২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুরে বাসচাপায় স্কুলছাত্র জিয়নের মৃত্যু

বিক্ষোভ সামলাতে কালেক্টরেট স্কুল ছুটি ঘোষণা
রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ; ইনসেটে নিহত জিয়ন : নয়া দিগন্ত -

তোমাদের আর কত জিয়নের প্রাণ চাই। উই ওয়ান্ট টু নো। তোমরা ন্যায়ের পক্ষে থাকবে, যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখবে সেখানেই চরম আঘাত হানবেÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমরা পড়তে এসেছি মরতে নয়, নিরাপদ সড়ক চাই, যানবাহনের চাকার নিচে গণতন্ত্র নাই? এ ধরনের শত শত লেখা সাদাকাগজ হাতে নিয়ে সোমবার রাস্তায় পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বাধা উপেক্ষা করে নেমেছিল রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে নগরীর শুঁটকির আড়ত এলাকায় মহাসড়কে মিনিবাসের চাপায় এই স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ জিয়নের নিহতের ঘটনার সাথে জড়িত চালক ও হেলপারের ফাঁসিসহ চার দফা দাবিতে সোমবার সকাল থেকে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা সকাল পৌনে ৯টায় স্কুল থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ নিয়ে সেনপাড়া রোড দিয়ে জীবনবীমা ভবনের সামনে নগরীর প্রধান সড়কে অবরোধ করতে চাইলে তাতে বাধা দিয়ে পণ্ড করে দেয় পুলিশ। বিপুলসংখ্যক পুলিশ তাদের স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তারা স্কুলে প্রবেশ করেনি। শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে খারাপ মন্তব্য করলে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন পরিচালিত স্কুলটিতে ছুটে আসেন এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশ করাতে সক্ষম হন। শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করলে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বন্দী অবস্থাতেই বিক্ষোভ করতে থাকে। এরই মধ্যে বিক্ষোভ সামলাতে স্কুল ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে এনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে মানববন্ধন করার অনুমতি দেয়।
বেলা সাড়ে ১২টায় প্রধান ফটক খুলে দিলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় শিক্ষার্থীরা বের হয়ে ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তায় দুই পাশে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়। এ সময় সাদা কাগজে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করে। শিক্ষার্থীরা এ সময় জিয়ন হত্যাকারীদের ফাঁসি, কলেজের রাস্তায় দুই পাশে স্পিড ব্রেকার, ওভার ব্রিজ নির্মাণ এবং কলেজের রাস্তায় সকাল ৭টা থেকে ৯টা এবং ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভারী যান চলাচল না করার দাবি জানায়।
মানববন্ধনে উপস্থিত তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মাহবুব বলে, প্রত্যেকে আমরা ভাই ভাই। আমরা পড়তে এসেছি। কিন্তু কেন আমরা মরছি? আমরা মরতে চাই না। এ সময় একই দাবি জানায় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র অরিক, সাকির ও মোবাশ্বের।
মানববন্ধনে আর কত জিয়নকে প্রাণ দিতে হবে? প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সাথি জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে আমাদের এভাবে বাস চাপা দিয়ে মারা হবে। এটা হতে পারে না। এর প্রতিকার চাই।
‘অ্যাম আই দ্য নেক্সট’ প্লাকার্ড হাতে দাঁড়ানো দশম শ্রেণীর ছাত্রী জাফরিন শেখ জানায়, বাস-ট্রাক আর কত জিয়নকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিবে? আমরা এটা মানবো না। এটা হতে দিবো না। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র প্রান্ত জানালো, আমরা পড়তে এসেছি, মরতে নয়। আমরা আর লাশের পর লাশ চাই না। জিয়নকে যারা বাস চাপা দিয়ে মেরেছে তাদের ফাঁসি দিতে হবে।
এ ব্যাপারে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান, সহপাঠী জিয়ন নিহতের ঘটনায় ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছি। এরপর তারা মানববন্ধন করে বাসায় ফিরে গেছে। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। ইতোমধ্যেই আমরা বাসের চালক ও ড্রাইভারকে গ্রেফতার করেছি। তারা আইনের আওতায় এসেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন জানান, জিয়নের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা হত্যকারীদের ফাঁসি এবং বিভিন্ন দাবি প্রশাসনকে জানিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার কারণে স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে যথারীতি ক্লাস চলবে।
এ দিকে এ ঘটনায় ওই স্কুলের পাশের স্কুল সেনপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও স্কুল শুরু হওয়ার পরপরই ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়।


আরো সংবাদ



premium cement