২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হানিমুনের দিন শেষ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর। - ছবি: বিবিসি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান সৌদি আরবের মাটি স্পর্শ করার ১৮ মাস এখনো পার হয়নি।

সে সময় সৌদি সরকার লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন, তখন সৌদি আরবের অনেক মানুষ খুশি হয়েছিল।

ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামাকে নিয়ে সৌদি আরবের মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, তারা মনে করে যে ওবামা ইরানের সাথে খারাপ একটি পারমাণবিক চুক্তি করেছে।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যার সাথে তারা কাজ করতে পারে বলে ভেবেছিলেন।

ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওবামা সর্বোচ্চ যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন সেটি বাতিল করেছেন ট্রাম্প। সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প কোন বয়ান দেননি।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ট্রাম্পের মেয়ের জামাতা জারেড কুশনার-এর যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল সেটি নিয়ে খুশি ছিলেন তিনি।

ট্রাম্পের সফরের পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইট হাউজ. পেন্টাগন এবং হলিউড সফর করেছেন।

এরপর মোহাম্মদ বিন সালমান যখন লন্ডন সফর করেন তখনো তাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। যদিও সে সময় ইয়েমেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল।

অন্যদিকে নিজ দেশে নানা ধরনের সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রশংসা পেয়েছে। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া, বিনোদনের নানা উদ্যোগ নেয়া এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে।

একই সাথে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

এজন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সৌদি আরবে অনেক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তবে সতর্ক সংকেতের জায়গাটি হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব মোহাম্মদ বিন সালমানকে যতটা উদার ভেবেছিলেন তিনি আসলে ততটা উদার নন।

গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে সৌদি আরবের কয়েক ডজন প্রিন্স এবং ব্যবসায়ীদের যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আটকে রাখা হয়, তখন মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোরতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল।

এমনকি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে স্বল্প সময়ের জন্য আটকে রেখেছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে আটক রেখে সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সৌদি আরব।

মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কেউ যদি কোন প্রশ্ন তোলে তাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এমনকি তার সংস্কার কাজের সমালোচনা করে কেউ যদি শুধু একটি টুইটও করলেও তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ রয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত জামাল খাসোগজি অক্টোবর মাসের ২ তারিখে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ তৈরি হয়।

সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে জামাল খাসোগজি নিখোঁজের সাথে সৌদি আরব সরকার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে 'কড়া শাস্তি' পেতে হবে তাদের।

এর জবাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছেন, তারাও এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক তেলের বাজারে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

সৌদি আরবের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ক্রমাগত প্রচারণার কারণে সে দেশের অনেক মানুষ এখনও সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন।

সে দেশে এমন গুঞ্জনও আছে যে সৌদি আরবের নির্দোষ রাজতন্ত্রের বদনাম ঘটানোর জন্য ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে কাতার এবং তুরস্ক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান বাড়াবাড়ি করেছেন কিনা সে প্রশ্নও এখন অনেকে তুলছেন।

ইয়েমেনে এক ব্যয়বহুল যুদ্ধে তিনি সৌদি আরবকে জড়িয়েছেন। এ যুদ্ধে সৌদি আরব কখনোই জিততে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে।

প্রতিবেশী কাতারের সাথে চরম বৈরিতা তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে কানাডার সাথে বিবাদে জড়িয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

 

আরো পড়ুন: ট্রাম্পের হুমকিতে সৌদি শেয়ারবাজারে ধস
এপি, ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০৮


ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি নিখোঁজে জড়িতদের ‘কঠোর শাস্তি’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর সৌদি স্টক মার্কেটে দরপতন ঘটেছে। শেয়ারের দাম ৬.৮ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। রোববার রিয়াদে তাদাউল এক্সচেঞ্জে শেয়ারের দরপতন ঘটে। তবে আবুধাবি ও দুবাইয়ের মার্কেটে শেয়ারের দাম বেড়েছে।

গত সপ্তাহে ৫.৮ শতাংশ দরপতনের পর গতকাল বেচাকেনার প্রথম দিকেই ৪% দরপতনের ঘটনা ঘটে। গত জানুয়ারির পর সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটে গতকাল। রোববার সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিবিএস ‘৬০ মিনিট’ কে বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে বলে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে দেশটিকে মারাত্মক শাস্তি পেতে হবে। খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট থাকলে তা আমাকে খুব হতাশ ও ক্ষুব্ধ করবে। আমরা এটির গভীরে যাব এবং কঠোর শাস্তি দেবো।’


তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর সৌদি এজেন্টরা খাশোগিকে হত্যা করে। তবে সৌদি আরব এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে, কিন্তু লেখক কনস্যুলেট ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

আল-রাজি ব্যাংকের শেয়ার কমে গেছে ৫.৩ শতাংশ এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রাসায়নিক কোম্পানি সৌদি ব্যাসিক ইন্ডস্ট্রিজ করপোরেশনের শেয়ারের দরপতন ঘটে ৪%। আর সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ন্যাশনাল কমার্সিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমে গেছে ৫.৫ শতাংশ।

নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে কঠোর প্রতিশোধ

আলজাজিরা ও ডেইলি সাবাহ

সৌদি আরব ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি নাকচ করে দিয়েছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে জবাবে কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাশোগি হত্যার সাথে সৌদি আরব জড়িত থাকলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি জানানোর পর দেশটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেয়া হয়। 

এতে বলা হয়, সৌদি আরব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক চাপ বা অসত্য অভিযোগ পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে যেকোনো হুমকি বা খাটো করার চেষ্টা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। সৌদি আরব আরো নিশ্চিত করছে যে, যদি তাদের কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, তাহলে তারা জবাবে আরো বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবে। রিয়াদে সপ্তাহের প্রথম দিনে তাদাউল এক্সচেঞ্জে একপর্যায়ে শতকরা প্রায় ৭ ভাগ দরপতনের পর এ বিবৃতি দেয়া হয়। 

গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার পেছনে সৌদি আরবের হাত থাকতে পারে এবং খাশোগিকে খুন করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে সৌদি আরবকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস-এর ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। অনুষ্ঠানটি স্থানীয় সময় রোববার প্রচারিত হওয়ার কথা। ট্রাম্প বলেন, আমরা ঘটনার উপসংহারে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বিষয়টি বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে তিনি সাংবাদিক ছিলেন। 

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জানি না খশোগিকে হত্যা করা হয়েছে কি না। তবে পরিস্থিতি খুব শক্তভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি প্রমাণ হয় যে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে তাহলে দেশটিকে মারাত্মক পরিণতির মুখে পড়তে হবে। তবে তিনি কোন ধরনের ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছেন প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, দেশটির কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি স্থগিতের মানে দাঁড়াবে নিজেই নিজেকে শাস্তি দেয়া।’
ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি স্থগিত করলে রাশিয়া ও চীন এর সুযোগ নিতে পারে। তাই দেশটিকে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে হাঁটতে চান তিনি। ট্রাম্প বলেন, আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দেবো। তারা সামরিক সরঞ্জাম কেনার আদেশ দিয়েছে। বিশ্বের প্রত্যেকেই ওই আদেশ পেতে চাইবে। রাশিয়া তা চায়, চীন চায়, আমরাও চেয়েছি। আমরা সেটি পেয়েছি এবং আমরা তার সবটাই পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি কী চাই না তা বলতে পারি। আমি বোয়িং, লকহিড, রেথিয়নের চাকরির ক্ষতি করতে চাই না। আমি এ ধরনের একটি আদেশ হারাতে চাই না। 

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাশোগিকে খুনের নির্দেশ দিয়েছেন কি না- প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, এমন তথ্য এখনো কারো কাছে নেই। তবে আমরা হয়তো খুঁজে বের করতে পারব। বাস্তবে এমনটা হয়ে থাকলে আমরা খুব মর্মাহত ও ক্রুদ্ধ হবো। এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, খাশোগির ঘটনায় তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি বাতিল করতে চান না। তিনি বলেছিলেন, এটা আমাদের জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনবে? এটা তুরস্কে ঘটেছে এবং আমাদের জানা মতে খাশোগি আমেরিকার নাগরিক নন।


আরো সংবাদ



premium cement