২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আ’লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ হাফ ডজন প্রার্থী সরব

মামলা হামলায় দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি চুয়াডাঙ্গা-২ আসন
আ’লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ হাফ ডজন প্রার্থী সরব - ছবি : সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। এক বছর ধরে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন প্রার্থীর মাঠে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখনো নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই দলে নবাগত। আওয়ামী লীগের নবাগত এই তিনজন নেতা কর্মীদের মধ্যে বেশ অর্থ ব্যয় করছেন। এই কারণে অনেক নেতাকর্মী তাদের পিছে ছুটছেন। বেশির ভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী বিভিন্ন জনসভা ও পথসভায় বর্তমান এমপির নেতিবাচক কাজের সমালোচনায় মুখর। তারা বলছেন, বিগত ১০ বছরে এই আসনে কোনো উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে এমপি আলি আজগর টগর ও তার স্বজনদের। তবে এমপি টগর এটি অস্বীকার করে বলেছেন, বিএনপি ও তার দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নবাগত কিছু আওয়ামী লীগার আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যে কেউ আওয়ামী লীগে মনোনয়ন চাইতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকায় নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে বলেছেন। তবে কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি না বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।

অন্য দিকে বিএনপির দুইজন ও জামায়াতের একজন প্রার্থী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মামলার ভয়ে তারা কেউই গণসংযোগ করতে পারছে না বলে জানান। শুধু ব্যানার ফেস্টুন টাঙানোর মধ্যেই তাদের রাজনীতি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপির মাহমুদ হাসান খান বাবু ১০ বছর ধরে মাঠে রয়েছেন। এই কারণে দল ও দলের বাইরে তার রয়েছে আলাদা ধরনের জনপ্রিয়তা। বিএনপির হেভিওয়েট এই নেতা মাহমুদ হাসান খান বাবু দলীয় টিকিট পেলে আওয়ামী লীগের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে বলে একাধিক নেতা জানান।

এ দিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে যেভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত, তাতে দিনে দিনে বিএনপির অবস্থান সুদৃঢ় হচ্ছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগর টগর, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল মল্লিক, হাশেম রেজা ও সাদিকুর রহমান বকুল। আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ জেলা বিনএপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান খান বাবু, জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমিন।

দামুড়হুদা, জীবননগর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর, তিতুদহ ইউনিয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১৪ হাজার ৮৮৯। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ আট হাজার ১৭০ এবং মহিলা দুই লাখ ছয় হাজার ৭১৮। আসনটি এক সময় বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসনটি নিজেদের কবজায় নেয়। তাই হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ আসনটি ধরে রাখতে চায়। কিন্তু প্রার্থী জট সৃষ্টি হওয়ায় নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দে¦ রয়েছেন, যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে দলটির পক্ষে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হন জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান। তাকে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রথম বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মহাজোট প্রার্থী শিল্পপতি আলী আজগর টগর। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ : আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ছয় প্রার্থী মাঠে থাকায় কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি হাজী আলী আজগর টগর। তিনি বলেন, এলাকায় দু’টি ফায়ার ব্রিগেড, ৫০ শয্যার দু’টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৭০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এক সময় এখানে সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মানুষ এখন দরজা খুলে ঘুমাতে পারে। বড় এই দলে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চাইতেই পারে। তবে দলে নবাগত দুই-একজন বলে বেড়াচ্ছেন ১০ বছরে এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিএনপি ও জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা মাঠে রয়েছে। আমি তাদের বলব, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উন্নয়ন করেছে সেটি জনগণকে জানান আর নৌকার পক্ষে ভোট চান। নৌকার টিকিট যেই পাক, আমরা তার পক্ষে কাজ করব।
জেলা আওয়ামী লীগে যে কয়েকজন স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতা রয়েছেন মাহফুজুর রহমান মনজু তাদের মধ্যে অন্যতম। চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, আওয়ামী লীগের টিকিটে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। তবে পেশিশক্তি ও কালো টাকার জোরে আমাকে কৌশলে হারিয়ে দিয়েছে দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি গোষ্ঠী। জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে আমি ভূমিকা রেখেছি। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, দলীয় নির্দেশ অমান্যকারী, জনবিছিন্ন কোনো সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাবেন না। সাধারণ জনগণ আমার পাশে রয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি নিশ্চিত জয়লাভ করব।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ এবারো মনোনয়ন চাইবেন। তবে তাকে গণসংযোগ ও মাঠে-ময়দানে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় দৈনিক আমার সংবাদের সম্পাদক হাশেম রেজা। তিনি প্রায় বছর খানেক আগে থেকে পথসভা গণসংযোগ করে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টারে চুয়াডাঙ্গা আসেন। এই কারণে তিনি মানুষের নজর কেড়েছেন। সাদাসিধে এই মানুষটি এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে দানের হাতও প্রসারিত করেছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক হাশেম রেজা বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আলি আজগর টগর এলাকার হাট-ঘাট বিল দখল করেছেন। ব্যাপক টেন্ডারবাজি করে নিজের ও স্বজনদের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সেই কারণে জনগণ তাকে আর চায় না। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাব।

অনেকটা হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছেন ডায়মন্ড ব্যবসায়ী নজরুল মল্লিক। আলোচিত সমালোচিত এই নজরুল মল্লিক ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে নিজেকে আসীন করেছেন। তিনিও নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন। প্রতিটি শোডাউন ও পথসভায় বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। নজরুলের প্রোগ্রামে হাজির হলেই মিলছে টাকা। সেই কারণে অনেকে তার প্রোগাম মিছ করতে চাচ্ছে না। নজরুল মল্লিক বিভিন্ন জনসভায় আলি আজগর টগর এমপির কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি এমপিকে মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদার বলে আখ্যায়িত করছেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মদনা-পারকেষ্টপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম বলেন, শুনেছি নজরুল মল্লিককে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে কো-অপ্ট করা হয়েছে। তার আগের ইতিহাস ঘাটলে আপনারা জানতে পারবেন তিনি কেমন মানুষ। তিনি বিশিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। যার দলে প্রাথমিক সদস্য পদ নেই তাকে জনগণ কখনো গ্রহণ করবে না।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু-কিশোর মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান বকুল সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। জাতীয় দৈনিক আজকের নতুন খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক বকুল ব্যতিক্রমী কায়দায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু-কিশোর মঞ্চ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৮ চালু করেছেন। সেখানে উপস্থিত ফুটবল অনুরাগীদের মধ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মাঝি হতে চান। সে জন্য এলাকাবাসীর দোয়া প্রার্থনা করছেন।

বিএনপি : সারা দেশে বিএনপির যে কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন মাহমুদ হাসান খান বাবু অন্যতম। কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। এরই মধ্যে তিনি এলাকায় ক্লিন রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি এলাকায় দলীয় কার্যক্রমে নিজের অবস্থান মজবুত রেখেছেন। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে রয়েছেন। নেতাকর্মীদের যেকোনো সমস্যা তিনি মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং নিরসনের চেষ্টা করেন। দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগও তিনি গ্রহণ করেছেন। মাঝে মধ্যে তিনি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা এসে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিজিএমইর সহসভাপতি রাইজিং গ্রুপের এমডি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসন বিএনপির ঘাঁটি। হারিয়ে যাওয়া আসনটি ফিরে পেতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ১০ বছর ধরে মাঠে কাজ করছি। তবে পুলিশি বাধা মামলার ভয়ে আমরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও জনসভা করতে পারছি না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করছি। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমার জয় সুনিশ্চিত।

জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঝে মধ্যে পথসভা করছেন। ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে চাচ্ছেন জনগণের দোয়া।

জামায়াত : জেলা জামায়াত সেক্রেটারি রুহুল আমিন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে জনগণের মধ্যে নিজেকে জানান দিচ্ছেন। জামায়াত দলীয়ভাবে রুহুল আমিনকে প্রার্থী মনোনীত করেছেন। এর আগে রুহুল আমিন ২০০৯ সালে জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। রুহুল আমিন বলেন, একত্রিত হয়ে পথসভা করার কোনো সুযোগ নেই। সেপ্টেম্বরে কড়াকড়ির মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। এই মাসে আমাদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা দেয়া হয়েছে। ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন না পেলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটি কেন্দ্র ঠিক করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement