২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, প্রক্টরসহ আহত ১০

জাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ - সংগৃহীত

বসন্তবরণের প্রথম দিনে জাবি ক্যাম্পাসে যখন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও তরুন-তরুনীরা উৎসবে মাতোয়ারা তখনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে জাবি প্রক্টর ফিরোজ উল হাসানসহ ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।

বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা। ফলে দর্শনার্থীসহ ক্যাম্পাসের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ৬ রাউন্ড গুলি বিনিময়, উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা দেশীয় ও বিদেশী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।

জানা যায়, ক্যাম্পাস রাজনীতিতে আধিপত্য ও প্রভাব টিকিয়ে রাখাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেলের অনুসারী ও শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের মধ্যে কয়েকমাস যাবৎ বিরোধ চলছে। আগেও তাদের মধ্যে চড়থাপ্পর ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

এরই সূত্র ধরে বুধবার রাজিব আহমেদ রাসেল তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসলে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের নেতাকর্মীরা রাসেলকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লাঞ্ছিত করেন। ঘটনাটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাজিবের অনুসারীরা ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আসে।

একপর্যায়ে রাজিবের অনুসারীরা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে আবাসিক হলগুলো থেকে বের হয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের আবাসিক হল শহীদ সালাম বরকত হলে হামলা চালায়। ফলে দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ সালাম বরকত হল, মওলানা ভাসানী হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও আল বেরুনী হলের নেতাকর্মীরা অংশ নেয় বলে জানা যায়।

এই সময় ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। বর্তমান সম্পাদকের অনুসারীদের দিক থেকে দুই রাউন্ড ও সাবেক সম্পাদক রাজিবের অনুসারীদের দিক থেকে ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সংঘর্ষে প্রক্টর ফিরোজ উল হাসানের বুকে ইটের আঘাত লাগলে তিনি আহত হন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ কর্মী সাজ্জাত, বাহার, মোস্তফা, উৎস ও রনি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে ক্যাম্পাসে তিন প্লাটুন পুলিশ (শতাধিক) পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এই বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘চঞ্চলের নেতৃত্বে আমার উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। এই সময় আমাকে ও আমার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে তারা।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন,‘রাজিব ভাইয়ের সাথে আমার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেখা হয়। আমি দেখে ওনাকে বলি- আপনি আসলে ক্যাম্পাসে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়, তাই আপনি চলে যান। এই কথা বলার পর ওনি আমার উপর হামলা করতে ওনার অনুসারীদেরকে ডেকে আনেন। এমন পরিস্থিতিতে আমি ওইখান থেকে চলে আসি। পরবর্তীতে তার অনুসারীরা আমার হলে এসে হামলা চালায়। পরে হলের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে প্রতিরোধ করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তাতে যেকোনো মূহুর্তে আবার সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। তাই আমরা পুলিশ মোতায়ন করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজ যে পরিমাণ অস্ত্র দেখা গেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রেড দেয়া এখন সময়ের দাবি।’

প্রসঙ্গত, বর্তমান সম্পাদক চঞ্চলের রাজনৈতিক গুরু রাজিব আহমেদ। কিন্তু রাজিব সাবেক নেতা হয়েও ক্যাম্পাস রাজনীতিতে খববদারি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কয়েকমাস আগ থেকে নেতা-কর্মীদের মাঝে আধিপত্য বিস্তার ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে যায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ। এর আগেও রাজিব ও চঞ্চলের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।


আরো সংবাদ



premium cement