২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রানীশংকৈলের রামরাই দীঘি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম

রানীশংকৈলের রামরাই দীঘিতে অতিথি পাখি : নয়া দিগন্ত -

শীতের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে অন্যান্য এলাকার মতো ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলেও আশ্রয় নিয়েছে বহু অতিথি পাখি। শীত এলেই রানীশংকৈলে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম গড়ে ওঠে। এ সময় এখানকার বড় বড় গাছ, বিল ও জলাশয়ে দেখা মেলে পানকৌড়ি, লেঞ্জা, সরালি, পিয়ারি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের পাখি।
সাইবেরিয়াসহ সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়ায় এই সময়ে শুরু হয় তুষারঝড়ের দাপট। সেই অসহিষ্ণু পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় পাখি ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বিল ঝিল হাওরে। যাদের একটি অংশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাংলাদেশে যখন গরম নেমে আসে তখন সাইবেরিয়া অঞ্চলে শীতের তীব্রতাও কমে। এরপরই পাখিগুলো আবারো হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে যায় সেখানে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা ও জানা যায়, রানীশংকৈল উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রামরাই দীঘি। সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল আকৃতির এই দীঘিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বহু অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। ঝাঁকে ঝাঁকে বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের পাখি এসে ভিড় জমিয়েছে। এসব পাখি যখন পুকুরে অবস্থান করে তখন সবুজ শ্যামলে ঘেরা পুকুরটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাই এই সময়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পাখিপ্রেমী এবং সৌন্দর্যপিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন কেন্দ্র রামরাই দীঘিতে ভিড় জমান প্রতিদিন।
পাখিপ্রেমীরা জানান, দেশী ও অতিথি পাখি দেখার জন্যই তারা সেখানে হাজির হন। বিভিন্ন জাতের পাখি খুব কাছ থেকে দেখা যায়। কিন্তু রামরাই দীঘির পানিতে মুরগির লিটার বা বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে থাকা দায়। প্রচণ্ড শীতের কারণে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসা পাখিগুলো নোংরা ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে থেকে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। তা ছাড়া অসাধু কিছু মানুষ পুকুরের পাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে অবাধে। এগুলোর জরুরিভাবে তদারকি দরকার।
দীঘিতে পাখি দেখতে আসেন দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলার আলম হোসেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি জানান, শুনেছিলাম রানীসাগরে অনেক পাখি আসে। তাই দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে মনটা ভরে গেল। পুকুরের চারদিকের শত শত লিচু গাছ দেখতে বেশ মনোরম। পুকুরের নিচ থেকে পাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় আকাশের সাথে মিশে আছে। সত্যিই এটিকে প্রকৃত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে রাজস্ব আয় করা সম্ভব হতো।
কথা হয় পাখিপ্রেমী ও স্থানীয় সাংবাদিক মো: বিপ্লবের সাথে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, শত শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক রামরাই দীঘি এখন অতিথি পাখির সমাগমে মুখরিত। কিন্তু দুঃখজনক হলো মাছের খাবারের জন্য মুরগির লিটার (বর্জ্য) দিয়ে এখানকার পানি ময়লা করা হচ্ছে।
উপজেলার ৩ নম্বর হোসেনগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, এখন পাখি শিকারিরাও জানে এদের মারা যাবে না। এ ব্যাপারে এলাকার লোকজন খুব সচেতন। কাউকে পাখি শিকার করতে দেয়া হয় না। রামরাই দীঘিকে পুরোপুরিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে জেলার রানীশংকৈল-হরিপুর প্রধান সড়কের পাশেই কেউটান গ্রামে বহু বছরের পুরনো শিমুল গাছে আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য পানকৌড়ি পাখি। নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পাখিগুলো প্রতিবারের মতো এবারো এখানে আশ্রয় নিয়েছে। সকাল হওয়ার সাথে সাথে তারা আহারের খোঁজে যে যার মতো বেরিয়ে পড়ে। আহার শেষে আবার ফিরে বিশালাকার এই শিমুল গাছে রাত কাটায়। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর শীতের শুরুতেই পাখিগুলো আমাদের গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। কোনো মানুষকে আমরা এসব পাখি মারতে বা শিকার করতে দেই না।

 


আরো সংবাদ



premium cement