২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জ লাশকাটা ঘর নিজেই যেন লাশ

-

নারায়ণগঞ্জের লাশকাটা ঘরটি (মর্গ) নানা সঙ্কটের কারণে নিজেই যেন লাশ হয়ে আছে। জেলার সাতটি থানায় বিভিন্ন ঘটনায় অপমৃত্যুর শিকার মানুষের ময়নাতদন্তের জন্য রয়েছে মাত্র একটি লাশকাটা ঘর। কিন্তু সমস্যার শেষ নেই সেই একমাত্র লাশকাটা ঘরেরই। নানা রকমের অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো রকমে চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম।
খুন, আত্মহত্যা, অপমৃত্যু, দুর্ঘটনাসহ সব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পথ ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তে সঠিক তথ্যেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচন হয়। ফলস্বরূপ পাওয়া যায় ন্যায়বিচার। লাশকাটা ঘরেই (মর্গ) ময়নাতদন্তের কাজ সম্পাদন হয়। কিন্তু সেই লাশকাটা ঘরের অবস্থা যখন বেহাল, তখন ময়নাতদন্তে সঠিক তথ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সূত্র জানায়, শহরের মণ্ডলপাড়া নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) পাশে লাশকাটা ঘরটির অবস্থান। মর্গ থাকলেও মর্গের সব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। মরচুয়ারি (মৃতদেহ সংরক্ষণের হিমাগার) নেই, নেই কফিন (কাঠের বাক্স)। মর্গে এ বছর প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতির আনার কথা থাকলেও বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মর্গের প্রথম জানালাটিই ভাঙা। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মর্গের দু’টি কক্ষের বেশির ভাগ জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। চারটি এসির দু’টিই নষ্ট। এক দিকে জানালার কাঁচ ভাঙ্গা, অন্য দিকে এসির কার্যকারিতা কম হওয়ায় মর্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে নেই। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় মর্গের মেঝে সব সময় থাকে অপরিচ্ছন্ন।
মর্গে ময়নাতদন্তের সময় সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা। দিনের অন্য সময়ে লাশ এলে পরদিন লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। মর্গের দীর্ঘ সময় লাশ পড়ে থাকায় দ্রুত পচন ধরে। অতিরিক্ত লাশ হলে মর্গে লাশ এনে ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই চলে লাশের ময়নাতদন্ত।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ নাসিম ওসমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মর্গ হাউজটি উদ্বোধন করেন। এরপর সাত বছরেও মর্গের ব্যবস্থাপনায় উন্নতির কোনো ছোঁয়া লাগেনি। যৎসামান্য কিছু যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে মর্গের কার্যক্রম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মর্গের একজন কর্মী জানান, কোনো দিন খুনসহ অন্যান্য ঘটনায় বেশি লাশ এলে দুটো লাশ ছাড়া সব লাশ নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। লাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পুরো মেঝে ভাসে। পর দিন লাশ কাটতে কাটতে লাশ পচে যায়, দুর্গন্ধ বের হয়।
মর্গের তত্ত্বাবধায়ক দরবন বলেন, মর্গে লাশের সংখ্যা বেশি হলে লাশ নিচে রাখি। ঝড়ের বাতাসে জানালার কাচগুলো ভেঙে গেছে। আমরা হাসপাতালের স্যারকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মর্গটি পরিচালিত হয়। তবে জেনারেল হাসপাতাল থেকে জানানো মর্গের সমস্যা সম্পর্কে গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, মর্গের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। কোনো সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, ২০১৮ সালে মর্গের আধুনিক ব্যবস্থাপনার জন্য মরচুয়ারি কুলারের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। গত বছর অনুমোদন পাব ভেবেছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা অনুমোদন পাইনি। মর্গে গত বছর কিছু সমস্যা ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা তা ঠিক করে দিয়েছি। এরপর মর্গের কোনো সমস্যা সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। মর্গের সমস্যা সম্পর্কে আমাদের জানানো হলে আমরা ঠিক করে দিবো।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement