২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলনেও শঙ্কায় কৃষক তামাকের মতো নগদমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে চান চাষি

-

দেশে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ছাড়িয়েছে সর্বকালের সব রেকর্ড। উৎপাদনের দিক থেকে গমকে ছাড়িয়ে গেছে বহুগুণে গুণান্বিত এ ভুট্টা। বিশেষ করে দেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় এ বছর ভুট্টার চাষ ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ বছর সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও উৎপাদিত ভুট্টার উপযুক্ত দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা কাজ করছে কৃষকদের মধ্যে। তাদের দাবি, তামাকের মতো ভুট্টার দামও তারা যেন একসাথে হাতে হাতে পান।
ভুট্টার গুরুত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: মাহফুজুল হক বলেন, স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনকারী ফসল ভুট্টা। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশফিড হিসেবেও এর চাহিদা প্রচুর। দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। আর উৎপাদন হচ্ছে ৩৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভুট্টা; যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টাচাষের জন্য উপযোগী। বারি এরই মধ্যে প্রোটিনসমৃদ্ধ ভুট্টা উদ্ভাবন করেছে, যা মানুষ ও পশু উভয়ের জন্য খুবই উপকারী। ভুট্টাদানা থেকে স্টার্চ, চিনি, সিরাপ, তেল এবং কাণ্ড, পাতা ও ডাঁটা থেকে কাগজ, কার্ড বা হার্ডবোর্ড, প্লাস্টিক পাইপসহ বহুবিধ শিল্পজাত দ্রব্য তৈরি করা যায়। এ ছাড়া দেশের মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত চাল ও গমের ওপর চাপ কমাতেও সরকার অধিক হারে ভুট্টা চাষের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের চাষি এবং কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, চাষে খরচ কম হওয়ায় দেশে ভুট্টা উৎপাদন বেড়েছে। গমকে টপকে বর্তমানে দেশজ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভুট্টা আবার বছরজুড়ে চাষযোগ্য হওয়ায় ভুট্টা কৃষকের কাছে এখন জনপ্রিয়। ভুট্টা চাষের জমিও বাড়ছে। গমের সাথে মিশিয়ে ময়দা, সুজিসহ প্রায় ৫০ ধরনের খাবার হয় ভুট্টা দিয়ে। মাছ ও মুরগির খামারে ভুট্টার চাহিদা ব্যাপক। তাই ভুট্টা চাষ করে ভাগ্যবদলের চেষ্টায় আছেন বহু কৃষক। চলতি বছর দেশে ভুট্টা হয়েছে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। কয়েক বছরের মধ্যে এটি ৫০ লাখ টন ছাড়াবে।
ভুট্টা উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কৃষকরা। ভুট্টা লালমনিরহাটের ব্র্যান্ডিং ফসল। এ ছাড়াও গত বছর ধান থেকে লাভ করতে না পেরে এ বছর কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতী, সানিয়াজান, সাঁকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহিনীসহ ছোট-বড় ১৩ নদীর জেলা লালমনিরহাট। বর্ষা মৌসুমে এ নদীগুলোর পাড়জুড়ে মাঝি-মাল্লাদের আওয়াজ আর মাছ ধরার দৃশ্য দেখা গেলেও- এখন চিত্র ভিন্ন। তিস্তা-ধরলার বুকজুড়ে এখন দিগন্তজোড়া অর্ধশতাধিক বালুচর, আর চরজুড়ে বিস্তৃত ফসলের মাঠ।
এ বছর লালমনিরহাটের ১৩টি নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে প্রায় ৬৩টি চর। এর ফলে বহু মাঝি-জেলে বেকার হয়ে পড়লেও, লাভবান হয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। জেগে ওঠা চরে তারা চাষ করেছেন আলু, ভুট্টা, মরিচ, মসুরডাল, তামাক, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজসহ নানা জাতের অর্থকরী ফসল। বিশেষ করে, ভুট্টা চাষে বিদায়ী বছর (২০১৮-১৯) বাম্পার ফলন পেয়েছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা।
লালমনিরহাট পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক ইমরান হোসেন প্রধান জানান, লালমনিরহাটে প্রায় ৭২ হাজার একর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের (২০১৭-১৮) তুলনায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর বেশি। তা ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নিবিড় তদারকির কারণে ভুট্টার ফলনও বেড়েছে। এবার ভুট্টার ফলন হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) তুলনায় ৩১ হাজার টন বেশি। এবার একরপ্রতি ফলনের হার ছিল সাড়ে তিন হাজার কেজি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সমীর চন্দ্র ঘোষ জানান, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৬৩টি চর জেগেছে। চর এলাকায় জমি আছে ১৮ হাজার ৮৭ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদি জমি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর। এখানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরে শুধু ভুট্টার চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে ভুট্টা, মরিচ, আলু, সরিষা, মিষ্টিকুমড়া ও তামাকের।
তবে উৎপাদন বাড়লেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে এখনো শঙ্কিত কৃষকরা। রতনাই নদীর ওপর জেগে ওঠা প্রায় এক একর চরের ওপর ভুট্টার চাষ করেছেন কৃষক রহমতউল্লাহ। তিনি বলেন, পাইকারি বিক্রেতারা ভুট্টার কেজি বিক্রি করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। অথচ আমরা সেই ভুট্টা আট-দশ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারি না। এখন তো ফলন ভালো হলেও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় লাভ পাই না। তামাকের মতো ভুট্টা বেপারিরাও এক সাথে ফসল কিনে নিলে আর এক সাথে টাকা হাতে এলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে প্রতি বছরই যেভাবে ভুট্টার ফলন বাড়ছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে হয়তো ভুট্টা আমদানি করতে হবে না। তবে, এ সাফল্যের প্রকৃত ভাগীদার কৃষকরা যাতে লাভবান হন এবং ভুট্টা চাষে অনুপ্রাণিত হনÑ সেদিকটাও দেখা দরকার। তাই ভুট্টার নানামুখী ব্যবহার বৃদ্ধি, বাজারে সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করাসহÑ এ এলাকায় ভুট্টাজাত পণ্য তৈরির কারখানা গড়ে তোলার দাবি কৃষকদের। তারা বলেন, কৃষকদেরকে তামাকের বিকল্প লাভজনক ফসল দেখাতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলো শুরু থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত তদারকি করে এবং একসাথে নগদমূল্যে ফসল কিনে নেয়। অন্য ফসলেও এমন তদারকি করলে এবং বিক্রয়ের নিশ্চয়তা দিলে কৃষকরা অন্য ফসল চাষেও উদ্বুদ্ধ হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না সালমান-শাকিবের পর এবার জয়কে টার্গেট!

সকল