২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন ও হ্রস্বতম রাত

-

উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন ও হ্রস্বতম রাতটি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ জুন)। গতকাল সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থান করায় এবং উত্তর মেরু সূর্যের দিকে কিছুটা হেলে থাকায় উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম দিন ও ুদ্রতম রাত্রি এবং দণি গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা ছিল। তবে দিনটি ২১ জুন বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘতম দিন ও হ্রস্বরাত ২০ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত চলতে থাকে। অপর দিকে ২২ ডিসেম্বর মকরক্রান্তি রেখার ওপর সূর্য অবস্থান করায় এবং উত্তর মেরু সূর্য থেকে কিছুটা দূরে হেলে থাকায় উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম রাত্রি ও ুদ্রতম দিন এবং দণি গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য নিররেখার ওপর অবস্থান করায় পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান (অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি) হয়।
এ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব পালন করা হয়। মধ্যগ্রীষ্ম উৎসব, এমনকি পশ্চিমা দেশে ২১ জুনে ধর্মীয় দিবসও পালন করা হয়। ইংল্যান্ডের স্টোনহ্যাঞ্জের মেগালিথিক কাঠামোর মধ্যে মানুষ জড়ো হয়ে উৎসব পালন করেন এ দিনে।
উত্তর মেরু এলাকায় এ দিনে মধ্যরাতেও সূর্য দেখা যায়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে নিশিথ রাতে দেখা মেলে সূর্যের। এ অবস্থাটা নরওয়েতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক বিশেষত গ্রিনল্যান্ড, রাশিয়া, আইসল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার কিছু অংশে মতো দেশগুলোতে। এ দেশগুলোতে সারারাত গোধূলির মতো আলো থাকে। সন্ধ্যায় সূর্য নিচে নামতে নামতে দিগন্ত রেখার দিকে পৌঁছায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে সূর্য অস্ত যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার সূর্য উদিত হয়। মধ্যরাতে খুব স্পষ্ট করে সূর্য দেখা দেখা যায় ২১ জুন। আবার রাশিয়ার মতো দেশে সূর্য অস্তই যায় না। বাংলাদেশের সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পর যে রকম আলো থাকে রাশিয়ার কিছু এলাকায় সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় এমন বিবর্ণ আলো বিচ্ছুরণের পর আবার সূর্য উদিত হয়ে দিনের শুরু হয়। বর্তমানে রাশিয়ার যে শহরে বিশ^কাপ ফুটবল চলছে সেখানকার দিন-রাতে এ অবস্থা চলছে। দক্ষিণ মেরুর আর্কটিক বৃত্তে এ সময়টাতেই পোলার নাইট বা মেরু রাত হয়ে থাকে। এ সময় পুরোটা সময় অন্ধকার থাকে। সূর্যের কোনো আলো দেখা যায় না। নরওয়েতে ৭০ দিন এবং ফিনল্যান্ডে চার মাস সূর্য অস্তমিত হয় না।
২১ জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি বৃত্তে অবস্থান করে। ক্রান্তি বৃত্তে সূর্যের এই প্রান্তিক অবস্থান বিন্দুকে বলা হয় উত্তর অয়নান্ত। দণি গোলার্ধে অবশ্য এর বিপরীত। এর পর থেকে দিন ছোট হতে থাকে আর রাত বড় হতে থাকে। অবশেষে ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য পুনরায় অবস্থান নেয় বিষুব বৃত্তের বিন্দুতে, যেখানে ক্রান্তি বৃত্ত ও বিষুব বৃত্ত পরস্পরকে ছেদ করেছে। একে বলা হয় ‘জলবিষুব বিন্দু’। এই দিন পুনরায় পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত সমান হয়ে থাকে। অতঃপর উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ রাত বড় হতে হতে সূর্য পৌঁছে যায় ক্রান্তি বৃত্তের দণি অয়নান্ত বিন্দুতে ২২ ডিসেম্বর। এ সময় উত্তর গোলার্ধে হয় দীর্ঘতম রজনী আর ুদ্রতম দিবস। এ সময় সূর্য মকর বৃত্তে অবস্থান করে থাকে। এখানে লণীয়, ২১ জুনের পর থেকে সূর্য রাশিচক্রে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে সরে আসতে আসতে ডিসেম্বর মাসে দণিতম বিন্দুতে (মকরক্রান্তি বিন্দু) উপনীত হয়। সূর্যের এই ছয় মাসব্যাপী দণি অভিমুখী অভিযাত্রাকে বলা হয়ে থাকে দণিায়ন। অন্য দিকে ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য পুনরায় রাশিচক্রে ক্রমশ উত্তর দিকে সরে গিয়ে জুন মাসে উত্তরতম বিন্দুতে উপনীত হয় (কর্কটক্রান্তি বিন্দু) সূর্যের এই ছয় মাসব্যাপী উত্তরাভিযানকে বলা হয় উত্তরায়ন।


আরো সংবাদ



premium cement