২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবির দুই বিভা‌গের শিক্ষার্থীদের ম‌ধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ভূগো‌ল বিভাগের আহত শিক্ষার্থী নজরুল - নয়া দিগন্ত

বাইকের সাথে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভা‌গের শিক্ষার্থী‌দের ম‌ধ্যে সংঘ‌র্ষের ঘটনা ঘ‌টে‌ছে। ‌বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের আইন বিভাগ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ম‌ধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে আইন বিভাগের ৫ শিক্ষার্থী এবং ভূগোলের অন্তত ৪ শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম, উভয় বিভাগের শিক্ষক ও ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, তাঁদের বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তনিম শাওন বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

এ নিয়ে এই দুই জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আইন বিভাগের ১৫ জনের মতো শিক্ষার্থী এক হয়ে তাকে মারধর করে। তনিমের চিৎকার শুনে তাদের বিভাগের ৪ জন ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। তবে তারা আইন বিভাগের কাউকে মারধর করেননি বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগার কিছুক্ষণ পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন মুক্তিসহ বিভাগটির সাতজন শিক্ষার্থী মোকাররম ভবন এলাকায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল।

এসময় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আইন বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতরা হলেন- সরোয়ার কামাল, সাখাওয়াত হোসেন মুক্তি, শুভ আহসান, শাহনেওয়াজ সাকিব এবং মাহফুজ আলম। এদের সবাই আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ঘটনা জানতে পেরে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তিনজন সহকারী প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের পাঠিয়েছি। তারা পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমার সা‌থে উপাচার্য ও উভয় বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও সমঝোতার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরো পড়ুন :  ছাত্রলীগের সভাপতির পশ্রয়ে বেপরোয়া আমির হামজা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৩৬

এবার শীর্ষ তিন নেতার দেয়া সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেই অপরাধীদের পক্ষ নেয়ার অ‌ভি‌যোগ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরু‌দ্ধে। কেন্দ্রীয় সভাপ‌তির এরকম পক্ষপা‌তি‌ত্বের ফ‌লে দোকান কর্মচারীর মাথা ফাটিয়েও দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা।

এর আ‌গে অপরাধমূলক কর্মকা‌ণ্ডের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হামজাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করে। কিন্তু তা স‌ত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্রলী‌গের কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টি। অবশ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, তারা বহিষ্কার চান, কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আমির হামজাকে বহিষ্কারের সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়ায় কো‌নো ব্যবস্থা নেয়া যা‌চ্ছে না।


এ বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানান, আমরাতো চাই তাকে বহিষ্কার করতে। কিন্তু আপনি সভাপতির সাথে কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছি। আপনি কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বিশ্ব‌বিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ কখনোই অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়না। আমরা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের একাধিক সূ‌ত্র জানায়, অভিযুক্ত আমির হামজা কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী। ফলে শোভনের আপত্তি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশের পরও আমির হামজার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর আগে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এলাকায় সেবা ফার্মসী দোকানে হামলা চালিয়ে শুভ নামের এক কর্মচারীর মাথা ফাটিয়ে দেন আমির হামজা ও সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের স্কুল-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হাসান ঝন্টু।

গুরুতর আহত অবস্থায় শুভকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) ভর্তি করা হয়। তার মাথায় আটটি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তারা গিয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী আমির হামজার বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুলহক নুরকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে গিয়েছিলেন তিনি।

রাজধানীর বাটা সিগন্যালের সামনে কোটা আন্দোলনের তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সাত কলেজের অধিভূক্তি বাতিল চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তবে সবগুলো অভিযোগই অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আমির হামজা।

এদিকে ঢাবি ছাত্রলীগ তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবি ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, অপরাধীদের ছাত্রলীগে স্থান না দিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সুপারিশ করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি এই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। তাদেরকে যত দ্রুতই বহিষ্কার করা হবে, ততই ভাল। এদিকে এর আগেও অপরাধীকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা দেখা গেছে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের কার্যক্রমে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত সাবেক ও বর্তমান দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করেন নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই অপরাধীদের একজনকে সফরসঙ্গী করেছিলেন তিনি। অপর একজন মদের বারে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কৃত হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।


আরো সংবাদ



premium cement