০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

সরকারের দায়িত্ব সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা

-

সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশে বিস্তৃত হয়েছিল সম্প্রতি। ওই আন্দোলনের দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল সরকার। হেলমেট বাহিনীর হামলার পরও ওই সময় ছাত্ররা ফিরে গিয়েছিল। তারা মনে করেছিল, সরকার অঙ্গীকার পালন করবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ফলে সড়কে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা আগের মতোই রয়ে গেছে। কাণ্ডজ্ঞানহীন ড্রাইভিংয়ে প্রতিদিন ঝরছে প্রাণ। মঙ্গলবার ঢাকার রাস্তায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আবারো প্রাণ গেল এক শিক্ষার্থীর। তাই আবারো শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। দুই দিন আন্দোলনের পর দাবি মেনে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তরের মেয়রের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আন্দোলন ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেছে। প্রশ্ন হলো, এভাবে আর কত দিন? সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রদের বারবার আন্দোলনই বা করতে হবে কেন।
ঢাকা শহরের যাতায়াতব্যবস্থা নিয়ে সরকার বিরাট সব উদ্যোগ নিচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার সড়ক ও পরিবহন খাতে এক দশকে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এক একটি মহাপরিকল্পনা আঁটছে কর্তৃপক্ষ। এসব পরিকল্পনার লক্ষ্য ঢাকায় যাতায়াত সহজ করা। ঢাকার চার পাশে বৃত্তাকার নৌপথ নির্মাণের প্রচারণার পর নামানো হয়েছিল কয়েকটি ওয়াটার বাস। কিন্তু সে প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। এরপর শোনা গেল নির্মাণ হতে যাচ্ছে আরো বেশি ব্যয়ের বৃত্তাকার রেলপথ। এ জন্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও অর্থায়ন নিয়ে তোড়জোড়। ১০ বছর ধরে শহরের অভ্যন্তরে উড়াল সড়ক ও উড়াল সেতু নির্মাণের হিড়িক দেখা গেছে। সেগুলো নিয়ে মানুষের চরম ভোগান্তি হয়েছে। তবে যাতায়াত সে অনুযায়ী সহজ হয়নি। এখন শহরের ভেতরে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের এক মহাকাণ্ড চলছে। সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবে এগুলো মানুষের যাতায়াত সহজ করবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। এ দিকে শহরের ট্রাফিক-ব্যবস্থা আজো চলছে হাতের ইশারায়। এখনকার মূল ইস্যু হচ্ছে সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ। এ লক্ষ্যে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিও সেই কমিটিতে রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ আনছেন। কমিটি গঠনের পর এক মাসের বেশি অতিবাহিত হয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা একটি মাত্র বৈঠকে মিলিত হয়েছেন মাত্র। এরপর আর কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। মূল দাবি, মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সবার আগে প্রয়োজন যানবাহন ও সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার্থীরা যে দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে, এর যৌক্তিকতা থাকায় আন্দোলনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে অদক্ষ লাইসেন্সবিহীন চালককে ধরতে হবে। সড়কে আইন মানতে তারা বাধ্য করেছে মন্ত্রীদেরও। সে সময় ‘রাষ্ট্রের মেরামত চলছে’ শিরোনামে প্ল্যাকার্ডে দেখা গিয়েছিল। রাষ্ট্রের কোথায় অনিয়ম রয়েছে, সেটিও তারা তুলে ধরেছিল। আন্দোলনকারীরা আবার নেমেছে তাদের সেসব দাবি-প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে। সরকারের উচিত সড়ক যোগাযোগ খাতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বিভিন্ন অনিয়ম শোধরানো। বিদ্যমান আইন-কানুন শতভাগ মেনে চলার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা চাই। নিশ্চিত করতে হবে গাড়ি চালনার দায়িত্ব একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছে থাকবে। কাণ্ডজ্ঞানহীনেরা গাড়ি চালানোর ফলে রাস্তার মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে যে কেউ। আবার রাস্তায় নামছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে রাস্তায় দক্ষ, যোগ্য চালক এবং ফিটনেসযুক্ত যানবাহন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এসব বিষয় দেখা-শোনার জন্য এমন সব ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া উচিত, যারা সৎ, যোগ্য ও দায়িত্ববান।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল