২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিএফইউজে ও ডিইউজে

নোয়াবের বিবৃতি মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে

-

দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কতটা বাস্তব?’ শীর্ষক বিবৃতিটি সাংবাদিক সমাজকে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। সহকর্মী ও সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিক পক্ষের এ ধরনের ধারণা পোষণ করে দেয়া বিবৃতি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে, একাংশ) কাছে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস ও নৈতিকতাবিবর্জিত বলে বিবেচিত হয়েছে। গতকাল শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এ মত প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, মালিক পক্ষের প্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে সব সময় কাজ করে থাকেন সাংবাদিক শ্রমিক কর্মচারীরা। সেখানে নবম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিক পক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সঙ্কট তৈরি করবে। মালিকের সাথে শ্রমিক তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নোয়াবের বিবৃতিতে সরকারি বেতন স্কেলের অধীনে সেরা ছাত্ররা একজন সিভিল ক্যাডার শুরুতে গ্রেড-৯ এ যোগদান করেন ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা বেতনে। এটি সাংবাদিকদের সম্পর্কে অমর্যাদাকর বক্তব্য বলে মনে করে বিএফইউজে ও ডিইউজে। অংশটি পড়ে মনে হয়েছে সাংবাদিকদের মধ্যে সেরা ছাত্র নেই। ক্যাডাররাই একমাত্র সেরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অসংখ্য সেরা ছাত্র সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন। নেতারা বিবৃতিতে বলেন, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকার অষ্টম মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সংবাদপত্র মালিকরা নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। ২০১৮ সালে সরকার নবম মজুরি বোর্ড ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও সংবাদপত্র মালিকরা সেটিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে প্রায় এক বছর ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের মহার্ঘ ভাতা পরিশোধ না করে বঞ্চিত করছেন। বিবৃতির একটি অংশে বলা বলা হয়েছে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এককভাবে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ চূড়ান্ত করে এ সংক্রান্ত সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।সপ্তম ও অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডও এভাবে একতরফাভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল যা সম্পূর্ণ অসত্য। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে নোয়াবের নেতা মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, এনায়েত উল্লাহ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী, এম এ মালেক, এ এস এম শহীদুল্লাহ খান মালিক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে তারা বৈঠক করেছেন। মালিক পক্ষ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বিরোধিতা করেছিলেন। অষ্টম মজুরি বোর্ড বেতন কাঠামো পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হলেও নোয়াব বিবৃতিতে শুধুমাত্র ক ক্যাটাগরির হিসাব দিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রারম্ভিক গ্রেড-৩ বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাও সঠিক নয়। গ্রেড-৩ হচ্ছে স্টাফ রিপোর্টারের গ্রেড। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী প্রারম্ভিক বেতন গ্রেড হচ্ছে ৪। ক ক্যাটাগরির একটি পত্রিকায় গ্রেড ৪ এর বেতন স্কেল হচ্ছে ১২ হাজার ৬০০ টাকা আর ঙ গ্রেডের পত্রিকায় পাঁচ হাজার ২৫০টাকা। নোয়াব বা সংবাদপত্র মালিকরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও পেশা। সুতরাং এ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা পেশার জন্য বিশেষভাবেই রাষ্ট্রকে ভাবতে হয়। সেখানে সরকারি চাকরির কোনো গ্রেডের সাথে এর তুলনা করা মানেই গণমাধ্যমকর্মীদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যা কখনোই মালিক পক্ষের কাছ থেকে কাম্য নয়। নোয়াবের বিবৃতিতে আয়কর নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেটি অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডেও তোলা হয়েছিল। পঞ্চম মজুরি বোর্ড রোয়েদাদে আয়কর সংবাদপত্র মালিক পক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে উল্লেখ ছিল এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ বরাবরই আয়কর প্রদানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সপ্তম মজুরি বোর্ডের সুপারিশমালায়ও তা উল্লেখ ছিল। নোয়াবের বিবৃতিতে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বেতন-ভাতা বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৭৫ শতাংশ। এ কারণে গুটি কয়েক পত্রিকা ছাড়া অন্যরা অষ্টম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’ প্রশ্ন হলো বিষয়টি জানার পর নোয়াব কী পদক্ষেপ নিয়েছে? নোয়াব কি শুধু নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাববে, নাকি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালনও তাদের নৈতিকতার মধ্য পড়ে? বিএফইউজে ও ডিইউজে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেসব পত্রিকা সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নোয়াবের বিবৃতিতে যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শ্রম আইনের ২ (১০) ধারার কথা উল্লেখ করে নোয়াব বলেছে, ‘প্রতি বছর চাকরির জন্য একটি গ্র্যাচুইটির বিধান আছে। সেখানে মজুরি বোর্ডে প্রতি বছরের জন্য ২টি গ্র্যাচুইটির বিধান একটি অবাস্তব আর্থিক চাপ।’ এ ছাড়া প্রতি তিন বছর পরপর এক মাসের মোট বেতন ও ৩০ দিনের বিনোদন ছুটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নোয়াবের সাথে যুক্তরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সংবাদপত্রের কর্মপ্রকৃতির তুলনা চলে না। বিশেষায়িত জরুরিপর্যায়ের পেশার কারণে সংবাদপত্রে কর্মরতরা সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ডে বা কর্ম অপেক্ষায় থাকেন। যেটি বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে আর চারটি পেশায় নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সেক্টরে কর্মরতরা ছুটি বা অবসর গ্রহণ অথবা অন্যান্য কারণে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন সংবাদপত্রে তার অনেকাংশই নেই। গণমাধ্যমকর্মী আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরন এক রকম নয় উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীরা তা পান না। এমনকি সংবাদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছুটির দিনেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে প্রাপ্য তেমন নেই বললেই চলে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের সমস্যা-সঙ্কটে ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অসংখ্য সংবাদপত্রে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন ও মজুরি বোর্ড অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ ও সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরো সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোনো আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক শ্রমিক কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদের ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তা মেনে নেয়া হবে না। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement