২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চালের দাম বাড়ছেই স্বস্তি নেই পেঁয়াজেও

-

ধানের বাড়তি দামের অজুহাতে মিলমালিকরা চালের দাম বাড়িয়েই চলেছেন। এ সুযোগে বিক্রেতারা বাড়াচ্ছেন কয়েকগুণ। ফলস্বরূপ রাজধানী ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে লাগামছাড়া বাড়ছে বাঙালি জীবনের অপরিহার্য এ খাবারের দাম। গত দুই দিনে কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে মোটা চালের দাম। আর সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা। দাম বাড়ছে আটা, ময়দা, তেল, ডাল, চিনি প্রভৃতিরও। এ ছাড়া ভরা মওসুমেও স্বস্তি ফেরেনি পেঁয়াজের বাজারে। প্রতি কেজি কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এরই মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বোমা ফাটানো বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তার দাবি, মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে সরু চালের (মিনিকেটসহ) দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। সংস্থাটির মতে, এক মাস আগে সরু চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যদিও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের তথ্য একটু ভিন্ন। তাদের মতে, ঢাকায় এক মাসে সরু চলের দাম বেড়েছে কেজিতে সাত থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে ছয় টাকা। পাইকারিতে মোটা চালের দাম এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিদরে।
দালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটে চালের দাম বেশি, তাই বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য দিকে মিলমালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। ধানের দাম বাড়ায় চালের দামও বেড়েছে। যদিও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ধানের দাম কিছুটা বেশি হলেও মিলমালিকদের যুক্তি সঠিক নয়। কারণ তারা এরই মধ্যে ধানের বিশাল মজুদ গড়ে রেখেছেন। আগের কম দামে কেনা ও এখন কেনা ধানের দামের সমন্বয় করতে তাদের সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করে চাল বিক্রেতারা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিত্যপণ্যের বাজারে অদ্ভুত এক পরিস্থিতি চলছে। ধান-চালের বাজারও তার ব্যতিক্রম নয়। দামের ওঠা-নামায় কোনো বিধি কাজ করে না। এক দিকে কৃষক ধানের যৌক্তিক মূল্য পায় না, অন্য দিকে মিলমালিকরা চালের দাম বাড়ান। কৃষক ও ভোক্তার অনুকূলে কোনো ব্যবস্থা কার্যকর নেই। বাজারের এই নৈরাজ্য সুশাসনের, জনস্বার্থ রক্ষার লক্ষণ নয়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজারে সরকারের নজর রাখা উচিত।
চালের পাশাপাশি আটা, তেল, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। টিসিবির হিসাবেই মাসের ব্যবধানে আটার দাম কেজিতে ১৩ শতাংশ বেড়ে ২৬ থেকে ৪৫ টাকায় উঠেছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। পাম অয়েলের দাম ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। মসুর ডালের দাম সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা।
এ দিকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম এখনো ভোগাচ্ছে দেশবাসীকে। রাজধানীর বাজারগুলোতে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না দেশী নতুন পেঁয়াজের কেজি। আমদানি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, বছরের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম ৩১১ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২১১ শতাংশ বেড়েছে। রসুনের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে আমদানি করা রসুন কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা এবং দেশী রসুন ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক মাস ধরেই রসুনের এমন চড়া দাম। শুকনো মরিচের দাম মাসের ব্যবধানে ১৪ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে সাড়ে ৪২ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। জিরার দাম বছরের ব্যবধানে ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। দারুচিনির দাম ৩৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। আর এলাচের দাম বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে ৫ হাজার টাকা কেজি হয়েছে।
এ দিকে ভুক্তভোগীদের তুষের আগুনে ঘি ঢেলে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত চমকপ্রদ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেছেন, পেঁয়াজ বেশি খেলে হঠাৎ মনে হবে দাম অনেক বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা যায় পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী অথবা অমুক জিনিসের দামে আগুন। কিন্তু আমাদের মোট ভোগের ক্ষেত্রে এসব জিনিসের অংশ এত কম যে আমরা তার (মূল্য বৃদ্ধি) প্রভাব বুঝি না। কিন্তু সরকারের সমালোচনা অথবা নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশের কারণে আমরা এই স্টোরি বলতেই থাকি। একাধিকবার বলে, একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করে, একাধিকবার মধ্যরাতের টক শোতে আলোচনা করে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যারা এসব খবর পড়েন বা দেখেন, তাদের একটা ধারণা জন্মে যায় এমন একটা অঘটন বোধ হয় ঘটছে। তার দাবি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অন্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি হলে ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে তার প্রভাব সমন্বয় করা যায়। ড. মসিউর বলেন, পেঁয়াজ সেইরকম কোনো জিনিস নয় যে, সকালে ৪টি খেতেই হবে। দাম বেশি হলে আমি ৪টির জায়গায় ৩টি খেতে পারি, আমি ২টি খেতে পারি। এভাবে ভোগের পরিমাণ সমন্বয় করা যায়। তিনি বলেন, বাজারকে যদি আমরা স্বাধীনতা দেই, তাহলে তো বাজারকে হুকুম করতে পারব না যে পেঁয়াজের দাম এই হবে, পেঁয়াজের উৎপাদন ওই হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না

সকল