২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ব্যালট বাক্স আগেই ভরা’ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়

- ছবি : সংগৃহীত

গত ৩০ ডিসেম্বর যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে ভোট চুরির অনেক অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলেছিল, নির্বাচনে কোনো দুর্নীতি হয়নি। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নূরুল হুদা ইভিএমে ভোট হলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সুযোগ থাকবে না বলে যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই ওই নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ করছিল বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো। সে সময় নির্বাচন কমিশন থেকে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে এখনো বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি।

সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা নির্বাচনের কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। রোববার থেকে সে নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি র একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নূরুল হুদা বলেছেন, ‘অনিয়ম এগুলো একটা একটা অনুপ্রবেশ করে আর একে প্রতিহত করতে আরেকটা পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা চিন্তা করেছি যে ওগুলোর দরকার নেই আমরা ইভিএম শুরু করবো। তাহলে আর রাতে বাক্স ভর্তির সুযোগ থাকবে না।’

যদিও দু'মাস আগে সংসদ নির্বাচনের পর ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, বিএনপির নানা অভিযোগের প্রসঙ্গেই সমাধান হিসেবে নির্বাচনে ইভিএমের যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে সিইসি ওই বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।

‘পরাজিতরা যেসব দাবি করে যে ব্যালট ছিনতাই, ব্যালট চুরি কিংবা বাক্স ভরা। এসব অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় হচ্ছে ইভিএম। উনি সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন। তার বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের কথা বার্তায় সতর্ক থাকা উচিত।’

তবে চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগে বাক্স ভরা ব্যালট দেখেছিলেন বিবিসি সংবাদদাতাও। আবার আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি নির্বাচনে পর ৫০টি আসনের ওপর তাদের করা গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছিলো এর মধ্যে ৪৭টিতেই কোনো না কোনো অনিয়ম হয়েছে এবং ৩৩টি আসনের এক বা একাধিক কেন্দ্রে আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা হয়েছে। চট্টগ্রামের কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ তাৎক্ষনিক স্থগিত হলেও অন্য আর কোনো অভিযোগ আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশনও।

তাই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা করেছেন বিএনপি ও গণফোরামের অন্তত ৭০ জন প্রার্থী।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেই দাবি করেছিলো।

এখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা মনে করছেন এখন সিইসির কথাতেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ প্রমাণ হয়ে গেছে।

‘তার বক্তব্য প্রমাণ করেছে যে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতি হয়েছে। সেটা রোধ করার জন্যই তিনি ইভিএমের কথা বলেছেন। তার বক্তব্য থেকে সব সত্য উদঘাটিত হয়েছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলছেন, গত নির্বাচনের কোনো অভিযোগ নিয়েই তদন্ত হয়নি এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো আস্থা নির্বাচন কমিশন তৈরি করতে পারেনি। আর সে কারণেই নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে সিইসির বক্তব্য অর্থহীন বলেই মনে করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, সিইসি নির্বাচনের নানা সমস্যার দিকে আলোকপাত করে আইন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। তার বক্তব্যের একটি অংশকেই প্রচার করা হচ্ছে।

যদিও উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আরেকজন নির্বাচন কমিশনারও সম্প্রতি ঢাকার বাইরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা কিংবা ভোটের দিন বা ভোট গণনার সময় কোনো অনিয়ম তারা সহ্য করবেন না।

রোববার থেকে শুরু হয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সারা দেশে চার ধাপে এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাল প্রথম ধাপে ৭৮টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement