০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জীবন দিয়ে ভোটের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ণাঢ্য বিজয়োৎসব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশে জনতার উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন : পিআইডি -

এবারের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও জনগণের দেয়া এই ভোটের মর্যাদা রক্ষা করব। দল-মত নির্বিশেষে দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাবো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উদযাপনে গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে আরো বলেন, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ভোটের ২০ দিনের মাথায় বিজয় উৎসব পালন করল ক্ষমতাসীন দলটি।
সারা দেশ থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও প্রতিজ্ঞা করেছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, সবাই চিকিৎসা পাবে, তরুণেরা কর্মসংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা ও লক্ষ্য।
তিনি বলেন, বিপুল বিজয়ের পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখন এই সরকার সবার জন্য কাজ করবে। সেখানে কোনো দল-মত দেখা হবে না।
তিনি বলেন, যারা ভোট দিয়েছেন বা যারা ভোট দেননি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সবার জন্য কাজ করবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। প্রত্যেকের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সকলের তরে, সকলের জন্য আমরা কাজ করব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া সব দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক ব্যাপার।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির, এ বিজয় জনগণের।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পুলিশ বিজিবি আনসারসহ সব সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানান। ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, সে ভোটের সম্মান যাতে থাকে অবশ্যই আমরা মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাব। এ রায় সন্ত্রাসের, জঙ্গিবাদের, মাদকের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা, তাদের এটা মনে রাখতে হবে। দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরো কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে- সেটাই আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
প্রশাসনের পর দলের নেতাকর্মীদেরও দুর্নীতিবিরোধী বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার জন্য রায় দিয়েছে। তরুণদের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সেই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এ জন্য দেশের সব মানুষের সহযোগিতা চাই। ছাত্র-শিক্ষকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজ পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যেমন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। সে জন্য যা যা করা দরকার করব। প্রতিটি গ্রাম ও শহরের সব নাগরিক সুবিধা পাবে। তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করব। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বাংলাদেশ এগুলো উদযাপন করবে বলে ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সেটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে যেমন দুর্নীতি দূর করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সাথে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ করতে হবে যেখানে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এর আগে বেলা ৩টার দিকে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা। উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় ‘বিজয় মঞ্চ’। তার পেছনের ব্যানার সাজানো হয় দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে। বৈঠাসহ ছোট বড় ৪০টিরও বেশি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয় সমাবেশ মাঠ।
মঞ্চে শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও ডা: দীপু মনি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের বেশির ভাগ সদস্য।
মহাসমাবেশের কারণে বেলা ১১টা থেকে শাহবাগের রূপসী বাংলা সিগন্যাল, কাঁটাবন মার্কেট মোড়, নীলক্ষেত মোড়, চানখাঁরপুল, জিপিও ও মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলমের পাশাপাশি কণ্ঠ মেলান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মমতাজও। এ ছাড়াও গান গেয়ে শোনান ফকির আলমগীর, জানে আলম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমা। ব্যান্ড দল জলের গানও তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসে এই উৎসবে।
আওয়ামী লীগের টানা হ্যাটট্রিক বিজয়ে ‘বিজয় সমাবেশ’ কে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছিল ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। যুবলীগের দক্ষিণের নেতাকর্মীরা সমাবেশে নৌকার ঢেউ তুলে ব্যাপক শোডাউন করে। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা, সবুজ গেঞ্জি, ক্যাপ ও লাল ফিতা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে সমাবেশে।
‘বাংলার বাতিঘর আপনাকে অভিবাদন’- শিরোনামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানায় আওয়ামী লীগ। বিজয় মহাসমাবেশে শেখ হাসিনার উদ্দেশে অভিনন্দন বার্তা পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানসহ আরো অনেকে।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। শুরুতেই পবিত্র কুরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। বেলা আড়াইটায় বিজয় সমাবেশ শুরু হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে খুশি রাখাই এ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি : মির্জা ফখরুল ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ফিলিস্তিনপন্থী পোস্টে ‘লাইক’ দেয়ায় চাকরিচ্যুত ভারতীয় শিক্ষিকা গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবর : ৪৯ লাশ উদ্ধার র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হৃদয়-তাসকিন-মাহেদির ঠাকুরগাঁওয়ে জাল ভোট দেয়ার সময় যুবক আটক রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মানবিক আবেদন কুবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তদন্ত কমিটি গঠন ডলারের দাম একদিনেই কেন ৭ টাকা বাড়ানো হলো? হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের ১৫তম ব্যাচের নতুন কমিটি বন্দরে ২ পোলিং এজেন্ট আটক, যুবকের কারাদণ্ড

সকল