২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

'আমরা আর ক‌ত মার খাব, সময় এসেছে মার দেয়ার'

'আমরা আর ক‌ত মার খাব, সময় এসেছে মার দেয়ার' - ছবি : সংগৃহীত

রোববার শহীদ মিনারে শিক্ষক-‌শিক্ষার্থী‌দের শা‌ন্তিপূর্ণ কর্মসূচী‌তে ছাত্রলীগের হামলা, শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সম্প্রতি অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি‌সি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যে আয়োজিত মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দা‌বি জানান। মানবন্ধন থে‌কে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ভি‌সির কাছে ছাত্রলীগের 'অনলাইন ও অফলাইন হামলার' ব্যাপারে স্মারকলিপি দেবেন বলেও জানান। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের শতা‌ধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

মানববন্ধন থে‌কে ইতি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আসলে কত দিন মার খাব? আমরা সংখ্যায় কমে হলেও আমদের সময় এখন মার দেবার। এর মাধ্যমে ভিসি প্রক্টরকে এটাই বোঝাব, হয় ছত্রলীগকে কন্ট্রোল করেন, নইলে নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

মানবন্ধন সঞ্চালক হি‌সে‌বে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেঘ মল্লার বলেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একদল বহিরাগত এসে আমাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে, শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে । প্রশাসন বলছে উল্টো শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। অন্য দি‌কে, অনলাইনে ৫৭ ধারা দিয়ে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, কিন্তু ছাত্রলীগ প্রকাশ্য সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। এই দেশে সমালোচনা করা অপরাধ কিন্তু প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেয়া অপরাধ না। এই ঘৃণ্য নীতি কত দিন থাকবে? ‌

তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, অর্থনীতি বিভাগের ভুক্ত‌ভোগী ছাত্রী প্রক্টরকে ফোন দিলে তিনি উল্টা জিজ্ঞেস করেন তুমি রাতের বেলা বাইরে কী করেছিলে?একজন প্রক্টর যখন সন্ধ্যাকে রাত বানিয়ে দেন তখন আমরা ভীত বোধ করি, ঘৃণা করি। আমরা প্রক্টরের এই ধরনের কথার নিন্দা জানাই এবং তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাই।

বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসেন বলেন, বারবার একই দাবিতে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে, আমরা বারবার দাঁড়াচ্ছি, বারবার আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। এর আগে আমরা প্রক্টরকে প্রশ্ন করেছিলাম, একই ঘটনা যদি আবার ঘটে আপনি পদত্যাগ করবেন তো? আর কতবার ব্যর্থ হলে তিনি নিজেকে ব্যর্থ মনে করবেন। যারা হামলা করছে তারা বাইক নিয়ে মহড়া দিচ্ছে, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা দেখতে পারছি, কিন্তু ব্যর্থ প্রশাসন দেখতে পারছে না। তি‌নি আ‌রো ব‌লেন, এই সন্ত্রাসীরা কি প্রক্টরিয়াল টিমের দায়িত্ব নিয়েছে? যদি নিয়ে থাকে তাহলে ওই সন্ত্রাসীদের প্রক্টরের দায়িত্ব দিন এবং আপনি ওই সংগঠনে যোগ দিন। এই ভিসি এবং প্রক্টরের যদি কোন লজ্জা থাকে তাহলে তারা পদত্যাগ করুক।

এ সময় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে দেয়া বক্ত‌ব্যে বলেন, নায্য বিষয়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানে আবার হামলা হচ্ছে। আমি তার নিন্দা জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেটাকে স্বায়ত্বশাসিত মনে হচ্ছে না। আমি চাই, এই আন্দোলনে যারা নির্যাতিত হয়েছে, নিপীড়িত হয়েছে প্রশাসন তাদের দিকে দৃষ্টি দিক, পাশে দাঁড়াক।

মানববন্ধনের প‌রে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে গিয়ে দিনের কর্মসূচী শেষ করেন।

মিছিলে 'আমার শিক্ষক লাঞ্ছিত কেনো, প্রশাসন জবাব চাই', 'আমার বোন আহত কেনো প্রশাসন জবাব চাই', 'ক্যাম্পাসে হামলা কেনো প্রশাসন জবাব চাই', 'ব্যর্থ ভিসিকে, পদত্যাগ করতে হবে', 'শিক্ষা সন্ত্রাস, একসাথে চলে না' ইত্যা‌দি স্লোগান দেন তারা।

এদিকে, মানববন্ধন শুরুর ঠিক আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত ১৫ টি মোটরসাইকেলে হর্ণ বাজাতে বাজাতে রাজু ভাষ্কর্য দু'বার প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা মধুর ক্যান্টিনের দিকে চলে যান। এর আগেও বি‌ভিন্ন সময় শিক্ষক‌মিক্ষার্থী‌দের কর্মসূচিতে তা‌দের এমন বাইক মহড়া দেখা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement