২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার সেবা দিচ্ছে হোটেল টাইগার গার্ডেন

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার সেবা দিচ্ছে হোটেল টাইগার গার্ডেন - নয়া দিগন্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চলে যেমন মেধার লড়াই, তেমনি থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াত নিয়ে চলে যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধে অংশ নেন সারাদেশের পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরাও। শনিবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে মানবিকতার ব্যতিক্রমী সেবা দিল নগরীর শিববাড়িতে অবস্থিত সেনাকল্যাণ সংস্থা পরিচালিত থ্রি স্টার মানের হোটেল টাইগার গার্ডেন। শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের যারা খুলনা শহরে থাকার জায়গা পাবেন না তাদের জন্যই ছিল এই ব্যবস্থা। হোটেলের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই সুযোগের কথা ঘোষণা করা হয়। গত ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কুয়েটে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরাদের এই সেবা দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

হোটেল টাইগার গার্ডেন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছর সারাদেশ থেকে পরীক্ষা দিতে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান হওয়ার মতো আবাসিক হোটেল খুলনাতে কম। এসময় পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থ ও অভিভাবকেরা রাতে থাকার জায়গা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক সময় অনিদ্রায় যেখানে-সেখানে রাত কাটাতে হয়। অনেকে থাকার জায়গা না পেয়ে বাসস্ট্যান্ড বা রেলস্টেশনেই রাত কাটান। পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতেই আমাদের এই ব্যবস্থা। খুবিতে পরীক্ষা দিতে আসা প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আমাদের হোটেলে অবস্থান করেছেন। কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার সময়ও ৮শ’র মত পরীক্ষার্থীকে আমরা ফ্রি সেবা দিয়েছি। পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকোয়েট হলের পাশাপাশি নারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় হোটেলটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনভেনশন হলে।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর সরেজমিনে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীরা ফ্লোরে নরম বিছানায় কেউ বসে আবার কেউ বা শুয়ে বই নিয়ে লেখা-পড়ায় ব্যস্ত। ফ্লোর হলেও হোটেলের সাধারণ কক্ষের মত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ছিল। পড়াশোনার জন্য উন্মুক্ত থাকে হোটেলের লবি থেকে শুরু করে সব জায়গা। এমন ব্যবস্থাপনায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

ঢাকার টঙ্গী থেকে আসা ভর্তি পরীক্ষার্থী সুরাইয়া আফরিন পলি বলেন, এটি মানবিকতার বড় দিক। খুলনায় কোনো হোটেলেই থাকার জন্য সীট পায়নি। এমনকি কোন আত্মীয়-স্বজনও এখানে থাকেন না। ফেসবুকের মাধ্যমে এ সুযোগের বিষয়টি জানতে পেরে মাকে নিয়ে এখানে আছি। বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশ পেয়ে তিনি মুগ্ধ।

পাবনা থেকে আসা পরীক্ষার্থী সালমান তোহা বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেলে পরীক্ষার্থীদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আসলেই ব্যতিক্রম।

বগুড়া থেকে আসা বখতিয়ার বলেন, রাতে কোথায় থাকবো তা নিয়ে ছিল অনিশ্চিয়তা। হোটেলটির ব্যবস্থাপনা সত্যিই ভালো লাগলো। ঢাকা থেকে পরীক্ষার্থী তাসনিয়া মাহির সঙ্গে আসা তার মা সাবেকুন নাহার এ আয়োজনে জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হোটেল টাইগার গার্ডেনের প্রকল্প প্রধান মেজর (অবঃ) শহীদুজ্জামান শাহীন জানান, আমরা পাঁচ বছর ধরে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবছর পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে আয়োজনের পরিসর বাড়ছে। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তো সবসময় ব্যবসাই করি। কিন্তু মানুষ তো মানুষের জন্য। আর আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতাও তো আছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা জীবনে অনেক কষ্ট করেন। তাদের সময় যখন আমরা ছিলাম সেটা আমরাও করেছি। তাই তাদের সংগ্রামটা বুঝি। এসব কিছু মিলিয়ে এই উদ্যোগটা নিয়েছি। এসব শিক্ষার্থীদের উন্নত ক্যারিয়ারে আমাদের যদি সামান্য অবদান থাকে আমরা তাতেই খুশি।


আরো সংবাদ



premium cement