২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৩১০৫ আরো ২ জনের মৃত্যু

রাজধানীর লালবাগ শহীদ নগরের ড্রেনটি ময়লা আবর্জনায় ভরে ডেঙ্গু মশার উৎপাদন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে অথচ দেখার কেউ নেউ হ নাসিম সিকদার   -

আগস্টের ১৭ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ১০৫ জন। গতকাল শনিবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৪৬০ জন। অবশ্য গত শুক্রবারের চেয়ে গতকাল শনিবার ১৫ শতাংশ কম মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭২১ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দু’দিন থেকে কমছে। তবে এটা এমন হতে পারে যে, ছুটির দিন এবং ঈদের অব্যবহিত পর হওয়ায় রোগী কম এসেছে। পূর্বে ছুটির দিনে রোগী ভর্তি কিছুটা কম হয়েছে এমন ঘটনা রয়েছে। গতকালের আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৫১ হাজার ৪৭৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যা সরকারিভাবে ৪০ জনের কথা বলা হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্ভাব্য ৭০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৪০ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩২ জন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। গতকাল শনিবার ঢামেক হাসপাতালে কিশোরগঞ্জের এক গৃহবধূ এবং ফরিদপুরে মেডিক্যাল কলেজে মাগুরার এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২১ জন। এটা শুক্রবারের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। রাজধানী ছাড়া সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৮৩৯ জন। এ সংখ্যা গত শুক্রবারের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ৮৫৬ জন। রাজধানীর ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৪৩ জন। অন্যান্য বিভাগে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৮১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু প্রতিরোধে গতকাল শনিবার জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আরো চারটি সংস্থার সমন্বয়ে ই-ক্যাবের সহায়তায় ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামের একটি বিশেষায়িত মোবাইল অ্যাপ প্রকাশ করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ সারা দেশের যে কোনো স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এই অ্যাপ মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং করতে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে আগত বিশেষজ্ঞ ডা: তৌফিকুল ইসলাম এবং দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদ প্রমুখ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৮৭ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১০, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৩, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬, পুলিশ হাসপাতালে ২০, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬৪, কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩২, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৮ জন, বিজিবি হাসপাতালে একজন। ঢাকার বাইরের ঢাকা বিভাগে ২১৯, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭০, খুলনা বিভাগে ১০৯, রাজশাহী বিভাগে ১০৫, রংপুর বিভাগে ৪৯, বরিশাল বিভাগে ১৩৮, সিলেট বিভাগে ১৩ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ১১ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিনে সারা দেশে আক্রান্তের হার ছিল ২৩৩৫, ২০৯৭, ১২০১, ১৮৮২, ১৯৩৩, ১৭২১ ও ১৪৬০ জন।
মারা গেছেন কিশোরগঞ্জের ৬ জন
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে মিঠামইন উপজেলার এক গৃহবধূ। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার চমকপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। গৃহবধূর স্বামী জানান, তার স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঈদের পরদিন গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সে দিনই তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে মনোয়ারা মারা যান।
এ দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের মোট ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গত ১৩ জুলাই ভোর ৪টায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাকিনা (১৮) নামে এক কওমি মাদরাসার ছাত্রী। সাকিনা জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের মোকামবাড়ি গ্রামের মো: রইসউদ্দিনের মেয়ে। পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেন, সাকিনা বাড়িতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। সে কোনো দিন ঢাকায় যায়নি। গত ২১ জুলাই সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে আল আমিন (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। আল-আমিন হোসেনপুর পৌরসভার দক্ষিণ আড়াইবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে। ঈদের আগের দিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কলেজছাত্র ফরহাদ হোসেন (২০)। ফরহাদ ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাঁক হাটির পল্লী চিকিৎসক ফেরদৌস মিয়ার ছেলে। ঈদের দিনে (১২ আগস্ট) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান সিআইডিতে কর্মরত জামাল আহমেদ। তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ মনিপুরঘাট এলাকার মো: আবদুল মান্নানের ছেলে। এর এক দিন পর ১৪ আগস্ট ভোর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান নাসরিন আক্তার (২০) নামে কটিয়াদীর এক গৃহবধূ।
ফরিদপুরে তরুণের মৃত্যু
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিবার সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুমন শেখ (২২) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সুমন মাগুরা জেলার চাঁদপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে ফরিদপুর মেডিক্যালে চারজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো। জানা যায়, সুমন মাগুরা থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১২ আগস্ট ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকে তার অবস্থা অপরিবর্তিত ছিল। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরো ৭৩জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৯৬জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৩০জনকে। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৬জন। গত ২০ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১১০০জন। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমান বুলু জানান, এখন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৩১জন। হাসপাতালের কোথাও কোনো বেড খালি নেই।
সাতক্ষীরায় আক্রান্ত আরো ২১
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও কমছে না রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত দুই দিনে আরো ২১জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬৮জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৭ জন। গত ২২ জুলাই থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত জেলায় মোট ২০৭ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৪৯জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৪জন। অন্যত্র রেফার করা হয়েছে ১৪জনকে। সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহিন জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন অনেকেই। যারা ভর্তি আছেন তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।
গাইবান্ধায় রোগী ১০৯জন
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, শনিবার নতুন করে গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে আরো ১২ রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০৯জন। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নতুন ১২ জনসহ সব ডেঙ্গু রোগীই সম্প্রতি ঢাকা থেকে ঘুরে এসেছেন এবং সেখান থেকেই এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। এ দিকে ডেঙ্গু আতঙ্কে সামান্য জ্বর ও টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন বেহাল অবস্থা।
সারিয়াকান্দিতে তিনজন ভর্তি
বগুড়া অফিস জানায়, সারিয়াকান্দি হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারিয়াকান্দি হাসপাতালে ভর্তি হন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাহমুদুর রহমান জানান, শুক্র ও শনিবার তারা ভর্তি হয়েছেন। তারা ঈদের ছুটিতে আসার আগে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement