২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অক্ষম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার

গ্রন্থমেলায় পছন্দের বই বাছাইয়ে ব্যস্ত শিশুরা : নয়া দিগন্ত -

টিএসসি মোড় দিয়ে প্রবেশের সময় দেখা গেল কিছু তরুণ-তরুণী হুইলচেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু পর মেলায় আসা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ারে তুলে মেলায় নিয়ে যাওয়া হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠানের সদস্য। মেলায় আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য হুইলচেয়ারের মাধ্যমে সেবা দানই তাদের কাজ। সংগঠনটির প্রধাম সমন্বয়কারী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তাদের সংগঠনের নাম সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। ৯ বছর ধরে তারা এরকম সেবা দিয়ে আসছেন।
তার মতে, ২০১৬ সালে থেকে বইমেলায় তারা কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমে শারীরিক অক্ষম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা বিবেচনা করে এই থিমটি তারা বাংলা একাডেমিকে জানায়। এরপর বাংলা একাডেমি এগিয়ে এলে তারা কার্যক্রম শুরু করে। তিনি জানান, বর্তমানে তাদের ২০টি হুইলচেয়ার আছে। যার মাঝে ১৫টি বয়স্ক ও শিশুদের ও পাঁচটি প্রতিবন্ধীদের জন্য। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি ১০টি হুইলচেয়ার ডোনেট করেছে। এগুলোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তারা এ সেবা দেয়।
বইমেলার প্রধান দুই প্রবেশপথ টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের প্রতি গেটে ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক আছেন যারা মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মেলা ঘুরিয়ে দেখার দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই হুইলচেয়ার সেবা দিচ্ছেন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের এই তরুণ-তরুণীরা।
মেলায় হুইলচেয়ার সেবা প্রদানের কাজে প্রধান সমন্বয়কের কাজ করা মুস্তাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, চলতে অক্ষম মানুষদেরও অধিকার আছে সর্বত্র যাওয়ার। আর এ কাজে আমরা যারা সুস্থ একটু সহায়তা তাদের জীবনটাকেও সুন্দর করে তুলতে পারে।’
তিনি জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিনামূল্যে একটি স্কুলও পরিচালনা করছে সংস্থাটি। যেখানে ১৩৬ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করান। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিছন্নতার ওপরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে তারা।
এ দিকে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল। বিক্রিও হয়েছে অন্য দুই দিনের তুলনায় ভালো। শুক্রবার গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ২৭২টি। অন্যান্য বইয়ের সাথে মেলায় এসেছে ‘এ কী কেবলই প্রেম’, বইটি লিখেছেন মাহফুজ উল্লাহ; নির্মাতা হানিফ সংকেতের বই ‘বিশ^াসে নিঃশ^াস নাই’, সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফির বই ‘ভূতকল্যাণ সমিতি’ এবং আতিক হেলালের ‘ছড়াসমগ্র’।
গতকাল মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা ও চন্দনা মজুমদার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশ নেন : কবি মোহাম্মদ সাদিক ও সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন গোলাম কিবরিয়া পিনু, আসলাম সানী, জুলফিয়া ইসলাম, ফারুক আহমেদ ও পলাশ মাহবুব।
কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ ও হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও রূপা চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল হাসান আব্দুল্লাহর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন’ এবং আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা।
আজকের অনুষ্ঠান
আজ শনিবার মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশ নেবেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন ও মলয় বালা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


আরো সংবাদ



premium cement