২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হাওরবাসী ভালো নেই

বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বছরে ছয় মাস বেকার

ছয় মাস ধরে পানিবন্দী সুনামগঞ্জের হাওরবাসী : নয়া দিগন্ত -

কৃষিকাজ করে এখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ ধানের সঠিক মূল্য আমরা পাই না। আর বর্ষায় আমাদের কোনো কাজ নেই। তাই অনেকেই কারেন্ট জাল, কোনা জাল, বেড়জাল নিয়ে হাওরে মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু এখন মাছ নেই, তাই বেকার থাকতে হয়। আর প্রভাবশালী সাহেব-বাবুরা এখন জেলে সেজে তাদের অনুগত লোক দিয়ে জলমহাল ইজারা নিয়ে নিজেদের রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। ফলে বিশাল হাওর পাড়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, যোগাযোগ, অশিক্ষা, গোঁড়ামি আর অবহেলায় যুগ যুগ ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এসব পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র। আর এভাবেই চলছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলবাসীর জীবনযুদ্ধ। এমন কথা বললেন, হাওরের কৃষক আরি আমজদ মিয়া।
হাওরবাসী শুষ্ক মওসুমে এক ফসলী বোরো ধান চাষাবাদে মহাব্যস্ত সময় পার করলেও বর্ষায় তাদের বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় ভালো নেই তারা। অর্ধাহারে, অনাহারে, অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে কষ্টের জীবন পার করছে হাওর পাড়ের দরিদ্র পরিবারগুলো। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাঁচার আকুতি। হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামের জনসাধারণ বর্ষায় ছয় মাস বেকার থাকেন। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই শুধু পানি থৈ থৈ করে। ফলে এলাকায় কোনো কাজের ব্যবস্থা থাকে না। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের জায়গা না থাকায় মানবসম্পদ এখন সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বর্ষায় জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শালা, বিশ্বাম্ভরপুরসহ হাওর পাড়ের ৮০ ভাগ মানুষই পানিবন্দী হয়ে থাকেন। এ সময়ে কোনো কাজ না থাকায় বেকার থাকেন হাজার হাজার মানুষ। আর গ্রামগুলোর সাথে সড়ক পথের যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় স্কুল, কলেজ ও সরকারি অফিস আদালতে যেতে হাওরবাসীকে পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনায়। শুষ্ক মওসুমে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করে আর ভরা বর্ষার সময় কাজের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরে বসেই সময় পার করতে হয় তাদের। বেকার সময়ে তারা কেরাম, ঘাফলা, তাস, দাবা, লুডুসহ বিভিন্ন খেলা ও গ্রাম্য দোকানে বসে চায়ের আড্ডায় সিডিতে ছবি দেখে সময় পার করে দেন। বিকেলের পর থেকেই ভাসমান দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামগুলোর ছোট ছোট বাজারে এবং আশপাশের খোলা জায়গায় বসে জমজমাট আড্ডা বসিয়ে থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে বাংলা সিনেমা, ভারতীয় সিনেমা দেখার হিড়িক পড়ে যায়।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা আলী আমজাদসহ অনেকেই বলেন, যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে হাওর পাড়ের মানুষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারত। কিন্তু সরকারের সুনজর না থাকায় এই মানবসম্পদ এখন সমাজের বোঝা হচ্ছে দিন দিন। হাওর পাড়ে যোগাযোগব্যবস্থা, মিল-কলখারকানা থাকলে হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকত না। বর্ষায় কিছু লোক আছে তারা ডিঙ্গি নৌকা, বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা তৈরি করে দূর-দূরান্ত যাত্রী পরিবহন করে সংসার চালান। কেউ কেউ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে ফেরি পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন কোনো রকমভাবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচনে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান গেলাম জিলানী আফিন্দী রাজু বলেন, আমি সবসময় হাওরবাসীর উন্নয়ন নিয়ে ভাবি। হাওর উন্নয়নে সরকার হাওরবাসীর যোগাযোগব্যবস্থা, মিল-কলকারখানা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হাওরবাসীর জন্য যা যা করা যায় তাই করার চেষ্টা করব। সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার হাওরবাসীর জন্য কাজ করছে। তবে নারী সমাজকে হস্তশিল্পে পারদর্শী, আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাঁস ও মুরগি লালন-পালনের সাথে যুক্ত করা হলে বেকার নারী সমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। হাওরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুনজর প্রত্যাশা করছেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা-মধ্যনগর এলাকা) ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আ’লীগ সরকারের আমলে আমার নির্বাচনী এলাকায় হাওরের প্রত্যেকটা গ্রামে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে অতীতে কোনো সরকার এমন কাজ করেনি। হাওর এলাকাকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন ভবিষ্যতে আরো প্রকল্প হাতে নিয়ে হাওরবাসীকে নিয়ে উন্নত চিন্তাভাবনা করে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement