২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুই লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন খাতে

একনেকের সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

দেশের পরিবহন খাতের উন্নয়নের জন্য এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে। ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এই এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮ শ’ কোটি টাকা অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগামী এডিপিতে মোট এক হাজার ৪৭৫টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য এডিপিতে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা এবং মেট্রোরেলের জন্য ৭ হাজার ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এডিপির বিস্তারিত তথ্য জানান। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া মাঝপথে এ অর্থবছরের বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে ধরা হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও এ সেতুতে রেলসংযোগসহ গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এছাড়া মন্ত্রণালয় হিসেবে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও এই সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নতুন এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত বিদ্যুতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসারের লক্ষ্যে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। নদীভাঙন রোধ ও নদীর ব্যবস্থাপনার জন্য পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হচ্ছে এবং মানব সম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনতে জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ : এদিকে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ নম্বরে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ৩৫৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৬টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ১টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব প্রকল্প ৮৯টি। অন্য দিকে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প ধরা হয়েছে ৩৫৫টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প ৬২টি। বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৪২টি এবং বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প আছে ১ হাজার ৪৫টি। এছাড়া বরাদ্দসহ অনুমোদিত নতুন প্রকল্প আছে ৪১টি।
এডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের নামে অহেতুক ও অতিরিক্ত জমি নেয়া যাবে না। ফসলি জমিতে হাত দেয়া যাবে না। যেসব প্রকল্প সমাপ্ত হচ্ছে না, সেগুলো কেন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। প্রয়োজনে সহায়তা দিয়ে হলেও শেষ করার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে (জুলাই-থেকে) ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ সময়ে ব্যয় হয়েছে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ, ওই সময়ে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement