২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এক পরিবারেই আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থী

সরব আওয়ামী লীগ, নীরব বিএনপি-জামায়াত

কক্সবাজার-৩ আসন
-

কক্সবাজার সদর সংসদীয় আসনটি (সদর-রামু) নানা কারণে বেশ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে পর্যটন শহর হওয়ার কারণে এটি ভিআইপি শহর হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এই আসনে সংসদ সদস্যের তাই আলাদা পরিচিতি থাকে। এই আসন থেকে প্রার্থী হতে প্রতিবারই অসংখ্য মুখ মাঠে সরব থাকেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। জোট মহাজোট থেকে তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। রয়েছে জামায়াতের প্রার্থীও। তাই স্বাভাবিকভাবে এই আসনে নির্বাচনের আমেজও অন্য রকম হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ছাড়াও এ আসনে নৌকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। এক পরিবার থেকেই তিনজন প্রার্থী হতে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। পরিবারটি হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলাম চৌধুরীর। অর্থাৎ বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের আপন ভাই ও বোন যথাক্রমে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছেন কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক। কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি কক্সবাজার শহরে অনুষ্ঠিত দলীয় কর্মিসভায় মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে তার সমর্থন ব্যক্ত করার পর নজিবুল ইসলামও মাঠে নেমে পড়েছেন। ওই সভায় হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে এখন এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সরব। অপর দিকে গায়েবি মামলা, গ্রেফতার আতঙ্ক ইত্যাদির মাঝে অনেকটা নীরব সময় যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের। তবে বাধা-বিপত্তির মাঝেও বিএনপিতে মাঠে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম রহিমুল্লাহ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ বাহাদুর। বিএনপির সাথে সমঝোতা না হলে এই আসনে জামায়াতও এককভাবে নির্বাচন করবেন। জামায়াতের ‘এ’ ক্যাটাগরির যে আসনগুলো তালিকায় রয়েছে তন্মধ্যে কক্সবাজার সদর আসনও রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে প্রকাশ। এই লক্ষ্যে মাঠে আছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ বাহাদুর। তাদের যেকোনো একজন প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপি ও জামায়াতের এসব প্রার্থী মামলা হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কের মাঝেও কৌশলে মাঠের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন। তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হলে কক্সবাজার সদর আসনের নির্বাচন হবে বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এ দিকে আওয়ামী লীগ থেকে আবারো মনোনয়ন পেতে চান বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তবে তার ঘরের মধ্যেই একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তিনি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থানে রয়েছেন। তার ভাই সোহেল সরওয়ার কাজলও কমলের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কাজল বলেন, তার নিজের পক্ষে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন রয়েছে। কমলের বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীও কমলের সমালোচনা করে বলেন, গত পাঁচ বছরে কক্সবাজারে সুশাসন নিশ্চিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সুযোগ-সুবিধা এমপিদের জন্য দিয়েছেন তার অর্ধেকও কক্সবাজার-রামুতে বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তাই আমি মাঠে কাজ করছি। সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘গত দুইবার পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছি। সব সময় জনগণের সাথে থেকেছি। উন্নয়নই আমার রাজনীতি। গত পাঁচ বছরে শিক্ষা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই আমার বিশ^াস নেত্রী এবারো আমাকে মনোনয়ন দেবেন। তথ্য মতে, ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীক দেয়া হয় বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সে সময় নির্বাচনে কক্সবাজার সদর-রামু আসনে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল। সাইমুম সরওয়ার কমল পান ৮৬ হাজার ৫৩৬ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। যদিও সেই নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল কানিজ ফাতেমা মোস্তাককে কিন্তু বিদ্যুৎ বিল খেলাপি হওয়ায় বাতিল হয়ে যায় তার মনোনয়নপত্র। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার বিষয়ে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘কে মনোনয়ন পাবেন তা একমাত্র জানেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত আছি। আমাদের উদ্দেশ্যে হলো নৌকাকে বিজয়ী করা।
এ দিকে এই আসনে আগের মতো বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল তার প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত ধরে কাজ করলেও এবার দলের মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান। সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ১০ বছর ধরে এবং বিশেষ করে গত পাঁচ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের চরম দুঃসময়ে পাশে থেকে নেতাকর্মীদের সমর্থন ও ভালোবাসা আদায় করেছেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান। নেতাকর্মীরা তাকেই বেশি কাছে পেয়েছেন। তাই ধানের শীষ নিয়ে অধ্যাপক আজিজ মাঠে এলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তা ছাড়া এলাকায় তার বিশাল আত্মীয়স্বজনের সার্কেল রয়েছে। এটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন যেসব নেতার নামে এই সরকারের এই আমলে একটি জিডিও হয়নি তারা কেন দলের মনোনয়ন পাবেন? এসব আপসকামী নেতাদের নামে বিগত ১২ বছর ধরে থানায় মামলা তো দূরের কথা একটি জিডিও হয়নি। তাদের তৃণমূল নেতারা চান না। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ ও সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল আমিনের মতে, অধ্যাপক আজিজ দুঃসময়ে দলের কাণ্ডারি হিসেবে কক্সবাজারে নেতকর্মীদের পাশে রয়েছেন, খোঁজখবর রাখছেন এবং প্রয়োজনে সহযোগিতাও দিচ্ছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে দল লাভবান হবে বেশি এবং একজন যোগ্য প্রার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন হবে বলে কক্সবাজারের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস। তারা বলেন, অধ্যাপক আজিজ একজন সুপরিচত মুখ, ভালো বংশের সন্তান। রামু উপজেলার মাছুয়াখালী সিকদারপাড়ায় তার জন্ম। সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক খালেকুজ্জামান এবং প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান তার জেঠাতো ভাই। তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে রামু কক্সবাজারে। সেই সুবাদে এলাকায় অধ্যাপক আজিজের বিশাল পরিচিতি রয়েছে এবং এটাকে কাজে লাগিয়ে তার বিজয়ও সহজ হবে। সে কারণে এবার কক্সবাজারের বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা অধ্যাপক আজিজকেই দলের প্রার্থী হিসেবে চায় বলে জানান হারুন ও নুরুল আমিন। রামু উপজেলা নেতা মনসুর উল হক জানান, অধ্যাপক আজিজ সাংগঠনিকভাবে সব সময় তৃণমূল নেতাদের পাশে রয়েছেন। রামুর ১১টি ইউনিয়নে তিনি সংগঠনকে গুছিয়ে আনতে বিরাট অবদান রেখেছেন। গেল বর্ষায় বন্যার সময় তিনি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে রামুর বন্যাকবলিত এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। নেতাকর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই তুলনামূলকভাবে অধ্যাপক আজিজই এখন দলের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। তার বিশ্বাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মাঠের সর্বশেষ অবস্থার খবর নিয়েই এবার অধ্যাপক আজিজের হাতে ধানের শীষ তুলে দেবেন।
তবে জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক ইউছুপ বদরী বলেন, বিএনপি নেতা লুৎফুর রহমান কাজলই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তিনি অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে মাঠ ধরে রেখেছেন। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৬২ হাজার ৬৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৬ হাজার ৯৯ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৩৭ জন। কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ৮৩৫ জন। রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৩৯ হাজার ৮১০।


আরো সংবাদ



premium cement