২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর

গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ অর্ধশত কারখানা ছুটি
-

গাজীপুরের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে গতকাল রোববার এক পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। আন্দোলনরত ক’জন শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে বিুব্ধ শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা বেশ কিছু যানবাহন, কারখানা ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটারব্যাপী জানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত অর্ধশত কারখানা এদিন ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডেগেরচালা এলাকার নিট অ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে আগস্ট মাসের পাওনা বেতনভাতার অর্ধেক পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকেরা তাদের অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধের জন্য গত কয়েক দিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে দিন-তারিখ নির্ধারণ করলেও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ দিনও তা পরিশোধ করেনি কর্র্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাদের বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে শনিবার কারখানায় কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। কর্তৃপক্ষ এতে সায় না দেয়ায় শ্রমিকেরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। বারবার আশ্বাস দিয়েও বেতনভাতা পরিশোধ না করায় একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা রাত ১০টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার পর শ্রমিকদের বেতনভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে প্রায় আধাঘণ্টা পর শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ দিকে শনিবার রাতে ওই কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও কিনিকে ভর্তি করা হয়েছেÑ এমন খবর কারখানায় ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ওই কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানার গেটে এসে জড়ো হন। কিন্তু তারা কাজে যোগ না দিয়ে গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পানি পানে অসুস্থদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা লরিসহ বিভিন্ন মালামাল সড়কের ওপর রেখে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেন। বেশ কিছু বহিরাগতও তাদের সঙ্গে অংশ নেন। একপর্যায়ে তারা যানবাহনসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানা, দোকানপাট নির্বিচারে ভাঙচুর করতে থাকেন। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে উভয় দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরতদের সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশের অন্তত ১০ সদস্য আহত হন। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ শর্ট গানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে বেলা আড়াইটার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিকেলে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
ওই কারখানার শ্রমিক কালাম বলেন, কারখানা কর্তৃপ আমাদের পাওনা বেতনভাতা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের পাঁয়তারা করছিল। শ্রমিকদের যাতে বেতন না দিতে হয়, সেজন্য শ্রমিকদের দমন করতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে ট্যাংকের পানির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়। শনিবার রাতে ওই পানি খেয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতেই তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়াও ওই ঘটনার জেরে একই সময়ে চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকার শান্তাবুর কারখানার শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা পাশ্ববর্তী দোকানের তেলের ড্রামে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিকে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বা বিকল্প পথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বেলা দেড়টায় থেকে ডিগ্রি পরীা থাকায় রাস্তায় বেরিয়ে পরীাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় জটিলতায় পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক।
জিএমপির গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ওই কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছেন। তাদের সমর্থনে আশপাশের কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক সড়কে নেমে এসেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডেগেরচালা ও আশপাশের এলাকার প্রায় অর্ধশত কারখানা গতকাল রোববারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বিজিএমইএ কর্মকর্তারা এক জরুরি বৈঠকে বসেছেন। এ ছাড়া জিএমপির কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানও কারখানা এলাকা পরিদর্শন ও বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এএসপি আমিরুল আলম বলেন, ‘পানি পানে শ্রমিকের মৃত্যুর খবরটি পুরোপুরি গুজব। আমরা কোনো শ্রমিকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা পাইনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement