০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


  পেঁয়াজের দাম নজিরবিহীন

সঙ্কটের কারণ শনাক্ত হয়নি

-

পেঁয়াজের দামের নজিরবিহীন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনার অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকার পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকার উপরে উঠেছে। সরকারের খাতাপত্রের হিসাব বলছে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আড়তে পেঁয়াজ নেই। পাইকারি বাজারে সরবরাহ নেই। খুচরা বাজারে দাম ২২০ টাকা। অন্য দিকে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ নিয়ে এলোমেলো বক্তব্য দিচ্ছেন। কখনো তারা এমন কথাও বলছেন, যা কখনো শোভন বক্তব্য হতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে অনেককে পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না সারতে হচ্ছে।
খবর প্রকাশ হয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে বিগত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ তিন হাজার টন। সরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে এতটা গরমিল অপ্রত্যাশিত। আরো বেকায়দা অবস্থা হচ্ছে চাহিদা জোগান এবং বাস্তবে বাজারের কোনো মিল পাওয়া যায় না। দেশের পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। হিসাব অনুযায়ী সামান্য ঘাটতি রয়েছে। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে বর্তমানে দেয়া তথ্যউপাত্ত নিয়েও। সরকারের পক্ষ থেকে এমন সব কথা ও তথ্যউপাত্ত দেয়া হচ্ছে, বাজারের সাথে যার কোনো মিল নেই। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় অচিরেই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে। কিন্তু দেখা গেল দাম ঊর্ধ্বগামী ধারায় রয়ে গেল। সর্বশেষ এমন আরেকটি প্রতিশ্রুতির পর পেঁয়াজের দাম সব রেকর্ড ভেঙে ২২০ টাকায় উঠল। সরকারের কোনো প্রতিশ্রুতি মানে যেন তার উল্টো ফল দেবে। সুতরাং কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া মানে ক্রেতার জন্য ভীতি তৈরি করা।
প্রায় দুই মাস ধরে পেঁয়াজের দাম শুধুই বাড়ছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সঙ্কটের সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি সরকার। একটা ষড়যন্ত্রের গতানুগতিক গন্ধ পাওয়ার কথা সরকার বলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে জানা যাচ্ছে, কেউ বড় চালান আনতে সাহস পাচ্ছেন না। বড় চালান আমদানি করে তারা বিপদে পড়ে যেতে পারেন। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, যেকোনো সময় ভারতের পেঁয়াজে বাজার সয়লাব হয়ে যেতে পারে। তখন আমদানিকারককে বড় গচ্চা দিতে হবে। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি বোঝা যাচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের দামের স্থিতিশীলতার জন্যও একই ধরনের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য একটি সুরক্ষা থাকা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্যই ভারত থেকে আসে। তারা হঠাৎ যেমন কোনো দ্রব্যের রফতানি বন্ধ করে আবার হঠাৎ করে রফতানি করেও বাজার সয়লাব করে দেয়। এমন ভারসাম্যহীন অবস্থা থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, মিসর-তুরস্ক থেকে কিছু দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে। এর আগে সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার প্রতিশ্রুতি উল্টো ফল দিয়েছে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি কাজে পরিণত হবে। সত্যিই পেঁয়াজের বাজারে স্থিরতা আসবে। আরেকটি শিক্ষা আমাদের নেয়া দরকার; সেটি হচ্ছে, বাজারব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং। সেটি এখন যে একেবারে বিশৃঙ্খল তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকারি তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী পেঁয়াজের বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদার তুলনায় আমদানি উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে বাজার পরিস্থিতি ঠিক এর বিপরীত। এমন বেহাল দশা থেকে বের হতে হবে। কারণ এ ধরনের অবস্থা সিন্ডিকেটের জন্য সুযোগ করে দেয়। অবশ্যই সরকারকে এ দায় নিতে হবে। বর্তমান সঙ্কটের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement