৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অধরা সুন্দরবনে ১০ ভাসমান হাসপাতাল

-

সুন্দরবন এলাকায় স্বাস্থ্য সেবায় প্রস্তাবিত ১০টি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপন দীর্ঘ ২২ বছর পার হলেও আজো অধরা রয়ে গেছে। বনের অভ্যন্তরে কর্মরত বাওয়ালি, জেলে, মৌয়াল, বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের দাবি দীর্ঘ প্রায় ২২ বছরের। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় বনের ভেতর এবং সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষ পাচ্ছেন না ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে ওই এলাকার মানুষদের মৌলিক মানবাধিকার।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়,এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৯৯৫ সালে সুন্দরবন বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রজেক্ট (এসবিসিবি) বা জীববৈচিত্র সংরক্ষণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের খালি জায়গায় বাগান স্থাপন, বিদ্যমান বাগানের উন্নয়ন ও বনের ওপর থেকে চাপ কমাতে বনজীবীদের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করার চিন্তা করা হয়। একই প্রকল্পের অধীনে সুন্দরবন অঞ্চলে ১০টি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বন বিভাগের যথাযথ ভূমিকার অভাবে এডিবি অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ফলে ২০০৩ সালে গোটা প্রকল্পই মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৬ সাল নাগাদ প্রকল্পের সকল কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়। আর সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ভাসমান হাসপাতাল ও বনাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগ মিলিয়ে পুরো সুন্দরবন থেকে নিকটবর্তী শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর দূরত্ব প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সেকেলে। ফলে বনের অভ্যন্তরে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ৭০-৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসার জন্য আনার সময় পথে কেউ কেউ চিকিৎসার অভাবে মারাও যাচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, বনের ভেতর কর্মরত কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার চিকিৎসা সেবার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এসব মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে দীর্ঘদিনেও গড়ে ওঠেনি কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের ভেতরে কর্মরত বন বিভাগের মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বনজীবী মানুষ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা যান। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষই বনবিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মী।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, বনবিভাগের মাঠকর্মী ছাড়াও জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ বিভিন্ন শ্রেণির বনজীবী মানুষ বিভিন্ন সময় জরুরি চিকিৎসার অভাবে মারা যান। এছাড়া সুন্দরবনের ভেতর সপরিবারে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিবারিক সদস্যরা হঠাৎ করে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়লে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এক কথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই তাদের সপরিবারকে সেখানে থাকতে হয়।
সুন্দরবনের কাছের মোংলার চিলা ইউনিয়নের বৈদ্যমারী গ্রামের ইস্রাফিল শেখ বলেন, আমার এলাকায় বিপুল সংখ্যক জেলে রয়েছেন, যাদের জীবিকার সংস্থান আসে সুন্দরবন থেকে। তারা ১২ মাসই বনের ভেতরে নদীতে পড়ে থাকেন। হঠাৎ অসুখ-বিসুখে পড়লে সেখানেই তাদের অনেককে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। দুবলার চরের জেলে আবুল বাশার ব্যাপারী বলেন, মাছ ধরার জন্য চরে ছয় মাস থাকি। এজন্য আমাদের কাছ থেকে রাজস্ব নেয় বনবিভাগ। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ বা আহত হলে হাতুড়ে চিকিৎসা ছাড়া ভালো কোনো স্বাস্থ্য সেবা মেলে না।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের ভেতর হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দূরবর্তী এলাকায় বনরক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এই মুহূর্তে ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণে বনবিভাগের কোনো পরিকল্পনা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement