২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব¡ চান ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণ

ডিএসসিসি নির্বাচন-২০২০
-

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক সমস্যা দূর করে একটি মডেল ওয়ার্ড গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সব প্রার্থীর অবস্থান বর্তমান কাউন্সিলর হাজী নূর আলম চৌধুরীর সহযোগীদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। তাদের বক্তব্য কোনো চাঁদাবাজকে কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চাই না। ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্বে¡ তারা এলাকার উন্নয়ন করতে চান। এলাকাবাসী চান পরিবর্তন।
কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডটি ডিএসসিসির অঞ্চল-৩ এর আওতাধীন। ঝাউচর, ঝাউলা হাটি, নয়াগাঁও, মুন্সিহাটি, হাসাননগর, আমিনবাগ, মুনসুরবাগ, সিরাজ নগর, পূর্ব ও পশ্চিম নবী নগর ও জান্নাতবাগ গ্রামের আংশিক নিয়ে এ ওয়ার্ডটি গঠিত।
রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ দশমিক ০২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা তিন লক্ষাধিক। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৪৫ হাজার ৯৬৫ জন ভোটার রয়েছে এ ওয়ার্ডে। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৭৩০ জন এবং নারী ২২ হাজার ২৩৫ জন। ডিএসসিসির ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান কাউন্সিলর ও কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর আলম চৌধুরী, থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জুম্মন হোসেন, থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রহিম ঝাউচরী, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম কমান্ডার, ইতালিপ্রবাসী মোজাফফর হোসেন বাবুল ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক প্রমুখ। এসব প্রার্থীর সবাই শাসকদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। এর বাইরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো: শহিদুল হক বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জাতীয় পার্টিসহ ও অন্যান্য দল থেকে কারো আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই অভ্যন্তরীণ সড়ক ও গলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই পানি নামতেও অনেক সময় লাগে। এখানে ডিএসসিসির কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। নোংরা পরিবেশ ও ধুলাবালু বেশি থাকায় মশা-মাছির উপদ্রব এখানে অনেক বেশি। সন্ধ্যা নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার আক্রমণ শুরু হয়। নেই কোনো নাগরিক সুবিধা, মূল নগরীর সাথে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগ নেই। এ কারণে তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে তাদের রাজধানীতে যেতে হয়। ওয়ার্ডের কবরস্থান ও রাস্তা প্রশস্ত না করায় প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এরপর রয়েছে কাউন্সিলরের সহযোগী ও স্বজনদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, কাউন্সিলর মো: নূর আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ মিন্টু, ছাত্রলীগ নেতা সবুজ সানি, তার ভাই সোহেল, শাকিল, মিজান, আওয়ামী লীগ নেতা জসিম মুন্সী, শাহজাহান ওরফে কানা শাহজাহান, সেলিম ওরফে জামাই সেলিম ও ফজলুসহ কয়েকজনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে জিম্মি কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর, নয়াগাঁও, খোলামোড়া ও ঝাউলাহাটি এলাকার তিন লাখ মানুষ। অভিযোগ আছে, কাউন্সিলর নূর আলম ও সাবেক এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এমন অভিযোগ ঝাউলাহাটি, ঝাউচর, খোলামোড়া এলাকার বাসিন্দাদের। তারা বলছেন, অবৈধ দখলদার, ভূমিদস্যু, মাদক কারবারি ও চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দেন কাউন্সিলর। নিজে ‘ভালো’ থেকে কাউন্সিলর তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে এসব করাচ্ছেন। মূলত তিনি একজন মুখোশধারী ভালো মানুষ। তবে বর্তমান কাউন্সিলর মো: নূর আলম চৌধুরী সব অভিযোগ অস্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত পাঁচ বছরে জনগণ আমার থেকে সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা পেয়েছে। নূর আলম চৌধুরী আরো বলেন, আগে এ ওয়ার্ড চাঁদাবাজ ও মাদকের আখড়া ছিল। আমি আসার পর প্রশাসনকে সাথে নিয়ে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত ওয়ার্ড গড়েছি। আশা করি, আবারো মনোনয়ন পেলে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারব।
৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জুম্মন হোসেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে এলাকার গরিব ও কর্মসংস্থানের অভাবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া মানুষের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করতে কাজ করব। তিনি বলেন, সবাই চায় পরিবর্তন ও নতুন নেতৃত্ব। তাই তিনি জনগণের প্রার্থী হিসেবে জনগনের পক্ষে নির্বাচন করবেন। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর মো: নূর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুয়ারেজ লাইন সংস্কার কাজে চাঁদাবাজি, জমি কেনাবেচায় বিরোধ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ পরিবার হয়েও অনেক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। গত নির্বাচনে আমার বাবা মো: কেরামত আলী মেন্বর ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেন। তার জনপ্রিয়তা দেখে নির্বাচনের তিন দিন আগে বর্তমান কাউন্সিলর মো: নূর আলম চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে আমার বাবাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন। তাই এবার আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে মনে করি। তিনি নির্বাচিত হলে অবহেলিত ওয়ার্ডের শিশুদের জন্য একটি খেলার মাঠ, অরক্ষিত শিমুলতলা কবরস্থানের সংস্কার, সড়ক উন্নয়ন, মহানগরীর সাথে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগ ও মাদক নির্মূলে কাজ করবেন বলে জানান।
আরেক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ও থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রহিম ঝাউচরী নয়া দিগন্ত প্রতিনিধিকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, এলাবাসীর সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা দান করাই আমার ধ্যান, জ্ঞান ও আনন্দ। আমি আমৃত্যু তাদের সেবা দানের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি বলেন, আমি কয়েকটি মসজিদ ও মাদরাসার সভাপতি ও সেক্রেটারি। ইসলামের আদর্শমতে চলাচল করি, ইসলামপন্থী সব ভোটার আমাকে ভোট দিবেন। নিজেকে হেভিওয়েট প্রার্থী দাবি করা আবদুর রহিম বলেন, দল তাকে মনোনীত না করলেও তিনি স¦তন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, মোস্তফা মহসিন মন্টুর হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি। হাজী সেলিম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সাথে আওয়ামী লীগ করছি। এ জন্য আমাকে বিএনপির শাসনামলে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছিল। ত্যাগী নেতা হিসেবে আমার পরিচিতি আছে। আমি নির্বাচিত হলে নাগরিক সমস্যা দূর করে জনগণকে একটি মডেল ওয়ার্ড উপহার দিতে পারব।
আরেকজন কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আবদুর রহিম। তিনি বর্তমানে কামরাঙ্গীচর থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক। গত কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের অনুরোধে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তখন মন্ত্রী এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বানানোর আশ^াস দিয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানান। এ ছাড়াও সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে ইতালিপ্রবাসী মোজাফফর হোসেন বাবুল ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক প্রমুখ। মোজাফফর হোসেন বাবুল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতালি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ওমর ফারুক থানা আওয়ামী লীগ নেতা। তারা দু’জনই দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্যথায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে কাজ করবেন। এর বাইরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো: শহিদুল হক বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোট হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা ওই বছরের ১৪ মে ও দক্ষিণ সিটির প্রথম সভা ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ হিসাবে ২০২০ সালের ১৩ মে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটির মেয়াদ একই বছরের ১৬ মে শেষ হবে। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে দুই সিটি করপোরেশনে ১৮টি করে সাধারণ ও ছয়টি করে সংরক্ষিত ওয়ার্ড যুক্ত হয়। এগুলোতে এবারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কলকাতার রাস্তায় চাকরি হারানো শিক্ষকরা শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম

সকল