০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঢাবিতে শোক দিবসের সভা শেষে ছাত্রলীগের মারামারি

-

শোক দিবসের আলোচনা সভায় আসা নেতাদের প্রটোকল দেয়ার সময় চেইন মেইন্টেন না করায় সভাশেষে নিজেদের মধ্যে মারামাতে জড়িয়েছেন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে নিজ সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা কেন্দ্রীয় সভাপতি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে এ ঘটনা ঘটে।
সকালে শোক দিবস উপলে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঞ্চালনায় এতে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, টিএসসি মিলনায়তনে সমাবেশ শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সাথে কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বের হয়ে যান। এতে পেছনে পড়ে যান ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত। এ দিকে নানকের সাথে বাকিরা থাকায় তাদের অনুসারীদের উপস্থিতিতে সেখানে বিরাট জটলা বেঁধে যায়। এ জটলার কারণে সনজিত টিএসসি থেকে বের হতে পারছিলেন না। বের হওয়ার সময় বিশ^বিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের একজনের ধাক্কা লেগে যাওয়ায় সনজিত তাকে থাপ্পড় দেন। পরে নানক চলে যাওয়ার পরে সনজিত কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভনকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনার ছেলেদের কোনো ‘ম্যানার’ শেখান নাই? তারা আমাকে বের হওয়ার জায়গা দেয় নাই কেন? এ সময় সূর্যসেন হলের আসলাম নামক একজন তার প্রতিবাদ করে বলেন, কী ম্যানার শেখাতে হবে? তখন সনজিত আসলামকে মারধর করেন। এর জের ধরেই পরে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীর মধ্যে মারামারি শুরু হয়। প্রায় ১৫ মিনিটের মতো তা অব্যাহত থাকে।
এ দিকে ছাত্রলীগের একটি বিশাল অংশের নেতাকর্মীদের মারামারির ফলে টিএসসি এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীসহ অনেককে এ সময় স্থান ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
এ সময় নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মারামারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভন লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েছেন বলে ছাত্রলীগের একটি সূত্রের অভিযোগ করেছে। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী শোভনকে জনতা ব্যাংকের সামনের দিকে নিয়ে আসেন। তবে নিজের লাঞ্ছনার বিষয়টি ছাত্রলীগ সভাপতি অস্বীকার করেন।
এ দিকে মারামারি সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, টিএসসি প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়ান। ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার চার নেতাকেই দেখা যায়। তাদের কাউকেই সংঘর্ষ থামাতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমি আর শোভন ভাই কথা বলছিলাম। এ সময় বাইরের কয়েকজন এসে সেখানে চিল্লাচিল্লি করছিল। আমরা তাদের চিনি না। কেউই চিনে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হতেও পারে নাও হতে পারে। আমি শিউর না। পোলাপানের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল, তারা ওদেরকে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের থামিয়ে দিয়েছি। পরে দুইজনকে মারধরের বিষয়ে জানতে তাকে আবার কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ দিকে কেন্দ্রীয় সভাপতির সাথে বিশ^বিদ্যালয় সভাপতি রূঢ় প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করে এ ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সংগঠনটির এক নেতা বলেন, সনজিত দা’র বোঝা উচিত ছিল তিনি এখন আর ছাত্রলীগের কোনো কর্মী নন। তিনি একটা ইউনিটের সভাপতি। তিনি আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারতেন। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে শোভন ভাইয়ের সঙ্গে সমাধান করা যেত। কেন্দ্রীয় সভাপতির সাথে এ ধরনের আচরণ খুবই লজ্জাজনক। নেত্রীর কাছে এটা ভালো ঠেকবে না।
এ দিকে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িতরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মী। তবে তিনি ঘটনাস্থলে নিজের উপস্থিতির বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে প্রমাণ সাপেক্ষে তা স্বীকার করে। এ বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, টিএসসিতে গোলযোগ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জুনিয়রদের মধ্যে মনে হয় কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে সিনিয়ররা কিছুই করেননি। আমরা তা দেখিনি। গোলযোগের সময়ে আমরা সেখানে ছিলাম না। আমরা আসার পরে তা হয়ে থাকতে পারে। ভিডিওতে আপনাদের দেখা যাচ্ছে এ কথা বললে তারপর তিনি উপস্থিতির কথা স্বীকার করেন। বলেন, সিনিয়ররা গিয়ে জুনিয়রদের শান্ত করেছে।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন জানান, তেমন কিছুই হয়নি। কিছুটা মনোমালিন্য ছিল হালকা। পরে ঠিক হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement