১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


স্বা স্থ্য ত থ্য

-

আখের রসের গুণাগুণ
এখন আখের মওসুম, তাই বাজারে প্রচুর আখ বা ইক্ষু পাওয়া যায়। আখের রস অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী। তাই বলে রাস্তায় আখ মাড়াই করে বরফ মিশিয়ে যে শরবত বিক্রি হয় তা কিন্তু জীবাণুমুক্ত নয়। এ থেকে বিভিন্ন রকম জীবাণু পেটে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে। সেজন্য আখের সরাসরি ওপরের শক্ত অংশ ফেলে দিয়ে চিবিয়ে রস খাওয়া উচিত। আখ জন্ডিসের ওষুধ। জন্ডিস হলেই আখের রস খেতে হবে এ ধারণা সবার মধ্যেই আছে। জন্ডিস হলো লিভার ও রক্তের অসুখ। এতে চোখ, ত্বক ও প্রস্রাব হলুদ হতে শুরু করে। জন্ডিস হলে সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে, যাতে আমিষ ও তৈলাক্ত খাবার কম থাকবে। বেশি পরিমাণে শর্করা যেমনÑ গ্লুকোজ, ভাত, বালি, সাগু, ডাল, ফলমূল ইত্যাদি। আখের রসে শর্করার আধিক্য থাকায় জন্ডিস রোগীদের উপযুক্ত খাদ্য। আখের রসের সাথে মধু, ডালিমের রস এবং আমলকীর রস মিশিয়ে খেলে জন্ডিস দ্রুত নিরাময় হয়। আখের রস রোগীর প্রস্রাব পরিষ্কার করে, চোখের হলদেটে ভাব দূর করে, হাত-পা, চোখ জ্বালাপোড়া উপশম করে। আখের রস পিত্তনাশক। হেঁচকি ওঠা বন্ধ করে। তা মিষ্টি হলে তার উপকার বেশি পাওয়া যায়।

ডালিমের পুষ্টিকথা
ডালিম অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে এর উৎপাদন বেশি হয়। ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস যা কমলা, আপেল ও আমের চেয়ে চারগুণ বেশি। আতাফল ও আঙ্গুরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি এবং কুল ও আনারসের চেয়ে ৭ গুণ বেশি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম আহারোপযোগী ডালিমে রয়েছেÑ শর্করা ১৪.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মি. গ্রা., ফসফরাস ৭০ মি.গ্রা., আয়রন ০.৩ মি.গ্রা., ভিটামিন-বি ০.০৬ মি.গ্রা., ভিটামিন-বি ০.১ মি.গ্রা., নিয়াসিন ০.৩ মি.গ্রা., ভিটামিন-সি ১৪ মি.গ্রা., খাদ্যশক্তি ৬৫ কিলোক্যালরি। তবে ডালিমের এই পুষ্টিমান জাত, উৎপাদনের স্থানের ওপর হেরফের হতে পারে। ডালিমে রয়েছে উপকারী উপাদান ফাইটোকেমিক্যালস, যা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আজকাল বিজ্ঞানীরা ডালিমের পুষ্টিগুণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, ডালিম রক্তের এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা রক্তনালীতে জমা হয়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ডালিমের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ভেষজ গুণও রয়েছে। ডালিমের খোসায় রয়েছে অ্যাসট্রিনজেন্ট নামের এক ধরনের ফাইটোক্যামিক্যালস। এর খোসা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি সর্দি, গলায় খুসখুসে কাশি, গলাব্যথায় পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় ও পেটের নানাবিধ সমস্যায় ডালিমের রস উপকারী। এর গুণাগুণ চিন্তা করে অপেক্ষাকৃত সস্তা এ ফলটিকে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

নারিকেলের পুষ্টিগুণ
নারিকেল অত্যন্ত সুস্বাদ, পুষ্টিকর ও মুখরোচক ফল। নারিকেল ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই অতিপরিচিত এবং সমাদৃত ফল। গ্রাম ও শহরে প্রায় প্রতি বাড়িতেই কম-বেশি নারিকেল গাছ রয়েছে। নারিকেলকে তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছেÑ ডাব, দুমড়ো ও ঝুনো। ডাব হচ্ছে নারিকেলের প্রাথমিক অবস্থা। ডাবের পানি আমরা খাই। এটা প্রকৃতির বিশুদ্ধতম পানি। এতে কোনো দূষণ থাকে না। ডাবের পানি রোগীদের জন্য নিরাপদ পানীয়। ডায়রিয়া, কলেরা, হৃদ রোগী, বসন্ত রোগী প্রভৃতির জন্য ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী। ডাবের ভেতর যখন ৬০ শতাংশ নারিকেল আসে তখন একে দুমড়ো নারিকেল বলে। যখন ১০০ শতাংশ নারিকেল এসে যায় তখন বাইরের অংশ শুকাতে থাকে। এই পর্যায়কে ঝুনো নারকেল বলে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী ঝুনো নারিকেলের শাঁসে রয়েছেÑ শর্করা ১৮.৪ গ্রাম, স্নেহ ৬২.৩ গ্রাম, আমিষ ৬.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০ মি.গ্রা., লৌহ ২.৭ মি.গ্রা., অন্যান্য খনিজ ১.৬৫ গ্রাম, ভিটামিন-বি ৬.০৮ মি.গ্রা., ভিটামিন-বি ০.০১, ভিটামিন-সি ৭ মি.গ্রা., আঁশ ৬.৬ গ্রাম, জলীয় ৪.৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬.১ কিলোক্যালরি। নারিকেলে মিনারেলসের পরিমাণ খেজুর বাদে অন্য সব ফলের চেয়ে বেশি। নারিকেলে প্রচুর ক্যালরি থাকায় দৈহিক শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। নারিকেলের তৈরি বিভিন্ন পিঠা, পায়েস, তকতি, মোয়া, মুখরোচক এবং সবার সমাদৃত। নারিকেলের তেল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রস্রাবের পীড়ায় ডাবের পানি খুবই উপকারী।

মাছের বিকল্প
হৃৎপিণ্ডের উপকারী চর্বি হচ্ছে ওমেগা৩ ফ্যাট। মাছেই রয়েছে এর উৎকৃষ্ট ঠিকানা। কিন্তু সবাই মাছ পছন্দ করেন না। যারা পছন্দ করেন না, তাদের জন্য রয়েছে দু’টি বিকল্প। প্রথমত, কিছু উদ্ভিদে এই ফ্যাট পাওয়া যায়। যেমন ফ্ল্যাক্সসিড, সরিষার তেল, আখরোট ইত্যাদি। তবে মাত্র ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে এই তেল ওমেগা৩ ফ্যাটে পরিণত হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন এগুলোর যেকোনো একটি উৎস থেকে কিছু গ্রহণ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, মাছের তেলের ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন। তবে কারো কারো কাছে এই ক্যাপসুল থেকে মাছের স্বাদ পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। তাই রাতে শোয়ার আগে গ্রহণ করলে এমনটি হবে না।

ঠাণ্ডায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, খুব শীতল আবহাওয়ায় কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি খুবই প্রবল। ফ্রান্সের বুর্গুন্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়, যা একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য খুবই ভয়াবহ। এপি’র রিপোর্ট অনুসারে ৭৪৮টি হার্ট অ্যাটাকের ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাপমাত্রা খুব নেমে গেলে তখনই হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশি ঘটেছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ছিল তাদের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা বেশি ঘটায় এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে গেলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি মাত্রায় দেখা দেয়।

যে কারণে ছেলে কিংবা মেয়ে হয়
পিতার শুক্রাণু ও মায়ের ডিম্বাণুর মিলিত ফল হচ্ছে একটি ‘শিশু’। আর এই সন্তান কি ছেলে, নাকি মেয়ে এটা পুরোপুরি নির্ভর করে বাবার শুক্রাণুর ওপর।
প্রশ্ন হলোÑ বাবার শুক্রাণুর কারণে এমনটি কিভাবে হয়?
হ্যাঁÑ আমরা জানি, একজন মহিলা ডিম্বাণুতে থাকে 'ীী' ক্রোমোজোম, আর একজন পুরুষের শুক্রাণুর ক্রোমোজোম হচ্ছে 'ীু' অর্থাৎ ১টা 'ী' এবং অন্যটি 'ু' ক্রোমোজোম। এখন গর্ভধারণ করতে হলে 'ীী' ক্রোমোজোমের যেকোনোটিকে 'ীু' ক্রোমোজোমের যেকোনোটির সাথে সংযোজন হতে হয়। অতএব, মাসিক চক্রের উর্বর সময়ে অর্থাৎ যে সময় রতিক্রিয়া সম্পাদন করলে সন্তান পেটে আসে তখনÑ
যদি বাবার 'ু' ক্রোমোজোম, মায়ের 'ী' ক্রোমোজোমের সাথে মিলিত হয়, তাহলে যে ভ্রƒণের সৃষ্টি হয় তা পরবর্তী সময়ে জন্মলাভ করে পুত্রসন্তান রূপে।
অতএব, পুত্র কিংবা কন্যাসন্তান জন্মানোর বিষয়টি এখনো নিয়তিনির্ভর। হয়তো ভবিষ্যতে এমন কোনো উপায় আবিষ্কৃত হবে, যার মাধ্যমে আমরা ইচ্ছামতো এই 'ী' ও 'ু' ক্রোমোজোমের সংযোজন ঘটাতে সক্ষম হবো।

ক্লান্তিদূর করতে শাকসবজি
মূলত শরীরে লৌহের ঘাটতি দেখা দিলেই শরীর ক্রমান্বয়ে অবসন্ন, নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মানুষ তার কর্মশক্তি, তেজ ও প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে মানুষ তার অধিক সচেতন ও জীবনী শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী রাখতে পারে না। আর লৌহই শরীরে তেজশক্তি দানের জন্য অক্সিজেন বহন করতে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করে। এ ছাড়াও এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক কেমিক্যাল বৃদ্ধি করে, যা মস্তিষ্কের সতর্কতা বাড়ায়। আয়রন ঘাটতি পুরুষের চেয়ে মহিলাদের বেশি প্রভাবিত করে। কারণ তাদের মাসিকের সাথে প্রচুর লৌহ ক্ষয় হয়। আর শরীরে আয়রন সরবরাহ বেশ কঠিন কাজ। কারণ খাবারে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা আয়রন বা লৌহ শোষণকে বাধাগ্রস্ত করে; যেমনÑ চা, কফি, ডিমের কুসুম ও সয়া। তা ছাড়া ব্যায়ামও শরীরে আয়রনের স্তরকে কমিয়ে ফেলে। কিন্তু ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করে। আর লৌহ বা আয়রনের উত্তম উৎস হলো গাঢ় সবুজ শাকসবজি।
ডা: জ্যোৎস্না মাহবুব খান


আরো সংবাদ



premium cement