২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হৃৎপিণ্ড থেমে যাওয়ার ছয় ঘণ্টা পর বেঁচে উঠলেন যে নারী

-

ছয় ঘণ্টা ধরে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ ছিল এমন এক মহিলাকে আবার বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। ডাক্তাররা এটাকে খুবই বিরল এবং বিস্ময়কর ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। অড্রে স্কুম্যান নামের এই মহিলা থাকেন স্পেনের বার্সেলোনায়। তিনি স্পেনের পাইরেনিস পার্বত্য এলাকায় তার স্বামীর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেখানে তারা তুষার ঝড়ের কবলে পড়েন।
অড্রে স্কুম্যান এরপর মারাত্মক হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হন। তার হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। তার হৃদযন্ত্র একদম বন্ধ হয়ে যায়। কোনো হৃদস্পন্দনই পাওয়া যাচ্ছিল না তখন।
অড্রে স্কুম্যানের স্বামী রোহানের ধারণা ছিল তার স্ত্রী মারা গেছেন। ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য যখন তারা অপেক্ষা করছেন, তখন তিনি স্ত্রীর পালস পাচ্ছিলেন না। তার স্ত্রী শ্বাস নিচ্ছেন বলেও মনে হচ্ছিল না। হৃদস্পন্দন বন্ধ ছিল। দুই ঘণ্টা পর যখন উদ্ধারকর্মীরা এসে পৌঁছালেন, মিসেস স্কুম্যানের শরীরের তাপমাত্রা নেমে গেছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উদ্ধারকর্মীরা তাকে বার্সেলোনার এক হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি যে বেঁচে আছেন, তার কোনো লক্ষণই পাচ্ছিলেন না তারা। হাসপাতালের ডাক্তার এডুয়ার্ড আরগুডো বলছেন, পাহাড়ের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে অড্রে স্কুম্যান অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আর সেটাই হয়তো আবার তার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।
ড. আরগুডো বলছেন, অড্রে স্কুম্যান যখন অচেতন হয়ে পড়েছিলেন তখন হাইপোথার্মিয়াই তার শরীর এবং মস্তিষ্ককে রক্ষা করেছিল। যদিও এই হাইপোথার্মিয়া তাকে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তবে যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এত দীর্ঘ সময় তার হৃদযন্ত্র বন্ধ থাকত, তাহলে কিন্তু তিনি মারা যেতেন।
অড্রে স্কুম্যানকে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা একটি বিশেষ মেশিন ব্যবহার করে তার শরীরের রক্ত বের করে এনে তাতে অক্সিজেন সঞ্চালন করেন। এরপর সেই রক্ত আবার তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার শরীরের তাপমাত্রা যখন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় তখন ডাক্তাররা একটি ‘ডিফিব্রিলেটর’ ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ড চালু করতে সক্ষম হন। তবে ততক্ষণে প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে। মিসেস স্কুম্যানকে ১২ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। তিনি এখন সুস্থ, হাইপোথার্মিয়ার কারণে তার চলাফেরায় হাতের অনুভূতিতে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
ডাক্তার আরগুডো বলেন, মিসেস স্কুম্যানের কিছু স্নায়বিক ক্ষতি হয়ে যায় কি না সেটা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে যেভাবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন, সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলে বর্ণনা করছেন তিনি। তিনি বলেন, কারো হদযন্ত্র এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়ার এরকম ঘটনা আর নেই।
মিসেস স্কুম্যান সুস্থ হয়ে ওঠার পর জানান, যে ছয় ঘণ্টা তার হৃদযন্ত্র কাজ করেনি, সে সময়ের কোনো স্মৃতি তার নেই। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যখন আমি জেগে উঠি, তখন আমি জানতাম না আগের এক বা দুই দিন ধরে কী হচ্ছিল। মিসেস স্কুম্যান এখন হাইপোথারমিয়ার ব্যাপারে পড়াশোনা করে বুঝতে পারছেন, তার বেঁচে ওঠার ঘটনাটা যেন অবিশ্বাস্য।
তিনি হাসপাতালের ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা একটা দৈব ঘটনা, তবে ডাক্তারদের কারণেই আমি বেঁচে গেছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement