২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শরীয়তপুরে পদ্মার ডান তীর রক্ষাবাঁধ বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে মানুষকে

-

প্রায় এক শতাব্দী থেকে ভাঙছে শরীয়তপুরের পদ্মা তীরবর্তী এলাকা। কোনো কোনো বছর ভাঙনের তীব্রতা কম থাকলেও পরের বছরই পদ্মা দেখিয়েছে তার আগ্রাসী রূপ। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তীরবর্তী গ্রাম, হাটবাজার, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর। পদ্মা পাড়ের মানুষের একসময় ছিল সাজানো সংসার। অব্যাহত ভাঙনে এখন আর তাদের কিছুই নেই। অসংখ্য পরিবার হয়ে গেছে সর্বস্বান্ত। সব হারিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ফসলি জমি, বালুর মাঠ আর নদীর পাড়ে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তারা জীবন কাটাচ্ছেন। তবে ভাঙনে সব হারানোদের মনে নতুন করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ।
ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক শতাব্দী ধরে ভাঙতে থাকলেও ২০১৬ সালের জুলাই থেকে জেলার জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নে শুরু হয় পদ্মার ব্যাপক ভাঙন এবং তা চলতে থাকে ২০১৮ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ভাঙনে নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর শেহের আলী মাদবর কান্দি, কেদারপুরের সাহেবেরচর, চণ্ডিপুর বাজার, সাধুর বাজার পাঁচগাঁও, মলফৎগঞ্জ বাজার, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার পাঁচ সহস্রাধিক পরিবারের পাকা, সেমি পাকা ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ কাঁচা-পাকা একাধিক সড়ক বিলীন হয়ে যায়।
এর আগে ২০১৭ সালে জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের খেজুরতলা কলমিরচর চোকদার কান্দি, মমিন খালাসি কান্দি, হাজী মকবুল খালাসি কান্দি, রিয়াজ উদ্দিন মাদবর কান্দি ও ইয়াকুব মাদবর কান্দি ও ওই সব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক, হাটবাজার, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ মক্তব পদ্মা গ্রাস করে। ভাঙনে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে যায়। তারই ফলে ২০১৮ সালে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। এ বছর জানুয়ারি থেকে পুরোদমে শুরু হয় বাঁধের কাজ। এতে এ বছর ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ফলে পদ্মা পাড়ের মানুষ আবার নতুন করে নিরাপদে বসবাসের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
নড়িয়া উপজেলা সদরের মিহির চক্রবর্তী জানান, ২০১৮ সালে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পরও এ বছর বর্ষায় আতঙ্কে ছিল মানুষ। কিন্তু বাঁধের কল্যাণে এবার পদ্মা আগ্রাসী রূপ ধারণ করতে না পারায় এ জনপদের মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছে। কেদারপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফেজ সানাউল্লাহ বলেন, বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নড়িয়ার পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হতে থাকে। এ জন্য এ অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেতা পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞ।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ২৫ ভাগ। ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করতে পারব বলে আশাবাদী।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, আমি এ এলাকার ছেলে হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই পদ্মার ভাঙাগড়ার খেলা দেখে আসছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি। ২০১৮ সালের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পাউবো পদ্মার ডানতীর রক্ষাবাঁধের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করায় ও আল্লাহর রহমতে এ বছর নড়িয়াসহ এ অঞ্চলের মানুষের সম্পদ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমরা আশাবাদী প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষকে আর পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের রূপ দেখতে হবে না। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর একনেকে প্রধানমন্ত্রী পদ্মার বাম তীর রক্ষার জন্য ৫৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে ইনশা আল্লাহ শরীয়তপুরের পদ্মা তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আর ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement