২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদত্যাগী ৪ মন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ

-

গতকাল সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘অ্যাডেমডাম টু দ্য প্রোটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’-এর খসড়ার ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে গত মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। পরের দিন সকালে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে দেখা করতে গেলে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর থেকে তারা মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন।
সংবিধানের ৫৮ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রীর পদশূন্য হবে- যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পদত্যাগের পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা বা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশগ্রহণ করা অসাংবিধানিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণমাধ্যমের খবর যদি সত্যি হয় তাহলে তাদের পদত্যাগ হয়ে গেছে। সাংবিধানিক পদে যারা থাকেন তাদের পদত্যাগ করলে সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে কি হবে না সেই সুযোগ নেই। পদত্যাগপত্র দেয়া মাত্রই সেটি কার্যকর হয়ে যাবে। এরপরও যদি কেউ মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন সেটি সাংবিধানিক হবে না।
উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৪ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে আওয়ামী লীগের ১৪৭ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছিলেন। তখন স্পিকার তাতে অনুমোদন দেননি। পরে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ রেফারেন্স পাঠান। সর্বোচ্চ আদালত তখন বলেছিলেন, এমপিদের পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে পৌঁছামাত্র তা আপনা আপনি কার্যকর হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, পদত্যাগ করা চার মন্ত্রী আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন। উনারা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া পর্যন্ত উনারা মন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন। এ জন্য তারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ রদবদলের পর ৩০ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে কেবল পদত্যাগী চারজনই ছিলেন টেকনোক্র্যাট।
এদের মধ্যে চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম বিএসসি ও ময়মনসিংহের মতিউর রহমান আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। জোটের স্বার্থে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে দুইজনকেই নিজ নিজ আসন ছেড়ে দিতে হয়েছিল। প্রকৌশলী ইয়াফেস ওসমান শুরু থেকে মন্ত্রিসভায় থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার চলতি বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিভেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে চূড়ান্ত সংলাপে বসার আগের দিনই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশ অনুসারে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তারা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেয়া হয় সর্বদলীয় সরকার।
এবার নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে গত মাসে আবার সেই ঘোষণা থেকে সরে এসে মন্ত্রিসভায় বড় কোনো পরিবর্তন না আনার ইঙ্গিত তিনি। কিন্তু তফসিলের আগে হঠাৎ করেই তিনি বিরোধী দল ও জোটগুলোর সাথে সংলাপে বসতে সম্মত হন এবং চার মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
সচিবালয়ে গতকাল দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সংবাদ সম্মেলনে দুই আইনের খসড়া অনুমোদনের তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা এবং নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন ওয়ার্কের বাইরে অন্য কোনো কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চান তারা।
জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকে যে সরকার আছে, এটিই নির্বাচনকালীন সরকার। আর আইন পাসের ব্যাপারটি এই সরকারের রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement