০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ

দূষণে বাংলাদেশে বছরে মৃত্যু হয় ৮০ হাজার লোকের

অর্থনৈতিক ক্ষতি ৫৪,৫০০ কোটি টাকা
-

পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশে এক বছরে মারা গেছে ৮০ হাজার মানুষ। শুধু তা-ই নয়, পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (এক মার্কিন ডলার ৮৪ টাকা হিসেবে)। দূষণের এ ক্ষতি ২০১৫ সালের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
গতকাল বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার একটি দেশ বাংলাদেশ। এই উপলক্ষে স্থানীয় এক হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও বক্তব্য রাখেন।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ বিসুখে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ৭ থেকে ৮ প্রবৃদ্ধির একটি উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠতে হলে বাংলাদেশকে এখনই বিশেষ করে শহর এলাকায় দূষণ রোধ করতে ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এ দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু, সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, ভারতে ২৬ দশমিক ৫, পাকিস্তানে ২২ দশমিক ২, আফগানিস্তানে ২০ দশমিক ৬ ও শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ৭।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার বলেছেন, নগরাঞ্চলে দূষণ ও পরিবেশের অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এর ফলে দেশটির ভালো প্রবৃদ্ধিও এখন হুমকির মুখে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক জলাভূমি দখল, ক্ষতিকর বর্জ্য ঠিকমতো না ফেলা প্রভৃতিকে দায়ী করেছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছেন নারী, শিশু ও দরিদ্ররা।
বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেখা গেছে, যে গার্মেন্ট খাত থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সেই খাত থেকেই প্রতি বছর ২৮ লাখ টনেরও বেশি বর্জ্য তৈরি হয়। বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশসহ স্নায়ুজনিত ক্ষতি হতে পারে। গবেষণাটি বলছে, এর ফলে নারীর গর্ভপাত এবং মৃত শিশুর জন্মদানের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে। বলা হচ্ছে, বৃহত্তর ঢাকার যেসব এলাকা ভারী ধাতবের কারণে দূষিত সেখানে সাধারণত দরিদ্ররাই বসবাস করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে যত জলাভূমি ছিল গত ৪০ বছরে তার ৭৫ শতাংশ হারিয়ে গেছে। এসব জলাভূমি ভরাট করে সেখানে বাড়িঘর তোলায় শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জলাভূমি দখল ও বিপজ্জনক বর্জ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলাসহ দূষণ ও পরিবেশগত অবনতি নারী, শিশু ও দরিদ্রদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও সরাসরি ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহত্তর ঢাকায়, ভারী ধাতব দূষিত স্থানগুলোর অধিকাংশই দরিদ্র এলাকাগুলোতে অবস্থিত।
প্রতিবেদনে তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে : পরিবেশগত অবনতির মূল্য, পরিচ্ছন্নতা ও টেকসই শহর এবং পরিচ্ছন্ন শিল্প প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।
এ ছাড়াও দেশে সবুজ অর্থায়ন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসার, বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতকরণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন বড় ও ছোট উভয় ধরনের নগরের ওপর প্রভাব রাখছে। উদাহরণস্বরূপ, বিগত ৪০ বছরে ঢাকা প্রায় ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। জলাভূমি ভরাট ও বালু ভরাট করে বিভিন্ন এলাকার বহুতলা বাড়ি বানানোয় নগরের বিভিন্ন অংশ বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছোট নগরগুলো পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছোট শহরগুলোও পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। এরকম একটি শহর পাবনা। বিশ্বব্যাংক বলছে, ১৯৯০ সালের পর পাবনা শহর তার অর্ধেক জলাভূমি হারিয়ে ফেলেছে এবং এ শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইছামতী নদী এখন মৃতপ্রায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘বিগত এক দশকে বাংলাদেশ তার নীতি ও আইনগত কাঠামোর উন্নতি করেছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমরা ইটের ভাটা ও অন্যান্য দূষণকারী শিল্পগুলোতে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি চালু করেছি এবং প্রধান নগরগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement