২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন পরিকল্পিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন
-

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযানে মিয়ানমারের পরিকল্পিত ও সমন্বিত নৃশংসতার অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাখাইন পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করা হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভিত্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও কংগ্রেস এসব তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
তবে মার্কিন প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়নি। দেশটির কর্মকর্তাদের মতে, এ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনে প্রচণ্ড বিতর্ক রয়েছে এবং সে কারণে প্রতিবেদনটি প্রকাশে মাসখানেক দেরিও হয়েছে।
২০ পাতার এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইনে চূড়ান্ত ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত সহিংসতা পরিচালিত হয়েছে, যা তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। সামরিক অভিযানের ব্যাপ্তি ও পরিসর আভাস দিচ্ছেÑ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান ছিল পরিকল্পিত ও সমন্বিত।
এ দিকে গতকাল নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে রাখাইন নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার উপায় নিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের উদ্যোগে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের দায় এড়াতে পারে না। জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন রাখাইনে নৃশংসতার সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে। এটা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল না; সেনাবাহিনীই এই কাজ করছে। রোহিঙ্গারা শুধু থাকার জন্য একটি জায়গা চেয়েছিল।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো সামনে এগোনোর এটাই সময়। তথ্যানুসন্ধান মিশন যাতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাদের প্রতিবেদন উত্থাপন করতে পারে, সে জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সাথে আমি আলোচনা করেছি।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধের সাথে জড়িতরা যাতে পার না পায় তা মিয়ানমার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রাখাইনে নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি গঠনমূলক ছিল। এখন সামনে কি হয় তা দেখার পালা।
জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান মিং অং এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মিয়ানমারে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার জাতিসঙ্ঘের নেই।
রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা দ্বিগুণ করল যুক্তরাষ্ট্র : বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে নিকি হেলি বলেন, য্ক্তুরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত ১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেবে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার যাবে বাংলাদেশে। এটা নিয়ে গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ৩৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement