ষমতা। পাশাপাশি ঘাড়ের অস্থিসন্ধিগুলোর অবস্থানগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তাই দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারকারীর অল্প বয়সে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডোলোসিসসহ বিভিন্ন ঘাড়ের অস্থিসন্ধিগত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় ঘাড়ের অবস্থান ঠিক জায়গায় না থাকলেও ঘাড়ে সমস্যা দেখা দেয়।

ঠিক একই কারণে পিঠেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, সামনে ঝুঁকে ব্যবহার করলে পিঠের পেশি ও অস্থিসন্ধিতে চাপ পড়ে। এক্ষেত্রে ‘লো ব্যাক পেইন’ হওয়া খুব স্বাভাবিক।

 কাঁধ— অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারে কাজ করে যাওয়ার জন্য কাঁধের উপরিভাগ বা ঘাড়ের পিছনের দিকের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলতার কারণে পেশিগুলোতে মাঝেমধ্যে খিঁচ ধরে। তীব্র যন্ত্রণাও হয়। এই সমস্যার নাম মায়োফিসিয়াল পেইন।

মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় সাধারণত কাঁধটা সামান্য উঠিয়ে রাখতে হয়। কাঁধ তুলে রাখার জন্য কাঁধের পেশিতে যথেষ্ট চাপ পড়ে। এমনটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে কাঁধের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেখা দেয় ফ্রোজেন শোল্ডারসহ কাঁধের নানা সমস্যা। এক্ষেত্রে বাম বা ডান যেই হাতের ব্যবহার বেশি সেই হাতে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।

কনুই— কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার বা টাইপ করার সময় সাধারণত কনুই ভাঁজ করা থাকে। ফলে টেনিস অ্যালবো রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

 কব্জি ও আঙুল— মোবাইল ঘাঁটার সময় মানুষ কব্জিটাকে বেঁকিয়ে শক্ত করে ধরে রাখেন। এছাড়া মোবাইলে কোনো কিছু করার সময় হাতের বুড়ো আঙুলের ব্যবহার খুব বেশি হয়। এই দুই কারণে শরীরের এই জায়গার পেশিতগুলোতে চাপ পড়ে। এর থেকে ব্যথা হতে পারে।
এই সমস্যার নাম ডি কুয়েরভেইনস টেনসাইনোভাইটিস।

এছাড়া কব্জির মেডিয়ান স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ কারপাল টানেল সিনড্রোম রোগটিতে আক্রান্ত হন। এই অসুখে রোগীর হাতের আঙুলগুলিতে ব্যথা, অবশভাব থাকে।
অতিরিক্ত টাইপিং করার দরুণ অনেকের আঙুল হঠাৎ হঠাৎ আটকে যায়। আবার বন্দুকের ট্রিগার ছাড়ার মতো আঙুল ছেড়েও যায়। এই আটকে যাওয়া এবং ছাড়ার মাঝের সময় সঙ্গী হয় অসহ্য ব্যথা। এই সমস্যার নাম ট্রিগার ফিঙ্গার।

 চোখের সমস্যা— দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া বেশ স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ছোট স্ক্রিনে ফোকাস করার জন্য চোখের মাংস পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি চোখের খুবই কাছে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের অতিরিক্ত আলোর ঝলকানিও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে তুলতে সক্ষম। কিছু ক্ষেত্রে এসবের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে চোখের পাতা স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় খোলা থাকে। এর ফলে চোখের আদ্রতা কমে আসে। চোখ জ্বালা করে। অনেকের মাথাব্যথাও হয়।

 ঘুমের ব্যঘাত— মোবাইল বা কম্পিউটারের মতো আধুনিক যন্ত্রগুলো মস্তিষ্কে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করার পর ঘুম আসতে চায় না। আবার এলেও ঘুমের গভীরতা চলে যায়। ঘুম সম্পূর্ণ হয় না। ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ও দুঃস্বপ্ন দেখা দেয়ারও আশঙ্কা থাকে।

পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুম না হলে শরীরে ক্লান্তি আসে। কাজে অনীহা দেখা দেয়। ভুলভ্রান্তি বাড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

রেহাই মিলবে কীভাবে?
 প্রথমেই মোবাইল ব্যবহারে রাশ টানুন। দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টার বেশি মোবাইল নয়। বিশেষত, দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় মোবাইলে টাইপ না করাই ভালো। এর বদলে ভয়েস সার্চ বা ভয়েস টাইপিং-এর সাহায্য নিতে পারেন।

 কম্পিউটার ব্যবহারের সময় কম্পিউটার টেবিল এবং চেয়ারের উচ্চতা ঠিক রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির উচ্চতা অনুযায়ী চেয়ার ও টেবিলের বন্দোবস্ত করতে হয়। এই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির নাম আর্গোনমিক ডিজাইন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশগুলিতে এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে সেখানকার সংস্থার মালিকেরা অফিস তৈরি করেন।

এটাই সেখানকার নিয়ম। তবে আমাদের দেশ এখনও এই ব্যবস্থা চালু হয়নি। এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন আপনার চোখ ও কম্পিউটারের মনিটরকে সমান্তরালে রাখবার। কিবোর্ড রাখতে হবে এমনভাবে যাতে ঘাড় বা হাত উঠে না থাকে। ভালো হয়, হাত বা ঘাড়কে চেয়ারের হাতলে রেখে কাজ করলে।

 মনে রাখবেন, ল্যাপটপ কিন্তু কম্পিউটারের বিকল্প নয়। ল্যাপটপ তৈরি করা হয়েছিল যাতে মানুষ কোথাও যেতে যেতে বা কোথাও গিয়ে সেটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে খুব কম সময়ের জন্য। এই ধরুন দিনে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার জন্য। ল্যাপটপের সব থেকে বড় সমস্যা হলো, ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় বেশিরভাগ মানুষই শারীরিক অবস্থার কোনো খেয়াল রাখেন না। খাটে শুয়ে বা অদ্ভুতভাবে বসে চলে টাইপিং। ফলে অজান্তেই শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ল্যাপটপটিকেও কম্পিউটারের মতো টেবিলের ওপর রেখে কাজ করতে হবে।

 অফিসের কম্পিউটারে একনাগাড়ে অনেকক্ষণ কাজ করবেন না। ২০ মিনিট অন্তর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। পায়চারি করতে পারেন।

 অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে চোখের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই এমন অভ্যেস এখনই ছাড়া দরকার।
 ঘুমের অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে মোবাইল বা যেকোনো ইলেকট্রনিক্স গেজেট থেকে দূরে থাকুন। এতে ঘুম ভালো হবে।

 এরপরও কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনিই আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement