কৃষিঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আলোচ্য সময়ে ছয়টি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের মোট বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৮ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। এ খাতে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে রাষ্ট্রীয় খাতের রূপালী ও সোনালী ব্যাংক। তবে কৃষিঋণ বিতরণে সার্বিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলেও জনতা, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংক অর্ধ-বাষিকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে।
উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ছয়টি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৮) ব্যাংকগুলো মোট ১ হাজার ৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্য দিকে একই সময়ে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১২ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আলোচ্য সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এটি মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কৃষিঋণ বিতরণে ছয় মাসেই পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার বেশি বিতরণ করেছে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’ (বিডিবিএল)। বার্ষিক ১৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকটি ১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। বার্ষিক ৭৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৪৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা (৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ)। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। বার্ষিক ১৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৮১ কোটি ৩ লাখ টাকা (৫৪ দশমিক ০২ শতাংশ)। এ ছাড়া অর্ধবার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় স্পর্শ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। বার্ষিক ৬৮০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৩৩৯ কোটি টাকা (৪৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ)।
কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সবচেয়ে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ও সোনালী ব্যাংক। এর মধ্যে বার্ষিক ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা (৯ দশমিক ০৭ শতাংশ) এবং বার্ষিক ৮৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা (১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ)।
অন্য দিকে এসএমই খাতে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ সার্বিকভাবে অর্ধবার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও এ খাতে ঋণ বিতরণে মাত্র দুইটি ব্যাংক (জনতা ও অগ্রণী) অর্ধবার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। বাকি চারটি ব্যাংক (সোনালী, বেসিক, রূপালী ও বিডিবিএল) অর্ধবার্ষিকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
এসএমই খাতে বার্ষিক ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩ হাজার ২৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা (৮৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ)। বার্ষিক ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা (৫২ দশমিক ৬৬ শতাংশ)। বার্ষিক ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬৮০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা (৪০ দশমিক ০৩ শতাংশ)। বার্ষিক ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ৮৩৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা (৩৮ দশমিক ১ শতাংশ)। বার্ষিক ১ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৩৪ কোটি ১০ লাখ টাকা (৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ) এবং বার্ষিক ১২০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিডিবিএল ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬৮০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা (৪০ দশমিক ০৩ শতাংশ)।