২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুই খানের প্রেস্টিজের লড়াই

নরসিংদী-২ আসন
-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র সতের দিন বাকি। এরই মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণায় আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে দেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নরসিংদী-২ আসনটিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতা। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ। অন্য দিকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান। তবে নির্বাচনের মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। তাই এবারের নির্বাচন হচ্ছে দুই খানের প্রেস্টিজের লড়াই।
পলাশ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও নরসিংদী সদরের তিনটি ইউনিয়নের একাংশ নিয়ে নরসিংদী-২ নির্বাচনী এলাকা। আয়তন ৯৪ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৯ হাজার ৫৩৯ ও নারী ভোটার এক লাখ ১৪ হাজার ৮৩৪ জন। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ৮৮টি। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী ড. আব্দুল মঈন খান আসনটিতে বরাবরই সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মঈন খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আশরাফ খানের সাথে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। পরে ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আসনটিতে মঈন খান নির্বাচন করেননি। এতে করে বিগত ১০ বছরের ক্ষমতাহীন থাকায় আসনটিতে বিএনপি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ পলাশের তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলেন। গত ১০ম সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ নেতা জায়েদুল কবির নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। সে সময় ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনটিতে নির্বাচন করেনি। নির্বাচনে জায়েদুল কবির স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আশরাফ খানের কাছে পরাজিত হয়। কামরুল আশরাফ খান আনোয়ারুল আশারাফ খান দিলিপের আপন ছোট ভাই। সেই হিসেবে ভাইয়ের সহযোগিতা নিয়ে তিনি দলকে আরো সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলেন। এবার একাদশ নির্বাচনে ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ, জাসদ নেতা জায়েদুল কবির ও দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আলতামাশ কবির মিশু আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চায়। একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান করে ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর বিজয়টা যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। রাতদিন নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। উঠান-বৈঠক, মার্কার প্রচারণায় ছোট ছোট মিছিল স্লোগানের পাশাপশি ভোটারদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। তবে এই দিক দিয়ে বিএনপি রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে।
গত মঙ্গলবার ড. মঈন খান নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে প্রচারণায় বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়। এতে প্রথম দিনেই বাধার মুখে পড়তে হয় দলটির নেতাকর্মীদের। নির্বাচনের বাকি দিনগুলো প্রচারণায় অনেকট সংশয় প্রকাশ করছেন দলের অনেক নেতাকর্মী। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, পলাশে মঈন খানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগ মঈন খানের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে তারা আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধার সৃষ্টি করছে। কোনো অপশক্তি আমাদের রুখতে পারবে না। সাধারণ জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে মঈন খান এই আনটিতে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবির মৃধা জানান, মঈন খানের সাথে নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার মতো একমাত্র যোগ্য প্রার্থী দিলিপ। দিলিপকে মনোনয়ন দিয়ে দলের সভানেত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সবার চাওয়া পূরণ করেছেন। এখন আমরা নরসিংদী-২ আসনটি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করে নেত্রীকে উপহার দেবো। বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে বাধার বিষয়ে তিনি জানান, তাদের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী বাধা দিচ্ছে না। বরং তাদের দলের নেতাকর্মীরাই আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement